শুভেন্দুকে থামাতে মাস্টারস্ট্রোক প্রশান্ত কিশোরের, একুশের লড়াই কি তবে ‘বাঘে-বলদে’
শুভেন্দুর ডেরায় গিয়ে এবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিধানসভা নির্বাচনে লড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। একুশের ভোটের আগে দলবদলের পর পূর্ব মেদিনীপুরে শুভেন্দু অধিকারীর বাড়বাড়ন্ত রুখতেই কি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এতবড় পদক্ষেপ নিলেন? তাঁর নন্দীগ্রামে প্রার্থী হওয়ার পিছনেও কি সেই ভোট কৌশলী প্রশান্ত কিশোরের মস্তিষ্ক?


শুভেন্দু অধিকারী বনাম প্রশান্ত কিশোর একুশে
শুভেন্দু অধিকারীর তৃণমূল কংগ্রেস ছাড়ার পিছনে প্রশান্ত কিশোর একটা কারণ। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশাপাশি তিনি নিয়মিত প্রশান্ত কিশোরের সংস্থাকেও কাঠগড়ায় তুলছেন। আগে বলেওছেন, যতদিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়-সুব্রত বক্সির তৃণমূল ছিল, ঠিক ছিল। কিন্তু অভিষেক-পিকের তৃণমূলে কাজ করা যায় না।

প্রশান্ত কিশোরে আস্থা মানতে পারেননি শুভেন্দু
২০১৯-এ তৃণমূল বিজেপির কাছে ধাক্কা খাওয়ার পর কৌশল নিরূপণের জন্য প্রশান্ত কিশোরকে এনেছিল। সেই প্রশান্ত কিশোর তৃণমূলকে চাঙ্গা করতে বেশ কিছু কর্মসূচি নিয়েছিলেন। সেগুলো অনেক ক্ষেত্রে ফলপ্রসূ হয়েছিল। কিন্তু শুভেন্দু অধিকারী দলের নেতাদের ছেড়ে পেশাদার ভোট কৌশলী প্রশান্ত কিশোরে আস্থা মেনে নিতে পারেননি।

শুভেন্দু ও প্রশান্ত কিশোরের ভিন্নমুখী অবস্থান
ফলে শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে প্রশান্ত কিশোরের ব্যবধান রয়েই গিয়েছিল। শুভেন্দু বারবার বুঝিয়ে দিয়েছেন, খড়গপুর বা কালিয়াগাঞ্জের জয় প্রশান্ত কিশোরের গেমপ্ল্যানে আসেনি, এসেছে তাঁর ও তৃণমূল নেতাদের খাটুনিতে ভর করে। তৃণমূল আবার ঘুরে দাঁড়াতে সমর্থ হয়েছে। তবে প্রশান্ত কিশোরও যে কর্মসূচি ও প্রচার পরিকল্পনায় তৃণমূলে জোয়ার আনার চেষ্টা করেননি, তা বলা যাবে না।

কোথায় কী ওষুধ প্রয়োগ, নিরূপণে প্রশান্ত কিশোর
প্রশান্ত কিশোরের রি্পোর্টকে গুরুত্ব দিয়ে তৃণমূলে সংগঠন সাজানো হয়েছে। পরিকাঠামোয় বদল আনা হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রেই প্রশান্ত কিশোরের ভূমিকা সমর্থনযোগ্য নয় বলে বেঁকে বসেছেন দলের নেতা-বিধায়করা। সম্প্রতি প্রশান্ত কিশোরকে একটু আড়াল করে কাজ করছে তৃণমূল। তবে আড়ালে থেকে কোথায় কী ওষুধ প্রয়োগ করতে হবে তা নিরূপণ করে চলেছেন পিকে।

শুভেন্দু-গড়ে তৃণমূল কর্মীরা যখন মুষড়ে পড়েছেন
প্রশান্ত কিশোরের সেই পরিকল্পনারই একটা অঙ্গ হল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নন্দীগ্রাম থেকে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত। শুভেন্দু অধিকারীর উপর পুরোপুরি নির্ভরশীল ছিল গোটা পূর্ব মেদিনীপুর। সত্যি কথাই শুভেন্দুর ভরসাতেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নন্দীগ্রাম ছেড়ে রেখেছিলেন। কিন্তু এখন তিনি নেই, তাই নন্দীগ্রামের পাশাপাশি গোটা জেলাতেই তৃণমূল কর্মীরা মুষড়ে পড়েছিল।

শুভেন্দুর ডেরায় প্রাসঙ্গিকতার শিখরে পৌঁছতে পরিকল্পনা
শুভেন্দু-গড়ে তৃণমূলকে চাঙ্গা করতেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নন্দীগ্রামে দাঁড়ানোর মতো একটা চ্যালেঞ্জিং সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। আর ভোট কৌশলী হিসেবে প্রশান্ত কিশোরের একটা ভূমিকাও থাকতে পারে। তাঁর পরিকল্পনা মতো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নন্দীগ্রামে দাঁড়ালে জেলার রাজনীতিতে আবার প্রাসঙ্গিকতার শিখরে পৌঁছতে পারবে বলেই মনে করছে তৃণমূল।

মমতার সিদ্ধান্তের পিছনে নিশ্চয়ই বড় কোনও উদ্দেশ্য
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শুভেন্দুর ডেরায় হওয়ার ইচ্ছাপ্রকাশ করার সঙ্গে সঙ্গে তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সি ঘোষণা করেছেন সে কথা। স্বভাবতই প্রশ্ন ওঠে, কেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বেছে নিলেন নন্দীগ্রামকে? ২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচন ঘোষণার আগেই এতবড় সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলেন। এর পিছনে নিশ্চয়ই বড় কোনও উদ্দেশ্য রয়েছে।

প্রশান্ত কিশোরের কোনও সুপ্ত পরিকল্পনা থাকতে পারে
শুভেন্দুর ডেরায় মমতার প্রার্থী হওয়ার পিছনে প্রশান্ত কিশোরের চাল রয়েছে বলে একটা সম্ভাবনার কথা তখন থেকেই রাজনৈতিক মহল তুলে ধরেছিল। শুধু শুভেন্দুকে নন্দীগ্রামে চ্যালেঞ্জ জানানোর জন্যই নয়, শুভেন্দুকে রাজনৈতিকভাবে আটকানোর জন্য এটা একটা পরিকল্পনার অঙ্গ হতে পারে। আর প্রশান্ত কিশোরের কোনও পরিকল্পনা থাকতে পারে এই সিদ্ধান্তের পিছনে।
আরও এক জেলায় বড় ভাঙনের আভাস তৃণমূলে! রাত হওয়া বৈঠক নিয়ে জল্পনা