‘যেও না নবমী নিশি’- বর্ষাসুরকে উপেক্ষা করেই দর্শনার্থীদের কাতর প্রার্থনা
এদিনই তো শেষ রজনী। বিদায়ঘন আবহে মাকে দর্শনে কোনও বাধাই বাধা নয়। বৃষ্টি উপেক্ষা করেই মানুষ ছাতা হাতে নেমে পড়েছেন দুর্গাদর্শনে।
'যেও না নবমী নিশি, আজি লয়ে তারাদলে।' এটাই আপামর বাঙালির মনের কথা। নবমীর দিন এলেই বাঙালি মন কেঁদে ওঠে। আনন্দের মাঝেও বিষাদের বার্তা দিয়ে যায় নবমী নিশি। সারা বছর ধরে যে উৎসবের টানে সবাই অপেক্ষা করে থাকে, তার বিদায় ঘণ্টা বেজে যায় এই নবমী তিথিতেই। তারপরই বিজয়া দশমী। মায়ের আবার মর্ত্যধাম ছেড়ে ফিরে যাওয়া কৈলাসে।
শুক্রবার সকাল থেকেই আমচকাই আকাশ কালো করে মেঘের ঘনঘটা। তবু বর্ষাসুরকে হারিয়ে সকাল থেকেই মণ্ডপে মণ্ডপে উপচে পড়া ভিড়। এদিনই তো শেষ রজনী। বিদায়ঘন আবহে মাকে দর্শনে কোনও বাধাই বাধা নয়। বৃষ্টি উপেক্ষা করেই মানুষ ছাতা হাতে নেমে পড়েছেন দুর্গাদর্শনে। রাত পোহালেই বিজয়া দশমী। জয়ের আনন্দের সঙ্গে যে মাকে বিদায় জানানোর সময়ও উপস্থিত হয়ে যাবে।
আশ্বিনের শারদপ্রাতে পিতৃপক্ষের অবসানে শুরু হয়েছিল দেবী পক্ষ। মহালয়ার পর দেবীপক্ষের সেই সূচনা লগ্ন থেকেই পুজোর গন্ধে মাতোয়ারা হয়ে উঠেছিল ধরণীর আকাশ-বাতাস। ভুবন মেতে উঠেছিল উৎসবের আনন্দে। আলোর বেণু বেজে উঠেছিল মণ্ডপে মণ্ডপে। আদতে পাঁচদিন হলেও বাঙালি বড় উৎসবের সূচনা তো সেই মহালয়ার পর্ব থেকেই। আর নবমীর পূণ্য তিথিতে অশুভ শক্তির বিনাশ ঘটিয়ে ধরণীতে শুভ শক্তির প্রকাশ ঘটান দুর্গতিনাশিনী দেবী দুর্গা।
এই তিথি শুরুই হয় সন্ধিপুজো দিয়ে। অষ্টমীর শেষ ২৪ মিনিট আর নবমীর প্রথম ২৪ মিনিট নিয়েই ৪৮ মিনিটের সন্ধিপুজো। দেবীকে এখানে চামুণ্ডারূপে পুজো করা হয়। এই লগ্নেই দেবী অশুভ শক্তির বিনাশ ঘটান। মহিষাসুরকে এই লগ্নেই বধ করেছিলেন মহিষমর্দিনী দেবী দুর্গা। আর অকাল বোধনের পর মায়ের আশীর্বাদ নিয়ে এই সময়েই রাবণ বধ করেছিলেন রামচন্দ্র।
তাই নবমী তিথির মাহাত্ম্য দুর্গাপুজোয় এক বিশেষ রূপেই প্রতিভাত। অধিকাংশ মণ্ডপেই এদিন কুমারী পুজো হয়। তারপর হোমযজ্ঞের পরেই ইতি ঘটে নবমীবিহিত পুজোর। এবং সূচিত হয় মায়ের বিদায় বার্তা। পরদিন দশমী বিহিত পুজোর পরই বিসর্জনের বাদ্যি বেজে ওঠে। মণ্ডপে মণ্ডপে বিষাদের সুর। যতই বাঙালি আর্তি জানাক যেও না নবমী নিশি, তা যাবেই। তবু মন বলে ওঠে বারবার- 'ওরে নবমী নিশি, না হইও রে অবসান।'