কংগ্রেসের ব্যর্থতা ঢাকতে বিজেপির চ্যালেঞ্জার তৃণমূল, সৌজন্যে কৌশলী প্রশান্ত কিশোর
কংগ্রেসের ব্যর্থতা ঢাকতে বিজেপির চ্যালেঞ্জার তৃণমূল, সৌজন্যে কৌশলী প্রশান্ত কিশোর
ভারতের যে সব রাজ্যে কংগ্রেস বিজেপির কাছে আন্তসমর্পণ করেছে, সেইসব রাজ্যগুলিকেই বেছে নিয়ে এগোচ্ছে তৃণমূল। প্রশান্ত কিশোরের পরিকল্পনা মতো তৃণমূল সংগঠন বিস্তারে জোর দিচ্ছে সেই সব রাজ্যেই। প্রথমে প্রশান্ত কিশোরের টিম সমীক্ষা চালাচ্ছে। তারপর তৃণমূল নেতারা সংগঠন বিস্তারে নামছে রাজ্যগুলিতে।
তৃণমূলের টার্গেট উত্তর-পূর্বের রাজ্য
মমতা-প্রশান্ত-অভিষেকের সেই পরিকল্পনারই অঙ্গ হল ত্রিপুরা থেকে গোয়া। বিজেপি বারতের উত্তর-পূর্বের ছোট রাজ্যগুলি থেকে কংগ্রেসের নামও নিশান মুছে দিয়েছিল। ২০১৪-য় ক্ষমতায় আসার পর থেকেই তাঁরা পরিকল্পনা কষে কংগ্রেসমুক্ত ভারত গড়ার ডাক দিয়েছিল। সে জন্য সবার প্রথম টার্গেট করেছিল উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলিকে।
উত্তর-পূর্বকে বিজেপিমুক্ত করার লড়াই
তৃণমূলও সেইমতো কংগ্রেসের হারানো রাজ্যগুলিতে সংগঠন বিস্তারে নেমে পড়েছে। তৃণমূল মনে করছে, বিজেপির সঙ্গে লড়াইয়ের দম নেই কংগ্রেসের। তাই তাঁরা মানুষের ভোটে জিতেও আন্তসমর্পণ করেছে বেশ কিছু রাজ্য। তৃণমূল লড়াই করতে জানে। তাই সেই লড়াই করেই ফের উত্তর-পূর্বকে বিজেপিমুক্ত করবে। এমনকী তারা কংগ্রেসের হারানো গোয়ায় সংগঠন বিস্তারেও টার্গেট করেছে।
পিকের ছকে ত্রিপুরা-গোয়ায় তৃণমূল
প্রশান্ত কিশোরের পরিকল্পনায় ২০২৪-এর লোকসভা ভোটের আগে তৃণমূলের প্রাথমিক লক্ষ্য ছোট রাজ্যগুলিতে বিস্তার লাভ করা। বিজেপিশাসিত ছোট ছোট রাজ্যগুলি তাঁরা দখল করতে ঘূঁটি সাজাচ্ছেন তাই। পিকের ছকে দেওয়া অঙ্কে তৃণমূল এগোচ্ছে। ত্রিপুরা-মণিপুর-অসমের পর তৃণমূল নজর দিয়েছে গোয়ার দিকে।
পিকের সঙ্গে মমতা-অভিষেকের বৈঠক
সম্প্রতি নবান্নে গিয়ে প্রশান্ত কিশোর বৈঠক করেন মমতা-অভিষেকের সঙ্গে। রাজনৈতিক মহলের ধারণা ত্রয়ীর মধ্যে ত্রিপুরা-মণিপুর-অসমের পাশাপাশি গোয়া নিয়েও কথা হয়। তৃণমূল সেই সমস্ত রাজ্যই টার্গেট করছে, যে সমস্ত রাজ্যে কংগ্রেস আন্তসমর্পণ করেছে বিজেপির কাছে। প্রশান্ত কিশোর পরিকল্পনা ছকে দেওয়ার পর অভিষেকের নেতৃত্বে ভিনরাজ্যে পদার্পণ করতে শুরু করেছে তৃণমূল বাহিনী।
পিকের রিপোর্টের পরই গোয়ায় পা তৃণমূলের
সম্প্রতি গোয়ায় উড়ে গিয়েছেন তৃণমূলের দুই সাংসদ ডেরেক ও'ব্রায়েন ও প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁরা তৃণমূলের সংগঠন বিস্তারেই বিজেপিশাসিত এই রাজ্য গিয়েছেন বলে রাজনৈতিক মহলের জল্পনা। প্রশান্ত কিশোরের টিম আই প্যাক সমীক্ষা চালিয়ে যাওয়ার পর তৃণমূল সাংসদদের গোয়ায় উড়ে যাওয়ার পিছনে সুপরিকল্পনা রয়েছে বলেই বিশেষজ্ঞদের ধারণা।
তৃণমূল খেলা শুরু করেছে ত্রিপুরায়, এবার গোয়া
একুশের কুরুক্ষেত্রে বাংলায় বিজেপিকে পর্যুদস্ত করে ছেড়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। এই বিপুল জয়ে আত্মবিশ্বাসী তৃণমূল ত্রিপুরাকে প্রথম টার্গেট করে। ত্রিপুরায় বিধানসভা নির্বাচন ২০২৩-এর ফেব্রুয়ারিতে। তার আগে তৃণমূল সংগঠন বিস্তার করতে শুরু করেছে। এ রাজ্যে পুরনো সংগঠন ছিল তৃণমূলে। সেই পুরনো সংগঠনকে ফের জাগিয়ে তুলে তৃণমূল কংগ্রেস এবার বিজেপিকে হারিয়ে নতুন সরকার গড়তে চায়। সেই লক্ষ্যে তৃণমূল খেলা শুরু করেছে ত্রিপুরায়।
প্রশান্ত কিশোরের টিম পথ দেখাচ্ছে তৃণমূলকে
ত্রিপুরাতেও ভোট কৌশলী প্রশান্ত কিশোরের টিম আই প্যাককে পাঠানো হয়েছিল গোপন সমীক্ষার জন্য। তারপর তৃণমূল নেতারা পদার্পণ করেছিল বঙ্গভাষী এই রাজ্যে। এখন কংগ্রেস থেকে তৃণমূলে যোগ দেওয়া সুস্মিতা দেবকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ত্রিপুরার। এবার গোয়াতেও একইভাবে পা রেখেছে তৃণমূল। তার আগে প্রশান্ত কিশোরের টিম সমীক্ষা চালিয়েছিল গোয়ায়।
কংগ্রেস নুইয়ে পড়ায় তৃণমূলের উত্তরণের চেষ্টা
তৃণমূল ত্রিপুরার পাশাপাশি অসম, মণিপুরের মতো উত্তর-পূর্বের ছোট রাজ্যগুলিকেও টার্গেট করেছে। এমনকী মেঘালয়ও তাঁদের নজরে রয়েছে। মেঘালয়ের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী কংগ্রেস নেতা মুকুল সাংমা সম্প্রতি কলকাতায় এসে বৈঠক করে যান অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে। এরপর সেই তালিকায় যুক্ত হয়ে গেল আরও একটি নাম- গোয়া। ত্রিপুরা, মনিপুর বা গোয়া প্রতিটি রাজ্যেই কংগ্রেস তাদের আধিপত্য ধরে রাখতে পারেনি। গোয়া ও মনিপুরে বিধানসভা নির্বাচনে জিতেও তারা বিজেপির কছে আন্তসমর্পণ করেছে। আর ত্রিপুরাতেও কংগ্রেসের পুরো পরিষদীয় টিম যোগ দিয়েছিল বিজেপিতে। এমনই সব রাজ্যকে টার্গেট করে এগোচ্ছে তৃণমূল।
বিজেপির চ্যালেঞ্জার হয়ে উঠতে চাইছে তৃণমূল
২০১৪ সালের পর থেকে বিজেপির বিরুদ্ধে সঙ্ঘবদ্ধ লড়াই করতে পারেনি কংগ্রেস। মানুষের ভোটে জিতেও তারা দলকে ধরে রাখতে পারেনি। মণিপুর ও গোয়ার মতো অনেক রাজ্যেই কংগ্রেস বেলাইন হয়ে পড়েছে বিজেপির চাপে। শুধু ছোট রাজ্য ন, মধ্যপ্রদেশ, কর্ণাটকের মতো বড় রাজ্যের তাদের ক্ষমতা হারাতে হয়েছে। রাজ্যে রাজ্যে একক বৃহত্তম দল হয়েও কংগ্রেস সরকার গড়তে পারেনি। সংখ্যগরিষ্ঠতা পেয়েও হারাতে হয়েছে। কংগ্রেসের এই দুর্বলতা দিয়েই বিজেপির চ্যালেঞ্জার হয়ে উঠতে চাইছে তৃণমূল।