ওয়েইসি চালে কুপোকাত তৃণমূল, বাংলার ঘাসফুল প্রান্তরে গেরুয়া ঝড় সময়ের অপেক্ষা
সদ্য সমাপ্ত হওয়া বিহার নির্বাচনে দুর্দান্ত ঝোড়ো ইনিংস খেলে তেজস্বীর ম্যান অফ দ্য ম্যাচ পাওয়া আটকে দিয়েছিল আসাদউদ্দিন ওয়েইসির অল ইন্ডিয়া মজলিস-ই ইত্তেহাদুল মুসলিমিন। বিহার নির্বাচনে ফলাফল ঘোষণার পর রাজনৈতিক মহলের অনেকেই বলছেন যে আসলে সংখ্যালঘু ভোট ভাগ করে বিজেপির সুবিধা করে দিতেই বি টিম হিসাবে মাঠে নেমেছিল এমআইএম। এবার সেই একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি দেখতে চলেছে বাংলাও?
বহু জেলায় সংখ্যালঘু ভোট ভাগ করবে ওয়েসির দল
২০২১-এ বাংলার ভোট এবং অনেকেরই আশঙ্কা যে এখানেও বহু জেলায় সংখ্যালঘু ভোট ভাগ করে বিজেপির পথ মসৃণ করবে ওয়েইসি দল। এরকমই জটিল পরিস্থিতিতে বাংলায় বিজেপিকে রুখতে আসন্ন নির্বাচনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বধীন তৃণমূল কংগ্রেসকে খোলাখুলি জোটের আহ্বান জানায় এআইএমআইএম নেতৃত্ববৃন্দ। তাতে আরও বিপাকে পড়েছে ঘাসফুল শিবির।
বাংলার ৮০টি আসনে মুসলিম ভোট নির্ধাণকারী ফ্যাক্টর
বাংলার ২৯৪টি আসনের মধ্যে ৭৫ থেকে ৮০টি আসনে মুসলিম ভোট নির্ধাণকারী ফ্যাক্টর। সেই ভোট যদি তিন ভাগে হয়ে যায়, লাভ হবে বিজেপির। সার্বিক ভাবে বাংলায় মোট ২৭ শতাংশ ভোট রয়েছে। সেই ভোট যদি কোনও দল নিজেদের পক্ষে নিশ্চিত করতে পারত, তাহলে বিজেপির পক্ষে বাংলা জয় খুবই কঠিন হত। তাই বাংলায় এমআইএম-এর প্রবেশ আরও উল্লেখযোগ্য।
সিএএ-র মতো ইস্যু তৃণমূলের থেকে হাইজ্যাক করবে এমআইএম
২০১৯ লোকসভা নির্বাচনের ফলাফলে এটা পরিষ্কার যে তৃণমূল কংগ্রেস একক শক্তিতে কিছুতেই ঠেকাতে পারবে না বিজেপিকে। আসনের নিরিখে বাম-কংগ্রেস জোট তৃণমূল বা বিজেপিকে টেক্কা না দিতে পারলেও এখনও তাদের ভোট শতাংশ উল্লেখযোগ্য। এই পরিস্থিতিতে এমআইএম বাংলায় এসে যদি নির্বাচনে লড়তে চায় তাহলে প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে যে মুসলিম ভোট একদিকে চলে যাবে। যা হলে বাকি দলগুলির লোকসান হলেও বিজেপির লাভ হবে। এদিকে সিএএ, এনআরসির মতো ইস্যু তৃণমূলের থেকে হাইজ্যাক করে নিতে পারে এমআইএম। সেই ক্ষেত্রেও লাভবান হবে বিজেপি।
তৃণমূল নেতৃত্ব জোটের আহ্বান নিয়ে চুপ
এদিকে তৃণমূল নেতৃত্ব অবশ্য এই জোটের আহ্বান নিয়ে একেবারে মুখে কুলুপ এঁটেছেন। কারণ তৃণমূল জানে যে তারা যদি এমআইএম-এর ফাঁদে পা দেয়, তাহলে বিজেপি আরও লাভবান হবে। এদিকে এমআইএম-ও লাভ পাবে তৃণমূলের দৌলতে। লোকসান যা হওয়ার তা মমতার দলের হবে।
বাংলার রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে কী হওয়া উচিত জোট ধর্ম?
সব রাজনৈতিক দলই মুখে বলে যে বিজেপি প্রধান শত্রু। কিন্তু নির্বাচনের আগে জোটের কার্যকারিতা বজায় রাখতে ক্ষুদ্র স্বার্থ ত্যাগ করে যে সদর্থক পদক্ষেপ করা দরকার, তা হয় না। সদ্য বিহারে লালঝান্ডা উত্তোলনের মূল কারিগর সিপিআইএমএল লিবারেশনের সাধারণ সম্পাদক চান যাতে বামদলগুলি তৃণমূলের সঙ্গে হাত মেলাক। তবে বাংলার রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে কোনও দলই তা করতে রাজি নয়।
কংগ্রেস-বাম জোটের অশেষ চিন্তার কারণ
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, যদি শেষ পর্যন্ত ওয়েসির দল একাই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করে তাহলে অশেষ চিন্তার কারণ আছে কংগ্রেস-বাম জোট এবং তৃণমূল কংগ্রেস, উভয়পক্ষেরই। এই মুহূর্তে বিহার সংলগ্ন উত্তর দিনাজপুর জেলা ছাড়াও, সংখ্যালঘু অধ্যুষিত মালদা এবং মুর্শিদাবাদ জেলাতেও এমআইএম-র সংগঠন যথেষ্ট মজবুত।
নিজে আসন না জিতলেও বিজেপি বিরোধী শক্তির ক্ষতি করবে
এছাড়াও কলকাতা এবং কলকাতা সংলগ্ন হাওড়া, উত্তর ২৪ পরগনা এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনার উর্দুভাষী সংখ্যালঘু মানুষদের মধ্যেও এমআইএম যথেষ্ট সক্রিয়। তাই হতেই পারে যে নিজে কোনও আসন না জিতলেও কিছু ক্ষেত্রে বাম -কংগ্রেস জোট এবং তৃণমূলের বাড়া ভাতে ছাই দিল এমআইএম। ঠিক যেমনটা হয়েছে বিহারে। ঠাকুরগঞ্জের মতো কিছু আসনে উল্লেখযোগ্য সংখ্যালঘু ভোট টেনে মহাজোটের জয়ের পথে কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে এমআইএম।
ওয়েসিকে নিয়ে রাজনৈতিক মহলে জল্পনা
এমআইএম মালদা, মুর্শিদাবাদ এবং উত্তর দিনাজপুর জেলাতে প্রভাব ফেলবে কি না, তা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে জল্পনা শুরু হয়েছে। এই জেলাগুলিতে এখনও কংগ্রেসের সুনিশ্চিত ভোট ব্যাঙ্ক আছে। তাই চিন্তা পড়েছে কংগ্রেসও। বিহারে যেভাবে কিছু আসনে সংখ্যালঘু ভোট বিভাজন করে এমআইএম, বিজেপির সুবিধা করে দিয়েছে, তা বাংলাতেও হবে বলে আশঙ্কা হাত শিবিরের।
'লাভ জেহাদ' ইস্যুতে তুঙ্গে রাজনৈতিক তরজা, বিভাজনের তত্ত্ব খাড়া করে বিজেপিকে তোপ গেহলটের