ফেসবুকাণ্ডে প্রতিবাদ সভা নিয়ে উত্তপ্ত বালুরঘাট, অম্বিকেশ-বিকাশদের কালো পতাকা
ফেসবুক-কাণ্ড ঘিরে গত দেড় মাস ধরে উত্তপ্ত বালুরঘাট। পুজোর সময় রাস্তা নিয়ন্ত্রণের নামে টোটো ছাড়া অন্য সমস্ত যানবাহনের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে পুলিশ প্রশাসন। তারই প্রতিবাদে সরব হন বালুরঘাটবাসী।
বালুরঘাটে নাগরিক কমিটির ডাকে প্রতিবাদ সভায় যাওয়ার পথে কালো পতাকা দেখানো হল 'আক্রান্ত আমরা'র সদস্য অম্বিকেশ মহাপাত্র, বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য ও মন্ত্রাক্রান্ত সেনদের। টোটোচালকরা তাঁদের পথ আটকে প্রতিবাদ বিক্ষোভ সামিল হন। প্রায় ৪৫ মিনিটে আটকে থাকতে হয় অম্বিকেশ মহাপাত্রদের। এমনকী 'আক্রান্ত আমরা'র সদস্যরা যাতে নাগরিক কমিটির মঞ্চে পৌঁছতে না পারেন, তার জন্য দফায় দফায় অবরোধও করা হয় রাস্তা।
ফেসবুক-কাণ্ড ঘিরে গত দেড় মাস ধরে উত্তপ্ত বালুরঘাট। পুজোর সময় রাস্তা নিয়ন্ত্রণের নামে বালুরঘাটে বিকেল চারটে থেকে পরদিন ভোররাত চারটে পর্যন্ত টোটো ছাড়া অন্য সমস্ত যানবাহনের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে পুলিশ প্রশাসন। এরই প্রতিবাদে সরব হন বালুরঘাটবাসী।
ফেসবুকে এই প্রতিবাদকে এক অন্য উচ্চতায় নিয়ে যান বালুরঘাটের অনুপম তরফদার, দেবজিৎ রায় ও কৌশিকরঞ্জন খাঁ। এই ঘটনার জেরে পুলিশ স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে মামলা রুজু করে তাঁদের বিরুদ্ধে। পরে অনুপম তরফদার ও দেবজিৎ রায়কে গ্রেফতারও করা হয়। আপতত দুজনেই জামিনে মুক্ত।
এই ঘটনার প্রতিবাদ জানাতে বালুরঘাটে নাগরিক কমিটি এক সভার ডাক দেয়। সেই প্রতিবাদ মঞ্চেই যোগ দিতে যাচ্ছিলেন 'আক্রান্ত আমরা'র অম্বিকেশ মহাপাত্র, বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য ও মন্দাক্রান্ত সেন-রা। তাঁদের যাওয়ার পথে টোটোচালকরা বিক্ষোভ দেখাতে পারে, এই আশঙ্কার বালুরঘাটগামী গৌরলিঙ্ক এক্সপ্রেস থেকে তাঁদের বুনিয়াদপুরে নামিয়ে নেওয়া হয়।
তবুও টোটোচালকদের বিক্ষোভের মুখে পড়তে হয় তাঁদের। সড়কপথে আসার সময় বালুরঘাটে ঢোকার মুখে তাঁদের গাড়ি আটকে দেওয়া হয়। টোটোচালকরা কালো পতাকা দেখিয়ে বিক্ষোভে সামিল হন। গো ব্যাক স্লোগান ওঠে অম্বিকেশ মহাপাত্র বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য ও মন্দাক্রান্ত সেনদের নামে।
এরপর ঘটনাস্থল থেকে রাজ্য পুলিশের ডিজি সুরজিৎ কর পুরকায়স্থকে ফোন করেন 'আক্রান্ত আমরা'র বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য। এরপরই পুলিশ তাঁদের উদ্ধার করে। আপাতত তাঁরা স্থানীয় এক লজে আশ্রয় নেন। এদিনই বিকেল চারটের সময় বালুরঘাট নাট্যমন্দিরে সভা। তাঁদের সেই সভায় অংশগ্রহণ আটকাতে নাট্যমন্দির সংলগ্ন সমস্ত রাস্তা এবং অম্বিকেশ মহাপাত্রর লজের সামনে অবরোধ-বিক্ষোভ শুরু করেন টোটো চালকরা।
টোটো চালকদের অভিযোগ, ফেসবুককাণ্ডে অযথা তাঁদের মর্যাদা হানি করা হয়েছে। পুলিশ যা করেছে, ঠিক কাজই করেছে। এই কাজে আমরা কোনও ভুল দেখছি না। তাই অম্বিকেশ মহাপাত্রদের এই প্রতিবাদ সভাকে আমরা মানতে নারাজ। সেই কারণেই আমরা অবরোধ বিক্ষোভে সামিল হয়েছে। আমাদের অনুরোধ তাঁরা ফিরে যান।
'আক্রান্ত আমরা'র অম্বিকেশ মহাপাত্র বলেন, 'শুধু বালুরঘাট নয়, মত প্রকাশের স্বাধীনতার কণ্ঠরোধ করার প্রচেষ্টা চলছে রাজ্যের সর্বত্র। কয়েক বছর আগে তাঁরও মত প্রকাশের স্বাধীনতা হরণ করা হয়েছিল। এ জন্য তাঁকে জেলে পাঠানো হয়েছিল। এই মত প্রকাশের স্বাধীনতার জন্য প্রতিবাদ সভায় তিনি তাই যেনতেন প্রকারে যাবেনই।'
বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য বলেন, 'রাজ্যজুড়ে পরিকল্পিতভাবে বিশৃঙ্খলা তৈরি করা হয়েছে। বালুরঘাট ফেসবুককাণ্ডে পুলিশ প্রশাসনই কাঠগড়ায়। তাঁর আরও অভিযোগ, টোটোচালকদের অবরোধের পিছনে পুলিশ-প্রশাসনের প্রচ্ছন্ন মদত রয়েছে।' মন্দাক্রান্ত সেন বলেন, 'গণতন্ত্রের অধিকাররক্ষার জন্য আজ তাঁরা বালুরঘাটে এসেছেন। কালো পতাকা দেখিয়ে তাঁদের দমানো যাবে না।' নাগরিক কমিটির পক্ষে অনুপম তরফদার জানান, 'টোটোচালকদের অবরোধে তাঁরা ভয় পেয়ে পিছু হটবেন না। নাগরিক কমিটির ডাকে প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হবেই।'