মুকুল-শুভেন্দুদের মাত দিতে 'কৌশলী' প্রশান্ত কিশোর, জয়ের অঙ্ক সাজাচ্ছেন মিশন একুশে
২০১৯-এর লোকসভায় বিজেপির কাছে ধাক্কা খেয়ে প্রশান্ত কিশোরের স্মরণ নিয়েছিল তৃণমূল। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁকে এনেছিলেন দলের প্রচার পরিকল্পনার জন্য। সেই থেকেই তৃণমূলকে একুশে লড়াইয়ে জয়ের পথ তৈরি করতে ব্যস্ত তিনি।
২০১৯-এর লোকসভায় বিজেপির কাছে ধাক্কা খেয়ে প্রশান্ত কিশোরের স্মরণ নিয়েছিল তৃণমূল। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁকে এনেছিলেন দলের প্রচার পরিকল্পনার জন্য। সেই থেকেই তৃণমূলকে একুশে লড়াইয়ে জয়ের পথ তৈরি করতে ব্যস্ত প্রশান্ত কিশোর। আবার তাঁর কারণেই অনেক তৃণমূল নেতা-নেত্রী এখন বেসুরো বাজছেন। তিনি কি পারবেন তৃণমূলকে কাঙ্খিত জয় এনে দিতে?
প্রশান্ত কিশোর নামক কৌশলবিদের আবির্ভাব
প্রশান্ত কিশোর আসার আগে তৃণমূলের চাণক্য মুকুল রায় দল ছেড়ে বিপক্ষ শিবিরে নাম লিখিয়েছেন। এতদিন তাঁর পরামর্শেই ভোটে লড়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অ্যান কোং। তিনি চলে যাওয়ার পর প্রথম সাধারণ নির্বাচনেই মুখ থুবড়ে পড়তে হয়েছিল তৃণমূল কংগ্রেসকে। তারপরই প্রশান্ত কিশোর নামক কৌশলবিদের আবির্ভাব হয়েছে বাংলার রাজনীতিতে।
তৃণমূল বেশ খানিকটা ব্যাকফুটে পিকের জন্যই
প্রশান্ত কিশোর তৃণমূলের প্রচার পরিকল্পনার দায়িত্ব নিয়েই ‘দিদিকে বলো', ‘বাংলার গর্ব মমতা', ‘বাংলার যুবশক্তি' অভিযানে নেমে সাফল্য পেয়েছিলেন। সেই সাফল্য দিয়েই গুটিয়ে যাওয়া তৃণমূলকে আবার লড়াইয়ের ময়দানে ফিরিয়ে আনতে সমর্থও হয়েছিলেন। কিন্তু প্রশান্ত কিশোরকে নিয়ে তৃণমূলের অন্তর্কলহ তৃণমূলকে বেশ খানিকটা ব্যাকফুটে ঠেলে দিয়েছে ফের!
একুশের আগে শক্তি কমছে তৃণমূল কংগ্রেসের
ঠিক এই পরিস্থিতি তৃণমূল ছেড়েছেন শুভেন্দু অধিকারী। তাঁর মতো জনপ্রিয় নেতার দলত্যাগে প্রভাব পড়তে বাধ্য। শুভেন্দু অধিকারী শুধু দুই মেদিনীপুর ও ঝাড়গ্রাম নয়, জঙ্গরমহল-সহ মুর্শিদাবাদ-মালদহেও প্রভাবশালী। তাই তাঁর হাত ধরে গোটা বাংলা থেকেই তৃণমূল নেতারা বিপক্ষ দলে যোগ দিতে পারেন। তাহলে একুশের আগে ক্ষমতা কমবেই তৃণমূলের।
পিকে তৃণমূলকে শক্ত ভিতের উপর দাঁড় করাতে কৌশলী
আর এই অবস্থায় শুভেন্দুর হাত ধরে তৃণমূলের বিধায়ক-সাংসদরাও দল ছেড়েছেন। আরও অনেকে লাইনে আছেন বলে বিজেপির দাবি। এভাবে যদি ভোচের আগে পর্যন্ত দল ভাঙলে থাকে, তার একটা কু-প্রভাব পড়বেই। যদিও প্রশান্ত কিশোর চেষ্টা করছেন তৃণমূলকে শক্ত ভিতের উপর দাঁড় করাতে। এই ভঙ্গুর প্রকৃতি থেকে বের হওয়াটাও একটা চ্যালেঞ্জ।
দলের শূন্যস্থান পূরণে পিকের টার্গেট গোষ্ঠীর নেতারা
প্রশান্ত কিশোর দলের শূন্যস্থান পূরণে টার্গেট করছেন গোষ্ঠীর নেতাদের। কারণ এবারের ভোট মেরুকরণের ভোট। যেমন হিন্দু-মুসলিম ভোট মেরুকরণ অবশ্যম্ভাবী, তেমনই ছোটোখাটো যে সমস্ত গোষ্ঠী রয়েছে, তারাও ফ্যাক্টর। যেমন মতুয়া, আদিবাসী, গোর্খা ইত্যাদি ইত্যাদি। তৃণমূল ইতিমধ্যেই পাহাড়ে গোর্খা নেতা বিমল গুরুং ও জঙ্গলমহলে ছত্রধর মাহাতোকে নিজেদের দিকে এনে কিছু আসনে সামলে নিতে পেরেছে।
আদিবাসী ভোট টানতে পিকের মাস্টারস্ট্রোক
প্রশান্ত কিশোরের পরামর্শে তৃণমূল এবার চেষ্টা করছে, আদিবাসী ভোট নিজেদের দিকে টানতে। সম্প্রতি দেখা গিয়েছে ডুয়ার্সের আদিবাসী বিকাশ পরিষদের নেতা রাজেশ লাকরা ওরফে চাইগারকে দলে নিয়েছে তৃণমূল। তারপর জলপাইগুড়ির নাগরাকাটার আদিবাসী সমাজকর্মী সঞ্জয় কুজুরও যোগ দিয়েছেন তৃণমূল কংগ্রেসে।
মানুষের দরবারে পৌঁছতে পিকের পরিকল্পনা
প্রশান্ত কিশোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন, ছোটো ছোটো গোষ্ঠী নেতাদের নিয়ে দলকে মানুষের দরবারে পৌঁছে দিতে। প্রশান্ত কিশোরের কাছে একুশের ভোট একটা বড় চ্যালেঞ্জ। সেই চ্যালেঞ্জে তৃণমূলের প্রাক্তন হেভিওয়েট নেতা মুকুল রায়-শুভেন্দু অধিকারীদের বিরুদ্ধে তাঁকে লড়তে হচ্ছে। এই লড়াই শুধু দিলীপ ঘোষদের বিরুদ্ধে হলে এত কঠিন হত না। কিন্তু ঘরের লোকেরাই বাধার প্রাচীর খাঁড়া করে দাঁড়িয়েছে তাঁদের সামনে