রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা চিঠি উদ্ধার হল খড়গপুরে মুখোপাধ্যায় বাড়ির ভগ্নস্তূপ থেকে
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা চিঠি উদ্ধার হল খড়গপুরে মুখোপাধ্যায় বাড়ির ভগ্নস্তূপ থেকে
পশ্চিম মেদিনীপুরের খড়্গপুর শহরে একটি পরিত্যক্ত বাড়ি ভাঙার সময়, একটি বাক্সর মধ্যে থেকে পাওয়া গেল রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা একটি চিঠি । এই চিঠিটি লেখা হয়েছিল ১৯৩৫ সালের মার্চ মাসে । অর্থাৎ ৮৫ বছর আগে। যে চিঠিটি পাওয়া যায় তাতে কাকে উদ্দেশ্য করে তা লেখা হয়েছিল তা উল্লেখ করা হয় নি । চিঠিতে ' কল্যাণীয়েসু ' বলে সম্বোধন করে লেখা হয়েছিল । তবে, চিঠিতে একটি বইয়ের নাম উল্লেখ করা হয়েছে । তা দেখে অনেকেই মনে করছেন যে এই চিঠিটি লেখা হয়েছিল খড়্গপুর কলেজের প্রতিষ্ঠাতা তথা প্রাক্তন অধ্যক্ষ হিমাংশু সরকারকে । কারণ চিঠিতে ' Indian influence of literate of Java and Bali' নামক যে বইয়ের উল্লেখ করা হয়েছে তার লেখক ছিলেন ওই হিমাংশু সরকার ।
খড়্গপুর শহরে শ্রীকৃষ্ণপুর এলাকায় সুরেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় ও জ্যোৎস্না মুখোপাধ্যায় মারা যাওয়ার পর তাদের বাড়িটি কেনেন রাজা সরকার নামে এক ব্যক্তি । জায়গাটি দীর্ঘ দিন ধরে এমনি পড়ে ছিল । মাটির বাড়িটি ভাঙার কাজ শুরু করে সেখানে দুটি বাক্স পাওয়া যায় । একটিতে ছিল লেপ তোষক ইত্যাদি । সেটা এলাকায় বিলি করে দেওয়া হয়েছে । অন্য বাক্সটি ছোট । সেটা খুলে পাওয়া যায় কিছু বই, খাতা ও আরও কিছু জিনিস । রাজা সরকার গানের খাতা খুলে দেখেন তাতে লেখা আছে অনেকগুলো রবীন্দ্র সংগীত ।খাতাটিতে জ্যোৎস্না মুখোপাধ্যায়ের নাম লেখা । সেই খাতার মধ্যেই পাওয়া যায় চিঠি টি । তাতে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সাক্ষর দেখে অবাক হয়ে পড়েন রাজা সরকার । বিভিন্ন বইয়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সাক্ষর দেখেছেন তিনি । দেখেছেন হাতের লেখা । যে চিঠি পাওয়া যায় তার হাতের লেখা, লেখার ভাষা ও সই যে স্বয়ং বিশ্বকবির । তা দেখে চমকে উঠেন তিনি । রাজা সরকার বলেন, এত মূল্যবান জিনিস । আমি সযত্ন করে রেখেছি । এই অমূল্য জিনিস ঘরে রাখার সাধ্য আমার নেই । রাজ্য সরকার, পুরাতত্ত্ব বিভাগ বা কোনও মিউজিয়াম যদি এটা রাখতে চায় আমি তা সঙ্গে সঙ্গে দিয়ে দেব ।
জেলার তথ্য ও সংস্কৃতি আধিকারিক অনন্যা মজুমদার জানিয়েছেন যে এই চিঠিটির সম্পর্কে জানার পর রাজা সরকারকে ওই চিঠি ও বাক্সর মধ্যে পাওয়া সব কিছু নিয়ে আসতে বলা হয়েছে । তার পর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে ও চিঠি আসল হলে কোথায় রাখা হবে তা নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে । ১৯৩৫ সালের ১১মার্চ তারিখে লেখা যে চিঠিটি পাওয়া গিয়েছে তাতে ওই পুস্তকের উল্লেখ করে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখেছেন যে এমন একটি বইয়ের জন্য তিনি অপেক্ষা করেছিলেন ।
বিভিন্ন জনকে বিভিন্ন সময়ে অসংখ্য চিঠি লিখেছেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর । তার লেখা চিঠি যেমন অনেক প্রকাশিতহয়েছে ও অনেক চিঠি সংরক্ষণ করা আছে শান্তিনিকেতনে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের হেফাজতে, তেমনই এখনও প্রকাশিত হয় নি এমন চিঠির সংখ্যাও কম নয় । " এত দিন পরে একটি বাক্সর মধ্যে থেকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা চিঠির মূল্য অপরিসীম । তার মূল্য তো কোনও আর্থিক ভাবে নির্ণয় করা সম্ভব নয় । এখনও কবিগুরুর লেখা অনেক চিঠি হয়ত নানা জায়গাতে এই রকম ভাবে পাওয়া যাবে । এই ধরণের চিঠি ও লেখা পাওয়া গেলে তার উপযুক্ত সংরক্ষণ করা জরুরি " বলে মত প্রকাশ করেছেন শান্তিনিকেতন এলাকার বাসিন্দা সুরজিৎ ঘোষ হাজরা ।