মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের 'সুপার ক্যাবিনেট', যেভাবে বাংলা চালাচ্ছেন ৪ অবসরপ্রাপ্ত আমলা
রাজ্যে নির্বাচনের বাকি আর মাত্র কয়েক মাস। এই পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক ভাবে কিছুটা চাপেই রয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল কংগ্রেস সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই পরিস্থিতিতে রাজ্য প্রশাসন সামলাবেন নাকি রাজনৈতিক প্রতিন্বন্দ্বীদের বিরুদ্ধে ঘুঁটি সাজাবেন? ক্ষমতা ধরে রাখার লড়াইতে নিজের প্রভাব বিরাজমান রাখতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একদিকে নির্ভর করে রয়েছেন প্রশান্ত কিশোরের উপর। অন্যদিকে রাজ্য প্রশাসন চালানোর ক্ষেত্রে মমতার ভরসা একদল অবসরপ্রাপ্ত আমলা। বকলমে তাঁরাই এখন রাজ্য চালাচ্ছেন।
হোয়াইট হাউজের দৌড়ের নিয়মাবলী কী? একনজরে মার্কিন নির্বাচনের খুঁটিনাটি
শেষ কর্মদিবসে রাজীব সিনহা রসিকতা
মুখ্য সচিব হিসাবে নিজের শেষ কর্মদিবসে রাজীব সিনহা রসিকতা করে বলেছিলেন, তাঁকে কেউ চেয়ার ছাড়া করতে পারবে না। এই মন্তব্যের পরে অনেকের মধ্যে কৌতুহল তৈরি হয়। তবে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মত, খুব জেনে বুঝেই এই ইঙ্গিতবহ মন্তব্য করেছিলেন রাজীব সিনহা। মুখ্য সচিবের দায়িত্ব থেকে অবসর নেওয়ার পরই রাজ্যের শিল্পোন্নয়ন নিগমের চেয়ারম্যান হিসেবে যোগ দেন তিনি।
শিল্পোন্নয়ন নিগমের চেয়ারম্যান হিসেবে যোগ রাজীবের
পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন মুখ্য সচিব রাজীব সিনহাকে সেপ্টেম্বরের শেষ লগ্নেই ওয়োস্ট বেঙ্গল ইন্ডাস্ট্রিয়াল ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান পদে নিযুক্ত করা হয়েছিল। আর এর ফলে অবসরের পরও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারি কর্মকাণ্ডের সঙ্গে ওতপ্রত ভাবে জড়িয়ে রয়েছেন রাজীব সিনহা। এবং তিনি এক 'এলিট ক্লাব'-এও নিজের নাম লিখিয়ে ফেলেছেন। যেই ক্লাবে রয়েছেন আরও বেশ কয়েকজন অবসরপ্রাপ্ত আমলা, যাঁরা কি না রাজ্য চালানোর দায়িত্ব পালন করছেন পর্দার আড়াল থেকে।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সুপার ক্যাবিনেট
এর আগে অবসরের পর আরও তিন উচ্চপদস্থ আধিকারিককে বিভিন্ন পদে নিযুক্ত করে প্রশাসনের সঙ্গে যুক্ত করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেন্ট্রাল সেক্রেটারিয়েট সার্ভিসে থাকা গৌতম সান্যাল, এবসরপ্রাপ্ত আইপিএস সুরজিৎ কর পুরকায়স্ত এবং রিনা মিত্র। এই তালিকাতেই নয়া সংযোজন রাজীব সিনহা। এবং এই চার প্রাক্তন আমলা মিলেই তৈর করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সুপার ক্যাবিনেট।
গৌতম সান্যালের নিযোগ
এই চারজনের মধ্যে গৌতম সান্যালই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সব থেকে কাছের জন বলে মনে করা হয়। ২০১১ সালে অবসর নিলেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁকে নিজের নিজের সহায়ক হিসাবে নিযুক্ত করেছিলেন। পরে গৌতমবাবুকে মমতা মুখ্যমন্ত্রীর অফিসের প্রিন্সিপাল সেক্রেটারি পদে নিযুক্ত করেন। সেই পদেই গৌতমবাবু গত ৫ বছর ধরে বহাল রয়েছেন। সান্যালবাবু একমাত্র আমলা যিনি আইএএস না হওয়া সত্ত্বেও এই পদে বসেছেন।
প্রশাসনের সঙ্গে এখনও যুক্ত সুরজিৎ
এদিকে রাজ্য পুলিশের প্রাক্তন ডিজিপি সুরজিৎ কর পুরকায়স্তকে প্রশাসনের সঙ্গে যুক্ত রাখতে নয়া এক পদের সৃষ্টি করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বর্তমানে এই অবসরপ্রাপ্ত আইপিএস অফিসার স্টেট সিকিউর্টি অ্যাডভাইসর বা রাজ্য নিরাপত্তা উপদেষ্টা হিসাবে কাজ করে চলেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের জন্য। কেন্দ্রীয় স্তরে অজিত ডোভাল যে দায়িত্ব পালন করেন, অনেকটা সেভাবেই এই দায়িত্বে রয়েছেন প্রাক্তন এই পুলিশ আধিকারিক।
বিশেষ দায়িত্বে রিনা মিত্র
এদিকে আরও এক পুলিশ আধিকারিকের জন্যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিশেষ বন্দোবস্ত করেছেন গত বছরই। রিনা মিত্র গত বছর রাজ্য পুলিশের থেকে অবসর গ্রহণ করেন। কিন্তু এরপর তাঁকে রাজ্যের অভ্যন্তরীন নিরাপত্তার ক্ষেত্রে মুখ্য উপদেষ্টা হিসাবে নিযুক্ত করা হয়েছিল। তিনি সরাসরি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছেই জবাবদিহি করেন বর্তমানে।
পদগুলি একান্তই 'এক্সক্লুসিভ'
যদিও সূত্রের খবর, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই বিশেষ ব্যবস্থাপনায় কর্মরত আমলারা অসন্তুষ্ট। তবে তৃণমূল কংগ্রেস পরিচালিত সরকারের এক মন্ত্রী এই বিষয়ে জানান, সরকার কোনও ভুল কাজ করছে না। এই অবসরপ্রাপ্ত আমলাদের 'অভিজ্ঞতা'কে কাজে লাগাতেই এই ব্যবস্থা। এই পদগুলি একান্তই 'এক্সক্লুসিভ'। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে কোনও অভিজ্ঞ বিশেষজ্ঞ বা আমলা 'অবসর' নেন না।
সৎ আমলাদের সম্মানে আঘাত
এভাবে অবসরপ্রাপ্ত আমলাদের জন্য বিশেষ পদ তৈরি করার ক্ষেত্রে কোনও আইন নেই। তাই এই বিষয়টিকে আইন বহির্ভূত বলা যায় না। তার থেকেও বড় কথা, এই আমলাদের উপর নির্ভর করে থাকেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে এই ব্যবস্থার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের অমর্যাদা হচ্ছে বলে মত অনেকেরই। 'ঘনিষ্ঠতা'র পাওয়া সুফল আসলে অন্যান্য নিষ্ঠাবান এবং সৎ আমলাদের সম্মানে আঘাত করে।
সুপার ক্যাবিনেটের বিরোধিতা এবং চর্চা
জানা গিয়েছে সম্প্রতি রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড় এবং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর বৈঠকেও এই বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। এই ইস্যুতে প্রশ্ন তুলে জগদীপ ধনকড় বলেন, 'দায়িত্বপ্রাপ্ত ডিজিপি-র সুপার বস হিসাবে কেউ কী করে কাজ করতে পারেন? এবং এহেন ব্যবস্থার মাঝেও কী করে রাজ্যে আল কায়েদা এভাবে ডানা মেলতে পারল? সেই সময় বাংলার রাজ্যের অভ্যন্তরীন নিরাপত্তার ক্ষেত্রে মুখ্য উপদেষ্টা বা রাজ্য নিরাপত্তা উপদেষ্টা কী করছিলেন?' কৈলাশ বিজবর্গীয় সম্প্রতি এই অবসরপ্রাপ্ত আমলাদের মমতার কাঠপুতুল বলে আখ্যা দিয়েছিলেন। সরব হয়েছেন সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তীও।
{quiz_415}