মমতার সরকার খরচ না দিলে বন্ধ হবে ৮ রেল রুট! রেলমন্ত্রকের সিদ্ধান্তে শোরগোল
এই চিঠিতে যারপরনাই ক্ষুব্ধ রাজ্য সরকার। রেলমন্ত্রকের এই সিদ্ধান্ত জনস্বার্থ বিরোধী বলে ইতিমধ্যে প্রতিক্রিয়াও দেওয়া হয়েছে। মোদী সরকারকে এর জন্য কড়া ভাষায় চিঠিও দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে রাজ্যের তরফে।
বহুদিন ধরেই ঢাক গুঁড়-গুঁড় চলছিল। এবার চলে এল চিঠি। যার জেরে ফের অবশ্যাম্ভাবি হয়ে পড়েছে মোদী বনাম মমতা-র লড়াই। কারণ, মোদী সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন রেল মন্ত্রক লোকসানে চলা কলকাতা সংলগ্ন এবং দক্ষিণবঙ্গের ৮টি রেল-রুট-কে বন্ধ করতে উদ্যোগী হয়েছে। এই মর্মে নবান্ন-কে চিঠিও দেওয়া হয়েছে রেলমন্ত্রকের তরফে।
এই চিঠিতে যারপরনাই ক্ষুব্ধ রাজ্য সরকার। রেলমন্ত্রকের এই সিদ্ধান্ত জনস্বার্থ বিরোধী বলে ইতিমধ্যে প্রতিক্রিয়াও দেওয়া হয়েছে। মোদী সরকারকে এর জন্য কড়া ভাষায় চিঠিও দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে রাজ্যের তরফে।
জানা গিয়েছে, নবান্নে পাঠানো চিঠিতে রেলমন্ত্রক কলকাতা সংলগ্ন এবং দক্ষিণবঙ্গের আটটি রেল-রুটকে 'লস' বলে দেখিয়েছে। এই আটটি রেল রুট থেকে রেলমন্ত্রক সেভাবে কোনও আয় করছে না। অথচ দিনের পর দিন এই লোকসানের বহর বাড়ছে বলেই দাবি করেছে রেলমন্ত্রক। এই আটটি রেল রুট হল-- বালিগঞ্জ-বজবজ, বারুইপুর-নামখানা, সোনারপুর-ক্যানিং, কল্যাণী-কল্যাণী সীমান্ত, বারাসত-হাসনাবাদ, বর্ধমান-কাটোয়া, ভীমগড়-পলাশি ও শান্তিপুর-নবদ্বীপ ঘাট।
রেলমন্ত্রক তাদের পাঠানো চিঠিতে সাফ জানিয়েছে, লোকসানে চলা এই সব রেলরুটে ট্রেন চালাতে হলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারকে অর্ধেক খরচ বহন করতে হবে। না হলে এই রেলরুটগুলি বন্ধ করে দেওয়া ছাড়া কোনও উপায় থাকবে না। যদিও, রাজ্য সরকারের যুক্তি এই আটটি রেলরুটের জন্য প্রতিনিয়ত অন্তত কয়েক লক্ষ মানুষ উপকৃত হন। এঁদের দলে যেমন অফিসযাত্রীরা আছেন, তেমনি আছেন ছোট-খাটো ব্যবসার সঙ্গে জড়িত থাকা বহু মানুষ। তাই আচমকা এই রেল রুটগুলি বন্ধ করলে সাধারণ নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্তরা বিপাকে পড়বেন।
উল্লেখ্য, যে আটটি রেলরুটে কথা রেলমন্ত্রক থেকে বলা হয়েছে সেই সব রুটে ট্রেনের সংখ্যা খুবই কম। সময়ের হিসাব করলে দেখা যাবে যে মানুষটি বজবজ থেকে শিয়ালদহে আসবেন তিনি একবার ট্রেন মিস করলে ১ ঘণ্টা তাঁকে অপেক্ষা করতে হয়। কিন্তু, বজবজ থেকে কোনও ট্রেনে যদি তিনি বালিগঞ্জ চলে আসতে পারেন তাহলে সেখান থেকে সামান্য কয়েক মিনিটের ব্যবধানে শিয়ালদহ আসার একাধিক ট্রেন পাওয়া যায়। এর ফলে অন্য ট্রেনগুলিতে তুলনামূলকভাবে ভিড় কম হয়। তাই যাত্রী স্বাচ্ছন্দের কথা মাথায় রেখেই একটা সময় এই ছোট-ছোট পকেট রুটগুলি তৈরি করেছিল রেলমন্ত্রক। সুতরাং, এই ছোট রেলরুটগুলি বন্ধ করে দিলে ট্রেনের সংখ্যা যেমন কমে যাবে তেমনি একটা একটা ট্রেনের যাত্রীদের ভিড় আরও বৃদ্ধি পাবে। সেক্ষেত্রে ট্রেনে ঝুলে যেতে গিয়ে দুর্ঘটনার সংখ্যা বাড়ারও আশঙ্কা রয়েছে। সেই কারণে রেলের এমন সিদ্ধান্তে কার্যত হতবাক রাজ্য সরকার। কোনও সরকারি সংস্থা কীভাবে বেসরকারি সংস্থার মতো লাভ আর ক্ষতির হিসাবকে মাথায় রেখে জনসেবা থেকে সরে আসতে পারে তা নিয়েও অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন।
সম্প্রতি দেখা গিয়েছে, রাজ্য সরকারে বেশকিছু অলাভজনক রুটে ভর্তুকি দিয়ে বিমান পরিষেবা চালু করার কথা ঘোষণা করেছে। সুতরাং, রেল মন্ত্রকের দাবি-র কাছে মাথা নুইয়ে আট রেলরুটকে সচল রাখতে রাজ্য আদৌ অর্ধেক খরচ বহনে সম্মত হয় কি না সেটাই এখন দেখার।