ঠেলার নাম বাবাজি? ২২ দিন পর হঠাৎই যাদবপুরের নিগৃহীতার বাড়িতে পার্থ, সঙ্গী শঙ্কুদেব
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে যৌন নিগ্রহের শিকার হওয়া সেই ছাত্রীর বাড়িতে রবিবার দুপুরে হঠাৎই গিয়ে হাজির হলেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। সঙ্গী টিএমসিপি (তৃণমূল ছাত্র পরিষদ)-র রাজ্য সভাপতি শঙ্কদেব পণ্ডা। একান্তে কথা বলে বেরিয়ে এসে পার্থবাবু তড়িঘড়ি উঠে পড়লেন গাড়িতে। সংবাদমাধ্যম নানা প্রশ্ন করলেও একটি শব্দও খরচ করেননি তিনি। পরে জানা যায়, সাক্ষাতের পর একটি 'নিরপেক্ষ' তদন্ত কমিটি গড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য সরকার।
আরও
পড়ুন:
সিপিএম,
বিজেপি
নয়,
তৃণমূলের
'দুশমন'
এখন
যাদবপুরের
পড়ুয়ারা
আরও
পড়ুন:
তোমাদের
আন্দোলনে
নৈতিক
সমর্থন
আছে,
ব্যবস্থা
নেব,
পড়ুয়াদের
বললেন
রাজ্যপাল
আরও
পড়ুন:
যাদবপুর-কাণ্ডের
ঢেউ
মুম্বই,
দিল্লি,
ব্যাঙ্গালোরে,
পথে
নামলেন
পড়ুয়ারা
২৮ অগস্ট যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা বিভাগের এক ছাত্রীকে ছেলেদের হস্টেলে টেনে নিয়ে গিয়ে যৌন নিগ্রহ করা হয়। দ্বিতীয় বর্ষের ওই ছাত্রীকে মারধরও করা হয়। পয়লা সেপ্টেম্বর নিগৃহীতার বাবা উপাচার্য অভিজিৎ চক্রবর্তীর কাছে অভিযোগ জানাতে যান। কিন্তু উপাচার্য বলেন, এখন সময় নেই। ৫ সেপ্টেম্বেরর পর এসে দেখা করবেন। ইতিমধ্যে ঘটনার তদন্তে একটি কমিটি গড়া হলেও তারা নিরপেক্ষ তদন্ত করছে না বলে অভিযোগ তোলেন ছাত্রছাত্রীরা। তাঁরা আন্দোলন শুরু করেন। এই আন্দোলনকারীদের ওপরই গত মঙ্গলবার রাতে বর্বর হামলা চালায় পুলিশ। তার পরই উত্তাল হয়ে ওঠে রাজ্য। গতকাল যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা যে মহামিছিল সংগঠিত করেন, তাতে ভিড় উপচে পড়ে। ২০০৭ সালে নন্দীগ্রামে পুলিশের গুলি চালনার প্রতিবাদে যে স্বতঃস্ফূর্ত মিছিল হয়েছিল, তার পর আবার সাত বছর পর এমনভাবে জেগে উঠল কলকাতা।
ওয়াকিবহাল মহলের মতে, শিক্ষামন্ত্রী হয়তো পরে বলবেন, রাজ্য সরকারের সদিচ্ছা ছিল বলেই তিনি যেচে ছাত্রীটির বাড়িতে গেলেন, অন্য কিছু নয়। আসলে চাপে পড়েই ঘটনার ২২ দিন পর নিগৃহীতার বাড়িতে গেলেন পার্থবাবু। ঠেলার নাম বাবাজি আর কী!
"গঙ্গা দিয়ে অনেক জল গড়িয়ে গিয়েছে। আগে গেলে ভালো হত। এখন অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে"
পার্থবাবুর যাওয়া নিয়ে দু'টি ব্যাখ্যা উঠছে। প্রথমত, পুলিশের হামলা নিয়ে তৃণমূল কংগ্রেসের দুই হেভিওয়েট মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় ও ফিরহাদ হাকিম মুখ খুলেছিলেন। এতে বিড়ম্বনা বেড়েছে পার্থবাবুর। দলের অন্দরে পার্থবাবুর বিরোধী গোষ্ঠী একে ইস্যু করে চাপ বাড়াতে তৎপর। দ্বিতীয়ত, মুখে বড়াই করলেও গতকালের মহামিছিলে যে জনরোষ টের পাওয়া গিয়েছে, তা অনুভব করেছেন শিক্ষামন্ত্রী নিজেও। সামনে কলকাতা পুরসভার ভোট। পরের বছরই রাজ্যের ৮২টি পুরসভাতেও ভোট নেওয়া হবে। এই পরিস্থিতিতে শহরের ছাত্রসমাজ যদি এভাবে ক্ষেপে থাকে শাসক দলের বিরুদ্ধে, তা হলে বিপদ বৈকি! পাশাপাশি, সমাজের সর্বস্তরের মানুষ যাদবপুরের পড়ুয়াদের আন্দোলনকে সমর্থন করায় শহুরে জনভিত্তি নড়বড়ে হয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করেছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। তার জেরেই ঘটনার ২২ দিন পর পার্থবাবু 'জেগে উঠেছেন' বলে মনে করা হচ্ছে।
তাৎপর্যপূর্ণভাবে, পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গী ছিলেন শঙ্কুদেব পণ্ডা। তার জেরে বিতর্ক ছড়িয়েছে। মন্ত্রীর সঙ্গে এমন একজন গেলেন যিনি শিক্ষা দফতরের কেউ নন। এর আগে বিভিন্ন বিতর্কে জড়িয়েছেন শঙ্কুদেববাবু। তা হলে তাঁকে সঙ্গী করলেন কেন শিক্ষামন্ত্রী?
শিক্ষাবিদ অমল মুখোপাধ্যায় বলেন, "গঙ্গা দিয়ে অনেক জল গড়িয়ে গিয়েছে। আগে গেলে ভালো হত। এখন অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে।"
অভিনেতা বাদশা মৈত্র বলেন, "শিক্ষামন্ত্রী শঙ্কুদেব পণ্ডাকে কেন নিয়ে গেলেন? যদি যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনরত ছাত্রছাত্রীরা থাকত ওঁর সঙ্গে, সেটা বরং ভালো হত। যাই হোক, দেরি করে হলেও উনি যে গিয়েছেন, সেই সৌজন্যটুকুর জন্য ওঁকে সাধুবাদ জানাই।"
শিল্পী সমীর আইচ বলেন, "প্রথমে কান্না পেয়েছিল। এখন হাসি পাচ্ছে। ছাত্রদের উদ্দেশে শিক্ষামন্ত্রী যে গর্জন করেছিলেন, সেটা দেখে দুঃখে কান্না পেয়েছিল। আর এখন উনি গেলেন মেয়েটির বাড়িতে। তাও একা নয়, শঙ্কুদেব পণ্ডাকে নিয়ে। পরিস্থিতি একা সামলাতে পারছেন না বোঝা যাচ্ছে। শিক্ষামন্ত্রীর এই অবস্থা দেখে হাসি পাচ্ছে। এই সরকারের প্রবণতাই হচ্ছে, জোর করে মতামত সাধারণ মানুষের ওপর চাপিয়ে দাও। যাদবপুরেও গায়ের জোরে সেটা করতে গিয়েছিল। বুঝতে পারেনি, এভাবে প্রতিবাদ হবে।"
নাট্যকার চন্দন সেন বলেন, "শিক্ষার আসল নিয়ন্ত্রক কে, বোঝা গেল। শিক্ষামন্ত্রী তাই একা গেলেন না, সঙ্গে সঙ্গী করলেন বিতর্কিত শঙ্কুদেব পণ্ডাকে।"
নিগৃহীতার বাড়ি থেকে বেরিয়ে এ দিন বিকেলে পার্থবাবু সোজা যান রাজভবনে। সেখানে রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠীর সঙ্গে কথা বলেন। তবে কী কথা হয়, সে বিষয়ে কিছু জানা যায়নি।