
প্রশান্ত কিশোরের 'মাস্টারপ্ল্যান' মমতার তৃণমূলকে নিয়ে, তৃতীয় ফ্রন্টে অনীহায় উঠছে বড়সড় প্রশ্ন
বাংলার কুরুক্ষেত্রে জিতে এবার দিল্লির মসনদকে পাখির চোখ করতে চেয়েছে তৃণমূল। প্রশান্ত কিশোরকে ভোট কৌশলী রেখে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পরিকল্পনা সাজাতে চান ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনের জন্য। তিন বছর আগে থেকে পরিকল্পনা নিলেও ভোট কৌশলী পিকের একটা মন্তব্যই নতুন করে জল্পনার তৈরি করল।

তৃতীয় বা চতুর্থ ফ্রন্টে ভরসা নেই পিকের
প্রশান্ত কিশোর এক মাসের মধ্যে শারদ পাওয়ারের সঙ্গে দু-বার বৈঠক করেছেন। তারপর তিনি সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, বিজেপিকে চ্যালেঞ্জ জানানোর ক্ষেত্রে তৃতীয় বা চতুর্থ ফ্রন্টে ভরসা নেই তাঁর। তাঁর এই উক্তিই বিরোধী জোটের ক্ষেত্রে বড়সড় প্রশ্নচিহ্ন তুলে দিয়েছে। তবে কি পিকে চাইছেন না ভোট পূর্ববর্তী জোট হোক?

তৃণমূলকে নিয়ে প্রশান্ত কিশোরের কী পরিকল্পনা
প্রশ্ন উঠেছে, প্রশান্ত কিশোর যদি তৃতীয় বা চতুর্থ ফ্রন্টের ভবিষ্যৎ নিয়ে পূর্বাভাস দিয়েই দেন, তবে তাঁর টার্গেট কী? তিনি কী চাইছেন? রাজনৈতিক মহলও খুঁজছে সেই প্রশ্নের উত্তর। এক্ষেত্রেও অবশ্য রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা নানা মত প্রকাশ করেছেন। কিন্তু তাতে স্পষ্ট হয়নি তৃণমূলকে নিয়ে প্রশান্ত কিশোরের কী পরিকল্পনা থাকতে পারে।

প্রাক-নির্বাচনী জোটের প্রাসঙ্গিকতা নিয়ে প্রশ্ন
রাজনৈতিক মহলের একাংশের ধারণা, প্রশান্ত কিশোরের মতো ভোট কৌশলী যখন বলছেন তৃতীয় ফ্রন্টের কোনও ভবিষ্যৎ নেই, তবে তাঁর সেই ভাবনার একটা সারবত্তা রয়েছে। প্রশান্ত কিশোর হয়তো মনে করছেন, প্রাক-নির্বাচনী জোটের কোনও মূল্য নেই। কেননা এক-একটা রাজ্যে এক-একটা দল শক্তিশালী। সেখানে জোট করে ভোটে লড়ার কোনও অর্থ নেই।

যে যেখানে শক্তিশালী, সে সেখানে ভোটে লড়ুক
রাজনৈতিক মহলের মতে, প্রশান্ত কিশোর চান ভোট পরবর্তী জোট হোক। অর্থাৎ সমন্বয় থাকুক বিজেপি বিরোধী দলগুলির মধ্যে। কিন্তু ভোট পূর্ববর্তী জোট না করাই ভালো। তাতে লাভ কিছু হবে না। বরং কিছু ক্ষেত্রে আসন সমঝোতা নিয়ে সমস্যা দেখা দিতে পারে। যে যেখানে শক্তিশালী, সে সেখানে ভোটে লড়ুক।

প্রয়োজনে রাজ্যওয়াড়ি জোট তৈরি হতে পারে
আর যদি কোনও রাজ্যে এমন পরিস্থিতি থাকে দুই বিজেপি-বিরোধী দল জোট করলে বিজেপিকে হারানো সহজ হবে, তবে সেখানে রাজ্যওয়াড়ি জোট হোক। কিন্তু সার্বিকভাবে প্রাক-নির্বাচনী জোট করে বিশেষ ফায়দা নেই। এক্ষেত্রে প্রশ্ন, বিরেোধী রাজনৈতিক দলগুলিকে এক ছাতার তলায় আনতে তিনি কী পরিকল্পনা করবেন?

মমতাকে জাতীয়স্তরের রাজনীতিতে তুলে ধরতে
প্রশান্ত কিশোর যে ২০২৪-এ তৃণমূলকে প্রধান বিরোধী দল করে তুলতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবেন, তা বলাই যায়। কিন্তু কোন পরিকল্পনা কষে তিনি এগোবেন, তা এখনও স্পষ্ট নয়। মোদী-বিরোধী মুখ হিসেবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে জাতীয়স্তরের রাজনীতিতে তুলে ধরতে কোন পথে হাঁটবেন তিনি, তাঁর কোনও ব্যাখ্যা এখনও দেননি তিনি।

মোদী-বিরোধী মুখ হিসেবে মমতার ধারেকাছে কেউ নেই
বাংলার নির্বাচনে একক দক্ষতায় মোদী-শাহের ফুল টিমকে হারানোর পর জাতীয় রাজনীতিতেও যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রধান বিরোধী মুখ হয়ে উঠবেন, তা বলাই যায়। একথাও বলা যায়, মোদী-বিরোধী মুখ হিসেবে মমতার ধারেকাছে কেউ নেই। এখনও পর্যন্ত ২০২৪-এর প্রধান বিরোধী মুখ হিসেবে রাহুল গান্ধীকে দেখা যায়নি সদর্থক ভূমিকায়।

যে ফ্যাক্টর বাধা মোদী-বিরোধী মুখ হিসেবে মমতার উত্থানে
আবার একথাও ঠিক যে, এখনও বেশিরভাগ রাজ্যে বিজেপির মূল লড়াই কংগ্রেসের সঙ্গে। সেক্ষেত্রে বিজেপিকে হারাতে গেলে কংগ্রেসকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে হবে। এবং বিজেপি হারলে কংগ্রেস বেশি আসন পাবেই। সেক্ষেত্রে কংগ্রেসের তরফে রাহুল গান্ধী বা অন্য কেউ মুখ্য হয়ে উঠবেন, সেটাও একটা ফ্যাক্টর মোদী-বিরোধী মুখ হিসেবে মমতার উত্থানে।

তৃণমূল যখন ভিনরা্জ্যেও বিস্তার লাভ করতে চাইছে
বাংলার ভোট শেষে তৃণমূল কংগ্রেস ভিনরা্জ্যেও বিস্তার লাভ করতে চাইছে। সেই লক্ষ্যে প্রশান্ত কিশোরকে ফের কৌশলী নিয়োগ করা এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কতে সর্বভারতীয় সম্পাদক হিসেবে বিশেষ দায়িত্ব দেওয়া। কিন্তু প্রশ্ন, এই তিন বছরেরও কম সময়ে কি জাতীয় রাজনীতিতে প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠতে ভিন রাজ্যে সংগঠন গড়ে শক্তিশালী করে তোলা সম্ভব?

ঐক্য গড়ে উঠুক, শুধু বিরোধী জোটে কোনও লাভ হবে না
অভিষেক যেমন কিছু রাজ্যকে টার্গেট করেছেন, তেমনই প্রশান্ত কিশোরও তাল ঠুকছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে জাতীয় রাজনীচতির আঙিনায় প্রধান বিরোধী মুখ হিসেবে প্রতিষ্ঠা দেওয়ার জন্য। সেজন্য তিনি নতুন করে কোনও ছক তৈরি করতে চাইছেন। ঐক্য গড়ে উঠুক, কিন্তু শুধু বিরোধী জোট করে কোনও লাভ হবে না। মমতা আর তৃণমূলকে নিয়ে তাই নতুন ভাবনা ভাবতে হবে।