ভোট আসছে, মালদহে আর্সেনিকমুক্ত পানীয় জলের দাবিতেও পড়েছে সিলমোহর
মালদহে ছোবল মেরেছে আর্সেনিক। মৃত্যুমিছিল চলেছে। কিন্তু বিগত সরকার মালদহের এই করুণ সমস্যা নিয়ে ভাবেনি। এবার মালদহবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি মিটতে চলেছে পঞ্চায়েত ভোটের আগে।
মালদহ, ২৩ মার্চ : মালদহে ছোবল মেরেছে আর্সেনিক। মৃত্যুমিছিল চলেছে। কিন্তু বিগত সরকার মালদহের এই করুণ সমস্যা নিয়ে ভাবেনি। এবার মালদহবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি মিটতে চলেছে পঞ্চায়েত ভোটের আগে। মালদহের কালিয়াচকে আর্সেনিকমুক্ত পানীয় জল প্রকল্পে সবুজ সঙ্কেত মিলেছে। এখন কতদিনে এই প্রকল্প বাস্তব রূপ পাবে? পঞ্চায়েত মন্ত্রী অবশ্য কথা দিয়েছেন পঞ্চায়েত ভোটের আগেই আর্সেনিকমপক্ত জল পাবেন বাসিন্দারা।
জেলাশাসক শরদ দ্বিবেদীর পাঠানো প্রস্তাবে ইতিমধ্যেই সিলমোহর দিয়েছে নবান্ন। পানীয় জলপ্রকল্পে ৬০০ কোটি টাকা অনুমোদন করেছে পঞ্চায়েত দফতর। আর এই জল প্রকল্পে সবুজ সঙ্কেত মিলতেই নতুনভাবে বাঁচার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছেন কালিয়াচকবাসীরা। আবারও এই গ্রামেই পরিবার নিয়ে থাকার স্বপ্নে মশগুল তাঁরা। আর পালিয়ে বাঁচতে হবে না।
কালিয়াচক ২ নম্বর ব্লকের লক্ষ্মীপুর গ্রাম। গঙ্গা তীরবর্তী। গ্রামের উর্বর জমিতে ফসল ফলিয়েই দিনগুজরাণ করেন গ্রামবাসীরা। গ্রামবাসীদের প্রায় ১০০ শতাংশই সংখ্যালঘু। কিন্তু গত দু'দশক ধরে সেই গ্রামে শুরু হয়েছে মড়ক। এখানে ভূগর্ভস্থ জলে মিশে রয়েছে মারণ আর্সেনিক। এর প্রভাবে প্রতি বছরই প্রাণ হারান ১০-১২ জন। প্রথমে হাতে-পায়ে কালো দাগ। পরে সেই দাগ ছড়িয়ে পড়ে শরীরময়। গোটা শরীরটা ফেটে যায়। বাসা বাঁধে ক্যানসার। তারপর সবশেষ।
মুজিবর শেখ, নাসিম শেখ, মকবুল শেখ, আরজিনা বিবি, শেফালি বিবি,জহর শেখ, আর হালে ফুলমনি বিবি। আর্সেনিকোসিসে একে একে তারা মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছে। ভোট আসে ভোট যায়, কিন্তু তাঁদের এই জীবদ্দশার কোনও পরিবর্তন হয় না। এ গ্রামে ভোট পেতে হলে তাই এবার জলদান আবশ্যক। তৎপরতা শুরু হয়েছে প্রশাসনিক স্তরেও। জেলাশাসকের প্রস্তাবে তাই চটজলদি সিলমোহর লাগিয়ে দিয়েছেন পঞ্চায়েত মন্ত্রী। দু'বার ভাবেননি।
এলাকার পঞ্চায়েত সদস্য, মুকলেসুর রহমানের দাবি, প্রতি বছর আর্সেনিকোসিসে আক্রান্ত হয়ে ১০-১২ জন গ্রামবাসীর মৃত্যু ঘটে। একটা সময় কয়েক হাজার মানুষের ভরা গ্রামে ছিল। এখন বাস করে হাতে গোনা শ'সাতেক। সবাই পালিয়েছে মৃত্যু ভয়ে। যাঁদের কোথাও যাওয়ার নেই, তাঁরাই রয়ে গিয়েছেন। তাঁদের প্রতিনিয়ত তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে প্রাণ ভয়। তাই সর্বস্বান্ত মানুষগুলোর সহবাস মরণের সঙ্গেই।
এর আগে বহুবার আর্সেনিকমুক্ত পানীয় জলের দাবিতে গ্রামে বিক্ষোভ হয়েছে। কখনও ভোট বয়কট, কখনও পালস পোলিও কর্মসূচি বয়কট হয়েছে। ছুটে এসছে প্রশাসন, ছুটে এসেছে রাজনৈতিক দলগুলি। প্রতিশ্রুতির বন্যা বইয়েছে। কিন্তু আদতে কিছুই হয়নি। পরিস্রুত পানীয় জল প্রকল্প হয়নি।
এবার তাঁরা নির্মল বাংলা কর্মসূচি বয়কট করে বার্তা দিয়েছিলেন। এবার পঞ্চায়েত প্রাধান এবং বিডিও, এমনকী জেলাশাসকও ছুটে গিয়েছিলেন। তাঁরা গ্রামবাসীদের কাছে কথা দিয়েছিলেন। শেষ পর্যন্ত কথা রেখেছেন তাঁরা। ওই গ্রামে আর্সেনিকমুক্ত পানীয় জলের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। ৬০০ কোটির অনুমোদন এখন শুধু বাস্তবায়নের অপেক্ষায়।