মমতার বিরুদ্ধে ক্ষোভ আড়াই বছর আগে থেকে! একুশের প্রাক্কালে ইস্তফা ‘কৃতজ্ঞ’ রাজীবের
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্ত্রিসভা থেকে ইস্তফা দিয়েছেন রাজীব। তারপরই তিনি আবেগঘন বার্তা দিয়েছেন। জানিয়েছেন তাঁর ইস্তফার কারণ। আর তা বলতে গিয়েই তিনি জানালেন, আড়াই বছর আগেই তিনি মন্ত্রিত্ব ছাড়তে চেয়েছিলেন। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে জানিয়েওছিলেন সেই কথা। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীই তাঁকে নিরস্ত্র করেন। রাজীব তারপর আড়াই বছর মন্ত্রিত্ব সামলান।

টিভির পর্দায় ব্রেকিং নিউজে দেখতে হয় অপসারণের কথা
আড়াই বছর আগেই তাঁকে সেচমন্ত্রী থেকে সরানো হয়েছিল বনমন্ত্রী পদে। তখন উত্তরবঙ্গে সেচ দফতরের কাজেই ছিলেন তিনি। তারপর তৃণমূল ভবনে তিনি এসেছিলেন। সপ্তাহে দুদিন করে তাঁর সেখানে বলার কথা ছিল। তিনি যখন কর্মীদের সঙ্গে কথা বলছিলেন, তখন টিভির পর্দায় ব্রেকিং নিউজে দেখতে হয় তাঁকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে অন্য দফতরে।

সতীর্থ হিসেবে সহকর্মী হিসেবে একটু সৌজন্য চেয়েছিলেন রাজীব
এ প্রসঙ্গেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে সুর চড়ান রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি প্রকাশ্যেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়র বিরুদ্ধে অসৌজন্যতার অভিযোগ করেন। রাজীবের ক্ষোভ, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ইচ্ছা করলেই তাঁর মন্ত্রিসভা রদবদল করতে পারেন। কিন্তু তাঁর আগে সৌজন্যের খাতিরে একবার তাঁকে জানানো যেত। একজন সতীর্থ হিসেবে সহকর্মী হিসেবে সেই আশাটুকু অন্তত করতে পারি।

মুখ্যমন্ত্রীকে জানিয়েছিলাম মন্ত্রী থাকতে চাই না, শুধু কর্মী
রাজীব বলেন, সেদিনই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম আর মন্ত্রী থাকব না। পরদিন মুখ্যমন্ত্রীকে জানিয়েছিলাম মন্ত্রী থাকতে চাই না। একজন কর্মী হিসেবে শুধু কাজ করতে চাই। তারপর মুখ্যমন্ত্রী আমাকে নিরস্ত্র করেন। মুখ্যমন্ত্রী কথায় এতদিন এই দফতর চালিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু নেতানেত্রীর কথা আমাকে ব্যথিত করেছে। আমি আহত হয়েছিল। তাই ভগ্নহৃদয়ে মন্ত্রিত্ব ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম।

মনে প্রাণে আঘাত সহ্য করতে না পেরেই কঠোর সিদ্ধান্ত
রাজীব বলেন, চিরকৃতজ্ঞ থাকব দলনেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে। সারাজীবন কৃতজ্ঞ থাকব। এতদিন যে সব দফতরে ছিলাম, যাঁদের সঙ্গে কাজ করেছি, তাঁদের প্রত্যেকের কাছে শিখেছি। তাঁদের প্রতিও আমার কৃতজ্ঞতা। আমার খুব খারাপ লাগছে। কিন্তু আমাকে ছাড়তেই হয়। আমি মনে প্রাণে আঘাত নিতে পারছিলাম না। তাই সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হলাম।

মানুষের জন্য কাজই আমার ব্রত, মানুষই বিচার করবেন
আমাকে যখন যা দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল, আমি সই কাজ দায়িত্ব সহকারে পালন করেছি। বন দফতরের কর্মীদের অনুরোধ রাখতে পারিনি। আমি ক্ষমাপ্রার্থী। আমি মানুষের জন্য কাজ করতে চাই। জানি না কী প্লাটফর্ম পাবো, যে প্লাটফর্মই পাই আমি মানুষের জন্য কাজ করে যাব। মানুষ বিচার করবেন কী কাজ করেছি।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতি চিরকৃতজ্ঞ থাকবেন রাজীব
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাতে পদত্যাগ পত্র দিয়ে আসার পর পরই রাজভবনে রাজ্যপালকে পদত্যাগের চিঠি দিতে আসেন রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজভবন থেকে বেরিয়ে তিনি সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন। তাঁর রাজনীতিতে হাতেখড়ি থেকে শুরু করে মন্ত্রী হয়ে ওঠার জন্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। চিরকৃতজ্ঞ থাকবেন সারাজীবন, তাও জানিয়ে দেন রাজীব।

রাজীব হাউহাউ করে কেঁদে ফেললেন মমতার মন্ত্রিসভা ছেড়ে, দিলেন আবেগঘন বার্তা