ভুয়ো চিকিৎসক অভিযোগে ধৃত খুশিনাথ হালদারের শরীরে কালশিটে দাগ কেন, প্রশ্ন মেয়ের
বাবা খুশিনাথ হালদারের মৃত্যুতে তদন্তের দাবি তুললেন সরণি হালদার। ভুয়ো চিকিৎসককাণ্ডে গ্রেফতার হয়েছিলেন খুশিনাথ। সরণির দাবি, তাঁর বাবার মৃত্যুর প্রকৃত কারণ সামনে আসা উচিত।
ওয়ান ইন্ডিয়া বাংলার পক্ষ থেকে খুশিনাথ হালদারের রহস্য মৃত্যু নিয়ে কথা বলা হয়েছিল তাঁর পরিবারের সঙ্গে। আর সেই কথোপকথনে চাঞ্চল্যকর অভিযোগ আনলেন খুশিনাথ হালদারের মেয়ে সরণি হালদার। দমদম কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারে থাকা বাবা খুশিনাথ-এর মৃত্যুর খবর পাওয়ার পরই মা অর্চনা সরকারকে নিয়ে কলকাতায় চলে আসেন সরণি। শনিবার সকালে আর জি কর হাসপাতালে মৃত্যু হয় খুশিনাথের। কিন্তু, বাবার মৃত্যুর খবর শনিবার বিকেলে পান তাঁরা।
[আরও পড়ুন:ভুয়ো চিকিৎসক অভিযোগে ধৃত খুশিনাথ হালদারের রহস্য মৃত্যু, বিচারবিভাগীয় তদন্তের দাবি]
সরণি হালদারের অভিযোগ, তাঁর বাবা খুশিনাথ হালদারের পায়ে ও পিঠে কালশিটে আছে। তাঁর দাবি, তাঁর কাকা আর জি কর-এর মর্গে যখন খুশিনাথ-এর দেহ দেখতে যান তখন নাকি তিনি কালশিটেগুলো দেখতে পান। সরণির প্রশ্ন, কাকার মুখ থেকে যে ধরণের কালশিটের কথা জানতে পেরেছেন তা সাধারণত মারধরের পরই হয়ে থাকে। তাহলে কি জেলে কোনওভাবে আক্রান্ত হয়েছিলেন খুশিনাথ? না কোথাও পড়ে গিয়েছিলেন তিনি? প্রশ্ন তুলেছেন সরণি।
ভুয়ো চিকিৎসক অভিযোগে গ্রেফতার খুশিনাথ হালদারের মেয়ের আরও অভিযোগ, কোনও দিনই জেল কর্তৃপক্ষ তাঁর বাবার শরীর নিয়ে কোনও তথ্য দিত না। তাঁর বাবার এক বন্ধু মাঝেমধ্যে দমদম কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারে এসে খুশিনাথের সঙ্গে দেখা করতেন বলে জানিয়েছেন সরণি। তাঁর কাছেই জানতে পারতেন বাবার শরীরিক অবস্থার কথা। তাঁর কাছেই জেনেছিলেন, কীভাবে দিনের পর দিন রুগ্ন থেকে রুগ্নতর হয়ে যাচ্ছিলেন খুশিনাথ। এর কারণ অনুসন্ধান করতে গিয়ে সরণিরা জেনেছিলেন, খুশিনাথকে দমদম কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারের যে সেলে রাখা হয়েছিল তাতে তাঁর সঙ্গীরা ছিল দাগী সব অপরাধী। এরা সারাক্ষণই মাদক সেবন করত বলেও অভিযোগ সরণির। জেলে দেখা করতে আসা বন্ধুকে এমনটাই নাকি জানিয়েছিলেন খুশিনাথ, দাবি করেছেন ,সরণি। খুশিনাথ মাদক সেবন না করায় তাঁকে নানাভাবে নিগ্রহ করা হতেও বলেও নাকি জানতে পেরেছিলেন সরণি। একজন শিক্ষিত মানুষ যিনি প্রতারণার অভিযোগে ধৃত তাঁকে কেন দাগী অপরাধীদের সঙ্গে রাখা হচ্ছিল তাতেও প্রশ্ন তুলেছেন সরণি।
তাঁর প্রশ্ন, জেল কর্তৃপক্ষ যখন দেখতে পাচ্ছিল যে খুশিনাথ দাগী অপরাধীদের সঙ্গে থাকতে পারছেন না তাহলে তাঁকে কেন অন্য সেলে সরানো হল না। ওয়ান ইন্ডিয়া বাংলার সঙ্গে কথোপকথনে সরণি আরও জানিয়েছেন যে, জেল কর্তৃপক্ষের দাবি করেছে তাঁর বাবা খাওয়া-দাওয়া ছেড়ে দিয়েছিলেন। তাঁর পাল্টা দাবি, তাহলে জেল কর্তৃপক্ষ খুশিনাথকে খাওয়ানোর চেষ্টা করেনি কেন? কেন রুগ্ন খুশিনাথ-এর চিকিৎসা আগে থেকে করা হল না, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেনে তিনি।
সরণি জানিয়েছেন, শুক্রবার অর্থাৎ ১৩ অক্টোবর রাতে খুশিনাথ হালদারকে আর জি কর হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। অথচ, তাঁরা জানতে পারেন এর কয়েক দিন আগেই পাঁচ দিনের জন্য খুশিনাথকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছিল। আর একথা সরণিরা জানতে পেরেছিলেন দমদম কেন্দ্রীয় সংশোধনাগার থেকে আসা এক জনের ফোনে। এই ব্যক্তিও ভুয়ো চিকিৎসকের অভিযোগে দমদম কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারে বন্দি আছেন। আগে খুশিনাথ-এর সঙ্গেই একই সেলে থাকতেন তিনি। জেল কর্তৃপক্ষের ভয়ে ওই ব্যক্তি নাকি ৩০ সেকেন্ডের বেশি কথা বলতে পারেননি।
সরণি হালদারের দাবি, খুশিনাথ হালদার ভুয়ো চিকিৎসক কি না তা তো প্রমাণই হয়নি। তাহলে তাঁকে কেন দাগী অপরাধীদের সেলে পুরে দেওয়া হল? তাঁর দাবি, খুশিনাথের মৃত্যুর পিছনে যে পরিমাণ অবহেলা, গাফিলতি এবং অসত্য লুকিয়ে আছে তা জানার অধিকার তাঁদের পরিবারের রয়েছে। সুতরাং, তাঁর বাবা খুশিনাথ হালদারের মৃত্যুর জন্য তদন্তের দাবিও জানিয়েছেন সরণি।