রাজ্যপালের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর এরকম সম্পর্ক আগেও ছিল কি, জেনে নিন
রাজ্যে কংগ্রেস বিরোধী সরকার আসার পর থেকে বারবার রাজ্যপালের সঙ্গে বিরোধ বেধেছে যুক্তফ্রন্ট কিংবা বাম সরকারের। কিন্তু মঙ্গলবারের মতো এই রকম দ্বন্দ্ব আগে কখনও দেখেননি বলেই জানাচ্ছেন প্রবীণ রাজনীতিকরা
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠীর যে দ্বন্দ্ব, বলা যেতে পারে বাক যুদ্ধ মঙ্গলবার রাজ্যবাসী থেকে দেশবাসী প্রত্যক্ষ করেছে সেরকম বোধহয় এর আগে রাজ্যে কেন, দেশেও দেখা যায়নি। এমন কথা মনে করতে পারছেন না পুরনো দিনের রাজনীতিকরাও।
একটু পিছিয়ে গেলে সকলেরই মনে থাকতে পারে, বাম জমানার শেষ দিকে রাজ্যের রাজ্যপাল ছিলেন গোপালকৃষ্ণ গান্ধী। তিনি বামেদের পছন্দের মানুষই ছিলেন। কিন্তু বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য সরকারের সঙ্গে বিরোধ বেধেছিল গোপালকৃষ্ণ গান্ধীর। সেই সময়ে বিদ্যুৎ সংকটে ভোগা রাজ্যবাসীর সঙ্গে সমস্যা ভাগ করে নিয়ে রাজভবন নিষ্প্রদীপ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তিনি। এই সিদ্ধান্তের জেরে সেই সময় প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু বলেছিলেন, রাজভবনে আলো নিভিয়ে রাখলে কি বিদ্যুৎ সমস্যা মিটে যাবে।
সবচেয়ে বড় ঘটনাটি ঘটেছিল ২০০৭-এর ১৪ মার্চ নন্দীগ্রামে পুলিশের গুলি চালানোর ঘটনার পর। তৎকালীন রাজ্যপাল গোপালকৃষ্ণ গান্ধী বলেছিলেন, হাড় হিম করা সন্ত্রাস। বিষয়টি নিয়ে ঘটনার দিনই রাজভবন থেকে বিবৃতি জারি করা হয়েছিল। রাজ্যপাল এরকম ভাবে প্রকাশ্যে বিবৃতি দিতে পারেন কিনা তা নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছিল।
বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী, তথা তৎকালীন বিরোধী নেত্রী সেই বিবৃতিকেই হাতিয়ার করেছিলেন। তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের দফতর থেকে কোনও বিবৃতি জারি করা না হলেও, সিপিএমের তরফ থেকে শ্যামল চক্রবর্তী, বিনয় কোঙাররা রাজ্যপালকে তৃণমূলের ঝান্ডা ধরার পরামর্শ দিয়েছিলেন। একই সঙ্গে হয়ত দ্বিধা নিয়েও রাজ্যপালের মধ্যস্থতায় সিঙ্গুর নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে আলোচনায় বসেছিলেন।
পুরনো রাজনীতিকরা জানাচ্ছেন, ১৯৬৭ সালের কথা। সেই সময় রাজ্যপাল ধর্মবীর যুক্তফ্রন্ট সরকারকে ৩ দিনের মধ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণ করতে বলে চিঠি দিয়েছিলেন। বিধানসভার অধিবেশন ডাকা আছে বলে পাল্টা জবাব দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী অজয় মুখোপাধ্যায়। এর প্রেক্ষিতে রাজ্যপাল সরকার বরখাস্তের চিঠি পাঠিয়েছিলেন কেন্দ্রের কাছে। আর তা নিয়েই দুপক্ষের বিরোধ উঠেছিল চরমে।
তবে বর্তমানের মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। বাম জমানা শুরু থেকেও রাজ্যপালদের সঙ্গে সরকার ও দলের বিরোধ বেধেছে বারবার। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে জ্যোতি বসু মুখ খোলেননি। প্রয়াত প্রাক্তন সিপিএম রাজ্য সম্পাদক রাজ্যপাল বিডি পান্ডেকে "বাংলা দমন" পান্ডে বলে কটাক্ষ করেছিলেন। ভৈরব দত্ত পাণ্ডের উত্তরসূরি অনন্তপ্রসাদ শর্মা কিংবা টিভি রাজেশ্বরের সঙ্গে বিতণ্ডায় জড়িয়েছিল বাম সরকার। রাজ্যপালদের ভূমিকার প্রতিবাদে মিছিলও করেছিল শাসকপক্ষ। আর কেন্দ্র রাজ্য সম্পর্ক নিয়ে গঠিত সারকারিয়া কমিশনের কাছে বামেরা বলেছিল, রাজ্যপাল পদটি রাখার প্রয়োজনই নেই।