একদিনের কর্মবিরতিতে আলু ব্যবসায়ীরা, মুখ্যমন্ত্রীর ভুল নীতির জেরে বাড়তে পারে আলুর দাম
ভিন রাজ্যে আলু রফতানি বন্ধ করতে আগেই হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই অনুযায়ী মঙ্গলবার রাত থেকেই আলু রফতানি বন্ধ করতে শুরু হয় পুলিশের কড়া টহলদারি। পুরুলিয়া ও পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার ঝাড়খন্ড ও ওড়িশা সীমানায় আলু বোঝাই লরি আটক করে ফেরত পাঠানো হয়। ইতিমধ্যে ১১৯টি আলু বোঝাই ট্রাক আটক করেছে পুলিশ। আর এর ফলে সমস্যায় পড়েছে বলে দাবি আলু ব্যবসায়ী সংগঠনগুলি। আর এরই জেরে প্রতিবাদের ভাষা হিসাবে একদিনের কর্মবিরতির পথে হাঁটছে আলু ব্যবসায়ী সংগঠনগুলি।
আরও পড়ুন : দাম নিয়ন্ত্রণের নামে আলুর রফতানি বন্ধ করতে তৎপর রাজ্যপুলিশ, ক্ষেপে লাল ওড়িশা, ঝাড়খণ্ড
হুগলি, বর্ধমান বিভিন্ন এলাকার আলু ব্যবসায়ীদের কথায় একটি ট্রাকে ৩ থেকে সাড়ে ৩ লক্ষ টাকার আলু থাকে। ৫০ কেজি ওজনের প্রায় ৩১০-৪১০ বস্তা আলু থাকে ওই ট্রাকগুলিতে। আলুবোঝাই এই ট্রাকগুলি মাঝপথে আটকে দিয়ে কলকাতার মিলন মেলায় পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। যেখানে সরকার ১৪ টাকা কোজি দরে আলু বিক্রি করছে। অনেক গাড়ি আবার কোথাও না পাঠিয়ে থানার সামনে দাঁড় করিয়ে রাখা হচ্ছে। ফলে প্রচুর আলু নষ্ট হচ্ছে। প্রথমে ব্যবসায়ীদের আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল, মিলন মেলায় আলু পৌছলে বস্তাপিছু ৬৫০ টাকা দেওয়া হবে। কিন্তু আলু পৌছনের পর তাঁদের জানানো হয় বস্তা পিছু ৬০০ টাকা দেওয়ার নির্দেশ রয়েছে নবান্ন থেকে। ব্যবসায়ীদের একাংশের কথায়, ৮১০ টাকা দিয়ে আমরা এক বস্তা আলু কিনি। অন্ধ্রপ্রদেশ, তেলেঙ্গানা, আসামে সেই আলুর বস্তাই আমরা ৮২০ টাকা দরে বিক্রি করি। আমরা যদি আলুর বস্তা না পাঠাই তাহলে তাদের থেকে টাকা পাব না। ফলে আমরা কৃষকদেরও টাকা দিতে পারব না। সবাই আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। পুজোর আগে এই ধরণের সমস্যা কাঙ্খিত নয় বলেই মনে করছেন তারা।
'অনেক সময় আলুর ট্রাক আটকে থানার সামনে দাঁড় করিয়ে রাখা হচ্ছে,ফলে নষ্ট হচ্ছে আলু'
বিশেষজ্ঞরা যে হিসাব দিচ্ছেন তাও খুব একটা লাভের মুখ দেখাচ্ছে না। এবছর বাংলায় আলুর উৎপাদন হয়েছে ৯৫ লক্ষ টন (সরকারের হিসাবে যা ১ কোটি টন)। রাজ্যে ৪৩০টি আলু রাখার হিমঘর রয়েছে। যেখানে মাত্র ৬০ লক্ষ আলু মজুত করা যাবে। বাকি আলু সময়ের মধ্য বিক্রি করা না হলে নষ্ট হয়ে যাবে। এই মুহূর্তে রাজ্যের হিমঘরে ৩১ লক্ষ টন মেট্রিকটন মজুত রয়েছে।
এদিকে আলুর বিষয়ে যেহেতু এককভাবে বাংলার উপর নির্ভর ওড়িশা, তাই ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়ক মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে এবিষয়ে চিন্তাভাবনা করার জন্য অনুরোধ করেছিলেন। বাংলার আলুর ট্রাক ওড়িশা সীমান্তে আটকে দেওয়ায় বাংলার প্রয়োজনীয় পেঁয়াজ, ডিম, মাছের ট্রাক আটকে দিয়েছিল বিজেডি সমর্থকরা। মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলার পর ওড়িশা শতাধিক মাছ ও ডিম বোঝাই ট্রাক পশ্চিমবঙ্গ ঢোকার জন্য ছেড়ে দিলেও ১৭২টি আলু বোঝাই লরির মধ্যে মাত্র ৫ টি লরিকে ওড়িশা পাঠানোর অনুমতি দিয়েছে বাংলা।
বিজেপির রাজ্য সভাপতি রাহুল সিনহা মুখ্যমন্ত্রীর এই রক্ষণশীল আলু নীতিতে আদতে সমস্য়ায় পড়বেন সাধারণ মানুষই। অন্য রাজ্য আলুর জন্য আমাদের রাজ্যের উপর নির্ভরশীল। তেমনই অন্যান্য সবজি, ডিম, পেঁয়াজ, মাছের জন্য আমরাও অন্য রাজ্যের উপর নির্ভরশীল। আলু না পাঠানোয় তারাও যদি এ রাজ্যের প্রয়োজনীয় সামগ্রী পাঠাতে অস্বীকার করেন তখন কোন নীতিতে মুখ্যমন্ত্রী পরিস্থিতি সামাল দেবেন সে প্রশ্ন তোলেন রাহুল সিনহা।