বাংলার নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা এবার হিন্দিভাষীদেরও! সন্দিহান ভোট কৌশলী পিকেও
বাংলার নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা এবার হিন্দিভাষীদেরও! সন্দিহান ভোট কৌশলী পিকেও
তৃণমূলের ভোট কৌশলী প্রশান্ত কিশোরকে সম্প্রতি ফাঁস হওয়া এক অডিওতে বলতে শোনা গিয়েছে, হিন্দি-ভাষী মানুষ এবার বিধানসভা নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবেন। কারণ তাঁরা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে পুরোপুরি সমর্থন করতে পারেন। বিজেপি এই অডিও ফাঁস করার পর বিতর্ক তৈরি হয়েছে রাজনৈতিক মহলে। প্রশান্ত কিশোরও পাল্চা চ্যালেঞ্জ ছুড়েছেন।
বিজেপিকে পুরো অডিও বার্তা প্রকাশের চ্যালেঞ্জ পিকের
প্রশান্ত কিশোরের ওই অডিও বার্তা শুনিয়ে বিজেপি দাবি করছে, মোদী জনপ্রিয়তা বাংলাতেও প্রশ্নাতীত। তা যখন প্রশান্ত কিশোর স্বীকার করে নিয়েছেন এই নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেসের হার অবশ্যম্ভাবী। এরপরই প্রশান্ত কিশোর বিজেপিকে পুরো অডিও বার্তা প্রকাশের চ্যালেঞ্জ ছোড়েন। এবং দাবি করেন, তিনি তাঁর অনুমান থেকে এখনও সরছেন না যে, বিজেপি বাংলায় ১০০ পেরোবে না।
আত্মীয়-পরিজনরাও যখন বাঙালি বলে খোঁটা দেন
বাংলায় অনেক মানুষ আছেন যাঁরা ভিনরাজ্য থেকে এ রাজ্যে এসে ঘাঁটি গেড়েছেন। বাংলার বাইরে থেকে এসে যারা রাজ্যে বহুদিন স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন, তাঁদের বেশিরভাগ সর্বাত্মকভাবে বাঙালি হয়ে উঠেছেন। এবং তাঁরা যখন বিশেষ কোনও কাজে দেশের বাড়িতে ফেরেন তাঁদের আত্মীয়-পরিজনরাও বাঙালি বলে খোঁটা দেন।
হিন্দিভাষীদের ভোটে বিজেপি উপকৃত হতে পারে
ভিনরাজ্য থেকে এসে বাঙালি বনে যাওয়া অভিবাসীরা বাংলায় নেহাত কম নয়। রাজ্যের জনসংখ্যার প্রায় ১০ শতাংশ এই ধরনের মানুষ আছেন। অর্থাৎ এক কোটির চেয়ে সামান্য কিছু কম ভিনরাজ্যের মানুষ রয়েছেন পশ্চিমবঙ্গে। তাঁরা হিন্দিভাষী। এই হিন্দিভাষীদের ভোটে বিজেপি উপকৃত হতে পারে বলে ওই অডিওতে জানিয়েছেন প্রশান্ত কিশোর।
ভিনরাজ্যের নেতাদের বাংলা উচ্চারণ নিয়েও কটাক্ষ
বিজেপি হিন্দিভাষীদের সৌজন্যে বাংলায় ভীষণভাবে ব্যাপ্তি লাভ করতে সফল হয়েছে। বাংলায় নির্বাচনী লড়াইয়ে দ্রুত জায়গা করে নিয়েছে। অন্যদিকে তৃণমূল মরিয়া বিজেপিকে রুখতে। এর ফলে বিজেপির বিরুদ্ধে বাংলাভাষীদের একত্রিত করার চেষ্টা করছে তৃণমূল। বিজেপির ভিনরাজ্যের নেতাদের বাংলা উচ্চারণ নিয়েও কটাক্ষ করতে ছাড়ছে না তৃণমূল কংগ্রেস।
বিজেপি তৃণমূলের বহিরাগত-অভিযোগকে প্রত্যাখ্যান করেছে
তৃণমূল বিজেপিকে বহিরাগতদের দল বলে অভিহিত করেছে এবং বলেছে, বিজেপি নেতৃত্ব বাংলার সংস্কৃতি সম্পর্কে কিছুই জানে না। একই সাথে প্রবাসী ভোটারদের প্রতি সমর্থন জানিয়েছিল তৃণমূল এবং জোর দিয়েছিল যে, তারা রাজ্যে বসবাসকারী বাঙালির চেয়ে কম নয়। বিজেপি তৃণমূলের বহিরাগত-অভিযোগকে প্রত্যাখ্যান করেছে এবং বলেছে যে দল ক্ষমতায় এলে ভূমিপুত্রই মুখ্যমন্ত্রী হবেন।
বহিরাগত-তত্বকে বিজেপি হাতিয়ার করার চেষ্টা করছে
এই বহিরাগত বিতর্কে তৃণমূলকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, রাজ্যের বাইরে কর্মরত বাঙালিকে কি বহিরাগত বলে বিবেচনা করা উচিত। এই প্রশ্ন তৃণমূলকে কোণঠাসা করেছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দলের এই বহিরাগত-তত্বকে বিজেপি হাতিয়ার করার চেষ্টা করছে। তৃণমূল বার বার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের গায়ে বহিরাগত তকমা সেঁটে দিচ্ছে।
হিন্দি-ভাষী ভোটাররা কলকাতা এবং সীমান্তবর্তী জেলায়
বাংলার হিন্দি-ভাষী ভোটাররা কলকাতা এবং সীমান্তবর্তী জেলাগুলিতে অবস্থান করেন। কলকাতার পাশাপাশি হাওড়া-হুগলি, উত্তর চব্বিশ পরগনা, উত্তরবঙ্গের কয়েকটি জেলা এবং পশ্চিম বর্ধমানের কিছু জায়গায় রয়েছে তাঁদের বাস। অনেক গুজরাটি উত্তর ২৪ পরগনার ব্যারাকপুরে বসতি স্থাপন করেছে। আর কলকাতায় অনেক মাড়োয়ারি জনসংখ্যা রয়েছে। বছরের পর বছর ধরে, এই ধরনের অভিবাসীরা রাজ্যের অর্থনীতিতে অবদান রেখেছেন।
বিজেপি বাংলায় পা রাখার পিছনে হিন্দিভাষী ভোটারদের অবদান
২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচন পর্যন্ত হিন্দিভাষী মানুষেরা তৃণমূলের সঙ্গে ছিলেন। তারপর ধীরে ধীরে বিজেপির দিকে ঝুঁকতে শুরু করেন। বিজেপি বাংলায় পা রাখার পিছনে হিন্দিভাষী ভোটারদের অবদান রয়েছে। ২০১৯-এ লোকসভা ভোটে বাংলায় বিজেপির দর্শনীয় সাফল্য লাভ করেছিল সেই ভিতের উপর দাঁড়ি্য়েই। রাজ্যের ৪২টি লোকসভা আসনের মধ্যে বিজেপি ১৮টিতে জয়লাভ করেছিল। মূলত আদিবাসী, মতুয়া, হিন্দি-ভাষী মানুষ এবং পূর্বের বামকর্মীরা শিবির বদলানোয়।
পিকের অডিও বার্তায় ফায়দা তোলার চেষ্টা বিজেপির
সম্প্রতি প্রশান্ত কিশোরের একটি অডিও টেপ সম্প্রতি বিতর্ক তৈরি হয়েছিল। বিজেপি অডিও প্রকাশ করে জানিয়েছিল, প্রশান্ত কিশোরের বার্তা বিজেপিকেই সমর্থন করে। সেই অডিও-তে তাঁকে বলতে শোনা গিয়েছিল, বাংলায় মোদীর জনপ্রিয়তা মমতার সমান। মতুয়া ভোট বিজেপির দিকেই রয়েছে। পিকের অডিও খণ্ড খণ্ড অংশ প্রকাশ করে বিজেপি ফায়দা তোলার চেষ্টা করে।
বিজেপিকে পাল্টা পুরো অডিও প্রকাশের চ্যালেঞ্জ পিকের
এরপর পিকে পাল্টা জানান, বিজেপির সাহস থাকলে পুরো অডিও প্রকাশ করুক। তিনি দাবি করেন, খণ্ড খণ্ড কথা তুলে ধরায় বিকৃত হয়েছে তাঁর বার্তা। তিনি আগেও যা বলেছিলেন, এখনও সেই সিদ্ধান্তেই অবিচল আছেন। বিজেপি বাংলায় ১০০ আসন ছুঁতে পারবে না। ৯৯-এর মধ্যেই আটকে থাকবে। এরপর পিকে সাফাই দিতে গিয়ে বলেন তৃণমূলে মমতাই শেষ কথা।
অভিষেক নন, মমতাই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেন তৃণমূলে
ভোটের মাঝপথে যখন প্রশান্ত কিশোরের অডিও নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। তাঁকে মাঝেমধ্যেই প্রচারের আলোয় আসতে হচ্ছে। মুখ খুলতে হচ্ছে সংবাদমাধ্যমে, তখন তিনি আবারও একবার জানিয়ে দিলেন, তৃণমূলের শেষ কথা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই। অভিষেক নন, মমতাই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেন। মুখ্যমন্ত্রী তথা দলের সু্প্রিমোর কথাই চূড়ান্ত তৃণমূলে।
তৃণমূলের ব্যাটন রয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাতেই
কিন্তু প্রার্থীর মনোনয়ন থেকে ভোট পরিচালনা সব কিছুতেই দেখা গিয়েছে তৃণমূলের ব্যাটন রয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাতেই। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পরামর্শ নিয়েছেন অভিষেক বা পিকের। কিন্তু সিদ্ধান্ত নিয়েছেন নিজে। তিনি নিজের মতো করেই একুশের বিধানসভার সৈনিক সাজিয়েছেন। যুব সংগঠনের পাশাপাশি মূল সংগঠনের প্রতিনিধিকেও প্রার্থী করেছেন তিনি।