মোদীর রাজ্যে বিজেপির জয়ের পর এমনই স্ট্র্যাটেজি মমতার
এফআরডিআই নিয়ে সংসদ ভবন চত্বরে তৃণমূলের বিক্ষোভ। কিন্তু পাশে নেই কেউই। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশের মতে, গুজরাতের ফল বেরোতেই স্ট্র্যাটেজি বদল তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের।
এফআরডিআই নিয়ে সংসদ ভবন চত্বরে তৃণমূলের বিক্ষোভ। কিন্তু পাশে নেই কেউই। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশের মতে, গুজরাতের ফল বেরোতেই স্ট্র্যাটেজি বদল তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। আবারও একলা চলো নীতিতেই ফিরে গেল তৃণমূল।
সংসদ ভবন চত্বরে এফআরডিআই নিয়ে তৃণমূল সাংসদদের বিক্ষোভ। পাশে নেই কেউই। কংগ্রেস লোকসভায় মনমোহন সিং-এর অপমানের প্রসঙ্গ তুললেও চুপ করেই বসেছিলেন তৃণমূলের সাংসদরা। এমন কী দিন কয়েক আগে কংগ্রেসের পাশে থাকার যে সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল, গুজরাতের ফল বেরনোর পর থেকেই তা উধাও। ওপরের দুটি ঘটনা কংগ্রেস ও তৃণমূলের সম্পর্কের খণ্ডচিত্র। গুজরাত নির্বাচনের আগে কংগ্রেস-সহ বিরোধীদের সঙ্গে হাত মিলিয়েই চলছিল তৃণমূল। কিন্তু ফল বেরতেই তা উধাও।
২০১৬ সালে রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচনের আগে থেকেই কংগ্রেস ও বাদলগুলির মধ্যে সমঝোতা তৈরি হয়েছিল। নির্বাচনে জোট হেরে যাওয়ার পরেও একধিক কর্মসূচিতে পাশাপাশি দেখা গিয়েছে দুদলের নেতাদের। মধ্যে রাজ্যসভা নির্বাচনের সময় প্রদীপ ভট্টাচার্যকে আগ বাড়িয়ে সমর্থনের কথা ঘোষণা করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই সময় কিছুদিনের জন্য এরাজ্যে বাং-কংগ্রেসের মধ্যে সম্পর্ক নিয়ে প্রশ্ন চিহ্ন তৈরি হয়। সম্প্রতি সবং-এর উপনির্বাচনে বামেরা আগে থেকেই তাদের প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করে দেওয়ায় অনেকেই মনে করেছিলেন ফের হয়তো রাজ্যে রাজ্যে জোট হতে চলেছে কংগ্রেস ও তৃণমূলের। কেননা রাজ্যে যাই হোক কংগ্রেসের প্রাক্তন সভানেত্রী সনিয়া গান্ধীর সঙ্গে সম্পর্ক ভাল তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের।
এরই মধ্যে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ইস্যুতে আন্দোলনে নামে অধীর চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন প্রদেশ কংগ্রেস। তখনই তৃণমূলের তরফ থেকে বলা হয়েছিল, দিল্লিতে দস্তি আর রাজ্যে কুস্তি চলতে পারে না। আর তারই ফল পাওয়া গেল মঙ্গলবার তৃণমূলের ধর্না মঞ্চে। তবে একটু অন্যভাবে।
এর আগে সংসদ ভবন চত্বরে একাধিক ইস্যুতে কংগ্রেস ও তৃণমূল সাংসদদের পাশাপাশি ধর্না কিংবা বিক্ষোভ অবস্থানে দেখা গেলেও, মঙ্গলবারের চিত্রটা ছিল অন্য রকমের। রাজ্যসভা এবং লোকসভা মিলিয়ে ৩৬ জন তৃণমূল সাংসদ ধর্নায় অংশ নিলেও পাশে দেখা যায়নি কাউকেই। এফআরডিআই নিয়ে তৃণমূল সাংসদরা বিক্ষোভ দেখালেও, সেই বিক্ষোভ নিয়েই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। যে বিলটিকে ইতিমধ্যেই সিলেক্ট কমিটিতে পাঠানো হয়েছে, তা নিয়ে ধর্না নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন রাজনৈতিক মহলের একাংশ। তবে কি আবারও লোক দেখানো বিজেপি বিরোধিতার পথে ফিরে গেল তৃণমূল।
সূত্রের খবর, তৃণমূলের অন্দরমহলের আশঙ্কা, গুজরাত-হিমাচল জয়ের পর রাজ্যে তৃণমূলের বিরুদ্ধে তেড়ে-ফুড়ে নামবে বিজেপি। নারদা-সারদা নিয়েও আবার নাড়াচাড়া হবে। বিজেপি তো ইতিমধ্যেই হুমকি দিয়ে রেখেছে অভিযুক্তদের জেলে ঢোকা এখন শুরু সময়ের অপেক্ষা। তাই কি বিজেপি বিরোধিতায় 'নরম' পন্থা নিতে চাইছে তৃণমূল। আর সেইজন্যই কি লোকসভায় কংগ্রেসের পাশ থেকে সরে যাওয়া। রাজ্যে বিরোধীরা বিশেষ করে বামদলগুলি এর আগে বারবার মোদী-দিদি আঁতাতের অভিযোগ করেছিলেন। গুজরাতে বিজেপির জয়ের পর আন্দোলনের এই পরিস্থিতি চলতে থাকলে আবার যে সেই অভিযোগ উঠতে শুরু করবে, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
ভবিষ্যতে রাজ্যে কংগ্রেস-তৃণমূলের সম্পর্ক কী হবে, তা সময়ই বলবে। তবে তৃণমূল কিংবা কংগ্রেসের হাইকমান্ডের বর্তমান অবস্থান নিয়ে বেজায় খুশি প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী। অন্তত রাজ্যে তৃণমূল সরকারের জনবিরোধী নীতি নিয়ে আন্দোলনে তো নামা যাবে!