ভাশুরপো বিজেপি কর্মী, বিছুটি ঘষে, তালু চিরে বধূকে শায়েস্তা পুলিশের
সিউড়ি, ১৯ জানুয়ারি: ভাশুরপো বোমাবাজির ঘটনায় অভিযুক্ত। কিন্তু তাঁকে না পেয়ে নিরীহ বধূকে তুলে নিয়ে গিয়ে বর্বর অত্যাচার চালাল পুলিশ। শ্লীলতাহানি করার পাশাপাশি সারা গায়ে বিছুটি পাতা ঘষে দেওয়া হল। লাঠি দিয়ে মেরে ভেঙে দেওয়া হল হাতের আঙুল। তার পর ব্লেড দিয়ে চিরে দেওয়া হল তালু। আফগানিস্তান নয়, এমন তালিবানি ঘটনা ঘটেছে বর্ধমানের বুদবুদ থানার অন্তর্গত কলমডাঙা গ্রামে।
বীরভূমের পাড়ুই থানার অন্তর্গত সাত্তোর গ্রামে ওই বধূর শ্বশুরবাড়ি। ২২ বছরের বধূর ভাশুরপো শেখ মিঠুন একজন বিজেপি কর্মী। অভিযোগ, তিনি গ্রামে কিছুদিন আগে বোমাবাজি করেন। সেই থেকে তাঁকে খুঁজছিল পুলিশ। প্রসঙ্গত, এই সাত্তোর গ্রাম এখন বিজেপি-অধ্যুষিত। সেই রাগে প্রায়ই গ্রামে পুলিশ ও তৃণমূল কংগ্রেসের লোকজন এসে তাণ্ডব চালায়।
শনিবার দুপুরে শেখ মিঠুনের খোঁজে প্রথমে সাত্তোর গ্রামে যায় বীরভূম জেলা পুলিশের একটি দল। সেখানে শোনে অভিযুক্ত যুবক তাঁর কাকীমার সঙ্গে বর্ধমান জেলার বুদবুদের কলমডাঙা গ্রামে গিয়েছে। প্রসঙ্গত, কলমডাঙা গ্রামে বধূটির বাপের বাড়ি। পুলিশের ওই দলের নেতৃত্বে ছিলেন কার্তিকমোহন ঘোষ নামে এক অফিসার। বিজেপির অভিযোগ কার্তিকমোহন ঘোষ পুলিশ অফিসার হলেও আসলে তৃণমূলের ক্যাডারের কাজ করছেন।
শনিবার সন্ধেয় কার্তিকমোহনবাবুর নেতৃত্বে ওই দলটি পৌঁছয় কলমডাঙা গ্রামে। সঙ্গে ছিল সাগর ঘোষ খুনে অভিযুক্ত তৃণমূল নেতা-কর্মীরা। তারাই বধূকে চিনিয়ে দেয়। কিন্তু শেখ মিঠুনকে সেখানে পাওয়া যায়নি। এর পর পুলিশের রাগ গিয়ে পড়ে ওই নিরীহ গৃহবধূর ওপর। তাঁকে টানতে টানতে পাশের একটি বাগানে নিয়ে যাওয়া হয়। শাড়ি খুলে দেওয়া বলে অভিযোগ। লাঠি দিয়ে মেরে দু'হাতের আঙুল ভেঙে দেয় পুলিশ। যোগ্য সঙ্গত দেয় তৃণমূলের লোকজন। ব্লেড দিয়ে ওই বধূর দুই হাতের তালু, পিঠ চিরে দেওয়া হয়। অত্যাচারে তিনি জ্ঞান হারান।
অভিযোগ, মুখে জল ছিটিয়ে তাঁর জ্ঞান ফেরানো হয়। এর পর চারজন পুলিশকর্মী তাঁর হাত-পা চেপে ধরে। আর একজন পুলিশ অফিসার ওই মহিলার সারা গায়ে বিছুটি পাতা ঘষে দেয়। আধমরা অবস্থায় এর পর তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় ইলামবাজার থানায়। সেখান থেকে পরে আত্মীয়রা গিয়ে কাকুতি-মিনতি করে তাঁকে ছাড়িয়ে আনেন। আশঙ্কাজনক অবস্থায় ওই বধূ এখন হাসপাতালে ভর্তি।
ঘটনার জেরে আলোড়ন পড়ে গিয়েছে রাজ্য জুড়ে। অভিযুক্ত পুলিশ অফিসার কার্তিকমোহন ঘোষকে 'ক্লোজ' করা হয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত শুরু করেছে বীরভূম জেলা পুলিশ। অন্যদিকে, এই ইস্যুতে কলকাতা হাই কোর্টে জনস্বার্থ মামলা রুজু করেছেন আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য। প্রধান বিচারপতি মঞ্জুলা চেল্লুরের এজলাসে মামলাটি রুজু করা হয়।
বিজেপি রাজ্য সভাপতি রাহুল সিনহা বলেন, "এই ঘটনা বর্বরোচিত। আমাদের নিন্দার ভাষা নেই। সোমবার রাজ্যপালের কাছে গিয়ে বিষয়টি জানাবে বিজেপি। আমাদের প্রতিনিধিরা ওই মহিলার সঙ্গে কথা বলতে বীরভূম যাচ্ছে।"
এ দিনই বীরভূমের সাত্তোর গ্রামে ওই বধূর পরিবারের সঙ্গে গিয়ে দেখা করেন বিজেপি নেতারা। বিধায়ক শমীক ভট্টাচার্য বলেন, "নির্যাতিতাকে সব রকম সহায়তা দেওয়া হবে দলের তরফে।"
স্থানীয় বিজেপি নেতা নিমাই দাস বলেন, "২০ জানুয়ারি অমিত শাহের সভা রয়েছে বর্ধমানে। সেটা বানচাল করতে পুলিশ আর তৃণমূল একসঙ্গে চেষ্টা চালাচ্ছে।"
যদিও এই ঘটনাকে আমল দিচ্ছে না তৃণমূল। দলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, "ওরা সুস্থভাবে আমাদের মোকাবিলা করতে না পেরে এখন হিংসা আর কুৎসার আশ্রয় নিয়েছে।"
তবে এই ঘটনাকে সরাসরি উড়িয়ে দেননি পুলিশের বড়কর্তারা। বীরভূমের পুলিশ সুপার অলোক রাজোরিয়া বলেন, "আমি মিডিয়ার কাছে সব শুনেছি। অতিরিক্ত পুলিশ সুপারকে তদন্ত করতে বলেছি। কেউ দোষী প্রমাণিত হলে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেব। আপাতত অভিযুক্ত অফিসারকে ক্লোজ করার নির্দেশ দিয়েছি।" বর্ধমানের পুলিশ সুপার সৈয়দ মহম্মদ হোসেন মির্জা ঘটনায় ক্ষোভ ব্যক্ত করেছেন। তিনি বলেন, "কলমডাঙা গ্রাম বুদবুদ থানার অন্তর্গত। স্থানীয় থানাকে না জানিয়ে বীরভূম পুলিশ সেখানে গিয়েছিল। আমাকেও আগাম কিছু জানানো হয়নি।"