কংগ্রেস ছাড়া বিজেপি-বিরোধী জোট সম্ভব! মিশন ২৪শের ব্লু-প্রিন্ট তৈরি প্রশান্ত কিশোরের
কংগ্রেস ছাড়া বিজেপি-বিরোধী জোট সম্ভব! মিশন ২৪শের ব্লু-প্রিন্ট তৈরি প্রশান্ত কিশোরের
একুশের নির্বাচনে বাংলায় তৃণমূলকে পথ দেখানের লপর ২০২৪-এর আগে দিল্লির রাজনীতিতে তৃণমূলকে দাঁড় করানোর সংকল্প নিয়েছেন ভোট কৌশলী প্রশান্ত কিশোর। প্রথম তিনি দাবি করেছিলেন, কংগ্রেস ছাড়া বিজেপি বিরোধী জোট মূল্যহীন। এখন সেই অবস্থান থেকে তিনি অনেকটাই সরে এসেছেন। তৃণমূলকে প্রধান করে তিনি নয়া জোটের পরিকল্পনা রচনা করছেন।
কংগ্রেসকে ছাড়া বিরোধী জোট সম্ভব, বলছেন পিকে
প্রশান্ত কিশোর তাঁর পূর্ব অবস্থান থেকে অনেকটা সরে এসে মনে করছেন. কংগ্রেস ছাড়া বিজেপি-বিরোধী জোট সম্ভব। কীভাবে তা হতে পারে, সেই ভাবনা বা পরিকল্পনাও ব্যক্ত করেছেন তিনি। ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের পরিকল্পনা রূপায়ণে নেমে প্রশান্ত কিশোর সম্প্রতি মন্তব্য করেছেন, কংগ্রেসকে ছাড়া বিরোধী জোট সম্ভব। কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীকে যথারীতি খোঁচা দিয়ে তিনি নয়া সমীকরণের বার্তা দিয়েছেন।
বিজেপির কাছে কেন বারবার পরাজয়, ভাবছে না কংগ্রেস!
তৃণমূলের ভোট কৌশলী প্রশান্ত কিশোর সম্প্রতি রাহুল গান্ধীকে কটাক্ষ করে বলেন, কংগ্রেস শুধু মোমবাতি মিছিল আর টুইট দিয়ে বিজেপিকে পরাজিত করতে পারবে না। কংগ্রেস নেতারা যদি দলকে বাঁচাতে চান তবে সর্বাগ্রে তাঁদের গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে দলের সভপাতি নির্বাচন করতে হবে। তারপরই কংগ্রেস বিজেপিকে পরাস্ত করার প্রকৃত পথ খুঁজে পাবে। নতুবা তাঁদের বারবার বিজেপির কাছে পরাজয় স্বীকার করতে হবে।
কংগ্রেস কোনও ব্যবস্থা নেয়নি দলকে নতুন করে চাঙ্গা করার
প্রশান্ত কিশোরের কথায়, কংগ্রেস সভাপতি নির্বাচন করা হোক গণতান্ত্রিকভাবে। অনেকেই মনে করছেন কংগ্রেস পার্টি পতনের দিকে এগিয়ে চলেছে, তাকে রক্ষা করার কোনও উদ্যোগ নেই। শেষবার যখন কংগ্রেস একা দেশে জিতেছিল সেটা ছিল ১৯৮৪ সাল। তারপর কংগ্রেস একা কখনও দেশে একটিও সাধারণ নির্বাচনে জয়ী হয়নি। এই পরিসংখ্যান দেখেও কংগ্রেস কোনও ব্যবস্থা নেয়নি দলকে নতুন করে চাঙ্গা করার।
কংগ্রেসের নেতৃত্বহীনতা একটা বড় সংকট জাতীয় রাজনীতিতে
প্রশান্ত কিশোর আরও বলেন, তিনি গত দুই বছর ধরে কংগ্রেস নেতৃত্বের সঙ্গে নানা বিষয়ে আলোচনা করছেন। তাঁদের সঙ্গে কথা বলে প্রশান্ত কিশোরের দাবি, নেতারা সংবাদমাধ্যমের সামনে যে তথ্য দিচ্ছেন, তার সত্যতা সম্পর্কে তাঁরা সঠিকভাবে অবগত নন। তার ফলে একটা বড় ফারাক তৈরি হচ্ছে সর্বক্ষেত্রে। কংগ্রেসের নেতৃত্বহীনতা একটা বড় সংকট হয়ে দেখা দিয়েছে।
কংগ্রেসে যোগ দেওয়া প্রসঙ্গে অকপট প্রশান্ত কিশোর
তিনি এ প্রসঙ্গে জানান, "এটা সত্যি যে, আমি কংগ্রেসের সাথে কথা বলছিলাম এবং আমি প্রায় কংগ্রেসে যোগ দিয়ে দিয়েছিলাম। এতটা মতবিরোধ কংগ্রেসের সঙ্গে ছিল না। তাঁর কথায়, যে কয়েকটি সমস্যা ছিল, তার সমাধান হয়নি বলেই আমি যোগ দিইনি। আসলে কংগ্রেস সই একই চালে চলছে, কোনওরকম পরিবর্তনের কথা তারা ভাবেনি, সেখানেই রয়ে গিয়েছে সমস্যা।
পরাজয়ের দায় কংগ্রেস নেতৃত্বের নেওয়া উচিত
সর্বভারতীয় এক সংবাদ মাধ্যমের সাক্ষাৎকারে প্রশান্ত কিশোর বলেন, ২০২৪ সালের সাধারণ নির্বাচনে বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য বিরোধীরা এককাট্টা হতে চাইছে। তার নীলনকশাও উপস্থাপন করেছিলেন তিনি। কিন্তু তা ফলপ্রসূ করার কোনও প্রয়াস দেখা যায়নি কংগ্রেসের তরফে। তিনি এ বিষয়ে পুনরায় বলেন, কংগ্রেস গত দশ বছরে ৯০ শতাংশ নির্বাচনে হেরেছে। এই পরাজয়ের দায় কংগ্রেস নেতৃত্বের নেওয়া উচিত। কিন্তু তারা তা মেনে নিয়ে নতুনকে বরণ করে নিতে চায় না।
বিজেপিকে ঘিরে আবর্তিত ভারতীয় রাজনীতি
প্রশান্ত কিশোর এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির প্রশংসা করে বলেন, মোদীজির একটা বড় গুণ হল, তিনি সবার কথা শোনেন। এটি তাঁর মস্ত বড় শক্তি। মোদি জানেন মানুষ কী চায়। তাই দেশের রাজনীতি আগামী কয়েক দশক ধরে বিজেপিকে ঘিরে আবর্তিত হবে। তার মানে এই নয় যে বিজেপিকে হারানো সম্ভব নয়। বিজেপি আগামী কয়েক বছর ভারতীয় রাজনীতিতে বিরাজ করবে কংগ্রেসের মতো। বিজেপির সঙ্গেই মূল লড়াই হবে। এতদিন যেটা হয়েছে কংগ্রেসের সঙ্গে।
কংগ্রেসের ব্যর্থতায় আঞ্চলিক দল এগিয়ে আসছে
এবার বিজেপিকে হারাতে গেলে একজোট হতে হবে বিরোধীদের। কংগ্রেস এই সার সত্যটা বোঝেনি। তারা মনে করছে, বিজেপিকে হঠাতে কংগ্রেস একাই যথেষ্ট। তাই এখন কংগ্রেসকে ছাড়া বিজেপিকে হারানোর পরিকল্পনা প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে। কংগ্রেস যদি প্রান্তিক শক্তিতে পরিণত হয়, তখন অন্যান্য আঞ্চলিক দলকে তো এগিয়ে আসতেই হবে। এগিয়ে এসে জোটকে নেতৃত্ব দিতে হবে। সেই প্রচেষ্টা শুরু হয়ে গিয়েছে। কংগ্রেসকে ছাড়া বিরোধী জোটের পথ চলার ভাবনাও দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছে।