হাওড়ায় ব্যাঙ্ককর্মীকে নৃশংস হত্যা! অভিযুক্ত ছেলে-বাবা ছাড়াও গ্রেফতার আরও ৪
হাওড়ার ডোমজুড়ে বেসরকারি ব্যাঙ্ককর্মীর নৃশংস হত্যার ঘটনায় গ্রেফতার করা হল আরও চারজনকে। চারজনই মূল অভিযুক্ত শেখ সামসুদ্দিনের পরিবারের সদস্য। স্ত্রী, মা, ভাই ও বৌদি।
হাওড়ার ডোমজুড়ে বেসরকারি ব্যাঙ্ককর্মীর নৃশংস হত্যার ঘটনায় গ্রেফতার করা হল আরও চারজনকে। চারজনই মূল অভিযুক্ত শেখ সামসুদ্দিনের পরিবারের সদস্য। স্ত্রী, মা, ভাই ও বৌদি। খুনের অভিযোগে প্রথমেই গ্রেফতার করা হয়েছিল শেখ সামসুদ্দিনকে। পরে তার বাবাকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ।
খুনের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই হাওড়ার ডোমজুড়ে বেসরকারি ব্যাঙ্ককর্মীকে নৃশংস খুনের কিনারা করে ফেলে পুলিশ। গ্রেফতার করা হয় ব্যাঙ্কেরই এক গ্রাহককে। বকেয়া টাকা নিয়ে গ্রাহকের সঙ্গে বচসা হয়েছিল ব্যাঙ্ককর্মীর। সেই সময় মাথার আঘাত করে দেহ টুকরো টুকরো করা হয়। পুলিশের দাবি, জেরায় এমনটাই জানিয়েছে অভিযুক্ত গ্রাহক। এরপর অভিযুক্তকে জিজ্ঞাসাবাদের পর খুনে সহযোগিতার অভিযোগে সামসুদ্দিনের বাবাকে গ্রেফতার করা হয়।
বুধবার রাতে গ্রেফতার করা হয় স্ত্রী, মা, ভাই ও বৌদিকে। তাদের বিরুদ্ধে তথ্যপ্রমাণ লোপাট ও খুনে সহযোগিতার অভিযোগ আনা হয়েছে। ঘর থেকে রক্ত পরিষ্কারে তারা সাহায্য করেছিলেন বলে অভিযোগ।
এর আগে খুনে ব্যবহৃত কুড়ুল ও অন্য অস্ত্র উদ্ধার করেছিল পুলিশ। পরে বাড়ির সেপটিক ট্যাঙ্ক থেকে মৃতের ব্যাগ, জরুরি কাগজপত্রও উদ্ধার করে পুলিশ।
তদন্তকারীদের অভিযোগ, খুনের পর রক্ত পরিষ্কার ও ঘরে ফিনাইল দিয়ে পরিষ্কারে সহযোগিতা করেছিলেন ধৃতরা।
২৯ অগাস্ট বুধবার বুধবার সকালে ঋণের টাকা আদায়ে বেরিয়েছিলেন নদিয়ার চাকদার বাসিন্দা, বেসরকারি ব্যাঙ্কের কর্মী পার্থ চক্রবর্তী। বেশ কয়েকবছর ধরে হাওড়ার সলপের বেসরকারি ব্যাঙ্কে কাজ করতেন তিনি। বেশ কয়েক জায়গায় টাকা আদায়ের পর তিনি যান শেখ সামসুদ্দিনের বাড়িতে। পোশাক ব্যবসায়ী শেখ সামসুদ্দিন, স্ত্রীর নামে দেড় লক্ষ টাকা ঋণ নিয়ে, সেই টাকা মেটাচ্ছিলেন না বলে অভিযোগ। এনিয়ে বুধবার বাড়িতে যাওয়ার পর বকেয়া থাকা টাকা নিয়ে সামসুদ্দিনের সঙ্গে বচসা হয় পার্থর। পুলিশের দাবি, শেখ সামসুদ্দিন জেরায় জানিয়েছে, সেই সময় পার্থর মাথায় খিল দিয়ে আঘাত করে সে। পার্থ মেঝেতে পড়ে অজ্ঞান হয়ে গেলে, তাঁকে চপার দিয়ে টুকরো টুকরো করে কাটা হয়। এরপর মাধা, দুই হাত, দুই পা একটি বস্তার ভরা হয়। অপর দিকে দেহটি ভরা হয় অপর একটি বস্তায়। আর বস্তা থেকে যাতে রক্ত না বেরোয়, তার জন্য টুকরো কাপড় গুজে দেয় সামসুদ্দিন। সেই টুকরো কাপড়ের সূত্রই ধরিয়ে দেয় তাকে।
পুলিশের দাবি, জেরায় সামসুদ্দিন জানিয়েছে, পার্থর দেহ টুকরো টুকরো করে দুটি বস্তায় ভরার পর, বাইকের পিছনে চাপিয়ে, অঙ্কুরহাটির দিকে নিয়ে যায় সে। সেই কাজে তাকে সাহায্য করেছিল বাবা। সেখানে জাতীয় সড়কের ধারে হাত-পা থাকা বস্তাটি ফেলে। এরপর অপর বস্তাটি নিয়ে রাঘবপুরের দিকে যায় সে। কিন্তু অসুস্থ হয়ে পড়ায় বাইক থেকে পড়ে যায়। সেই সময় বস্তাটিও পড়ে যায়। বস্তা আর বাইকে না তুলে কোনওর করমে ঘটনাস্থল ছাড়ে সে।
টুকরো কাপড় ও ঋণ নেওয়ার সূত্র ধরে পুলিশ শুক্রবার প্রথমে সামসুদ্দিনের বাড়িতেও যায়। কিন্তু সে কোনওরকমের সন্দেহজনক আচরণ করেনি। পুলিশেরও কোনও সন্দেহ হয়নি। এরপর বিকেলের দিকে সামসুদ্দিনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ চলে। সেখানেই সামসুদ্দিন খুনের কথা স্বীকার করে। পরে সামসুদ্দিনকে নিয়ে যাওয়া হয় অঙ্কুরহাটিতে, জাতীয় সড়কের ধারে। সেখান থেকে কাটা হাত-পা উদ্ধার করা হয়। পুলিশ এদিন সামসুদ্দিনের বাড়ি থেকে ব্যাঙ্কের তিনলক্ষাধিক টাকাও উদ্ধার করেছে বলে জানিয়েছে।