সূত্র কাপড়ের টুকরো! ৪৮ ঘণ্টায় হাওড়ায় ব্যাঙ্ক-কর্মী খুনের কিনারা
৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই হাওড়ার ডোমজুড়ে বেসরকারি ব্যাঙ্ককর্মীকে নৃশংস খুনের কিনারা করে ফেলল পুলিশ। গ্রেফতার করা হয়েছে ব্যাঙ্কেরই এক গ্রাহককে। বকেয়া টাকা নিয়ে গ্রাহকের সঙ্গে বচসা হয় ব্যাঙ্ককর্মীর।
৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই হাওড়ার ডোমজুড়ে বেসরকারি ব্যাঙ্ককর্মীকে নৃশংস খুনের কিনারা করে ফেলল পুলিশ। গ্রেফতার করা হয়েছে ব্যাঙ্কেরই এক গ্রাহককে। বকেয়া টাকা নিয়ে গ্রাহকের সঙ্গে বচসা হয় ব্যাঙ্ককর্মীর। সেই সময় মাথার আঘাত করে দেহ টুকরো টুকরো করা হয়। পুলিশের জেরায় এমনটাই জানিয়েছে অভিযুক্ত গ্রাহক।
বুধবার সকালে ঋণের টাকা আদায়ে বেরিয়েছিলেন নদিয়ার চাকদার বাসিন্দা, বেসরকারি ব্যাঙ্কের কর্মী পার্থ চক্রবর্তী। বেশ কয়েকবছর ধরে হাওড়ার সলপের বেসরকারি ব্যাঙ্কে কাজ করতেন তিনি। বেশ কয়েক জায়গায় টাকা আদায়ের পর তিনি যান শেখ সামসুদ্দিনের বাড়িতে। পোশাক ব্যবসায়ী শেখ সামসুদ্দিন, স্ত্রীর নামে দেড় লক্ষ টাকা ঋণ নিয়ে, সেই টাকা মেটাচ্ছিলেন না বলে অভিযোগ। এনিয়ে বুধবার বাড়িতে যাওয়ার পর বকেয়া থাকা টাকা নিয়ে সামসুদ্দিনের সঙ্গে বচসা হয় পার্থর। পুলিশের দাবি, শেখ সামসুদ্দিন জেরায় জানিয়েছে, সেই সময় পার্থর মাথায় খিল দিয়ে আঘাত করে সে। পার্থ মেঝেতে পড়ে অজ্ঞান হয়ে গেলে, তাঁকে চপার দিয়ে টুকরো টুকরো করে কাটা হয়। এরপর মাধা, দুই হাত, দুই পা একটি বস্তার ভরা হয়। অপর দিকে দেহটি ভরা হয় অপর একটি বস্তায়। আর বস্তা থেকে যাতে রক্ত না বেরোয়, তার জন্য টুকরো কাপড় গুজে দেয় সামসুদ্দিন। সেই টুকরো কাপড়ের সূত্রই ধরিয়ে দিল তাকে।
পুলিশের দাবি, জেরায় সামসুদ্দিন জানিয়েছে, পার্থর দেহ টুকরো টুকরো করে দুটি বস্তায় ভরার পর, বাইকের পিছনে চাপিয়ে, অঙ্কুরহাটির দিকে নিয়ে যায় সে। সেখানে জাতীয় সড়কের ধারে হাত-পা থাকা বস্তাটি ফেলে। এরপর অপর বস্তাটি নিয়ে রাঘবপুরের দিকে যায় সে। কিন্তু অসুস্থ হয়ে পড়ায় বাইক থেকে পড়ে যায়। সেই সময় বস্তাটিও পড়ে যায়। বস্তা আর বাইকে না তুলে কোনওর করমে ঘটনাস্থুল ছাড়ে সে।
টুকরো কাপড় ও ঋণ নেওয়ার সূত্র ধরে পুলিশ শুক্রবার প্রথমে সামসুদ্দিনের বাড়িতেও যায়। কিন্তু সে কোনওরকমের সন্দেহজনক আচরণ করেনি। পুলিশেরও কোনও সন্দেহ হয়নি। এরপর বিকেলের দিকে সামসুদ্দিনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ চলে। সেখানেই সামসুদ্দিন খুনের কথা স্বীকার করে। পরে সামসুদ্দিনকে নিয়ে যাওয়া হয় অঙ্কুরহাটিতে, জাতীয় সড়কের ধারে। সেখান থেকে কাটা হাত-পা উদ্ধার করা হয়। পুলিশ এদিন সামসুদ্দিনের বাড়ি থেকে ব্যাঙ্কের তিনলক্ষাধিক টাকাও উদ্ধার করেছে বলে জানিয়েছে।
বুধবার পার্থ চক্রবর্তী ব্যাঙ্কের টাকা সংগ্রহে বেরিয়েছিলেন। কিন্তু বিকেলে ব্যাঙ্কে ফিরে না যাওয়ার এবং ফোনে না পাওয়ায় থানায় ডায়েরি করা হয়। এরপরেই রাস্তার ধারের ঝোপ থেকে বস্তাবন্দি দেহ দেখে সন্দেহ হওয়ায় পুলিশ সেটিকে খুলে দেখে। বস্তার মধ্যে মুন্ড, হাত-পা ছিন্ন দেহ উদ্ধার করা হয়। দেহের একাধিক জায়গায় ক্ষতও ছিল।
ব্যাঙ্কের তরফে জানানো হয়েছিল, এদিন পার্থর কাছে তিনলক্ষাধিক টাকা ছিল।
ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ ও পুলিশের তরফে চাকদায় পার্থ চক্রবর্তীর বাড়িতে খবর পাঠানো হয়। গভীর রাতে গিয়ে পরিবারের সদস্যরা দেহ শনাক্ত করেন। জানা যায়, দেহে তিলের দাগ ছিল। দেহটি কার, তা চিহ্নিত যাতে না করা যায়, সেইজন্য খুঁচিয়ে সেই তিলটিও তুলে দেওয়া হয়েছিল।
সামসুদ্দিনের দাবি খুনে সে ছাড়া আর কেউ ছিল না। তবুও পুলিশ অভিযুক্তের এই দাবি খতিয়ে দেখছে।
ধৃত শেখ সামসুদ্দিনকে শনিবার আদালতে তোলা হবে।