For Quick Alerts
ALLOW NOTIFICATIONS  
For Daily Alerts
Oneindia App Download

সূর্যোদয় আনতে গিয়ে নিয়ে এসেছিলেন 'সূর্যাস্ত', কিন্তু 'সাহসী' হিসাবেই আখ্যায়িত হবেন নিরুপম

২০০৮ সাল। সিঙ্গুর নিয়ে তখন উত্তাল পরিস্থিতি। আচমকাই এক রাত-এ মধ্য কলকাতার এজেসি বোস রোডের এক নিউজ চ্য়ানেলে নিউজ রুমে শুরু হয়ে গেল চূড়ান্ত ব্যস্ততা। কেননা লাইভ সাক্ষাৎকারে আসতে চলেছেন নিরুপম সেন।

Google Oneindia Bengali News

২০০৮ সাল। সিঙ্গুর নিয়ে তখন উত্তাল পরিস্থিতি। আচমকাই এক রাত-এ মধ্য কলকাতার এজেসি বোস রোডের এক নিউজ চ্য়ানেলের নিউজ-রুমে শুরু হয়ে গেল চূড়ান্ত ব্যস্ততা। কেননা লাইভ সাক্ষাৎকারে আসতে চলেছেন নিরুপম সেন। সিঙ্গুরে জমি অধিগ্রহণ নিয়ে তখন এতটাই উত্তপ্ত পরিস্থিতি যে সে সময় বুদ্ধ জামানার ক্যাবিনেটের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ব্যক্তিটির মুখ থেকে সকলেরই অনেক কিছু জানার আগ্রহ। নিরুপম সেন-এর সাক্ষাৎকারটা কোনও পূর্বনির্দিষ্ট ছিল না। ফলে যুদ্ধকালীন তৎপরতায় স্টুডিও-এর সেট তৈরি করা থেকে সাক্ষাৎকারের যাবতীয় আয়োজন সম্পন্ন হয়েছিল।

সূর্যোদয় আনতে গিয়ে নিয়ে এসেছিলেন সূর্যাস্ত, কিন্তু সাহসী হিসাবেই অ্যাখ্যায়িত হবেন নিরুপম সূর্যোদয় আনতে গিয়ে নিয়ে এসেছিলেন সূর্যাস্ত, কিন্তু সাহসী হিসাবেই অ্যাখ্যায়িত হবেন নিরুপম

সেই নিউজ চ্যানেলের দফতরের বাইরে তখন গিজগিজ করছে অন্যান্য সংবাদমাধ্যমের ভিড়। আঞ্চলিক থেকে জাতীয় পর্যায়ের সব মিডিয়া পিকেটিং শুরু করেছিল সিঙ্গুর ও নন্দীগ্রাম নিয়ে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের সবচেয়ে 'ট্রাস্টেড সৈনিক'-কে সরাসরি পাকড়াও করার জন্য।

সেই রাতে নিরুপম সেন-এর সাক্ষাৎকার যারা দেখেছিলেন তাঁরা জানেন সিপিএম-এর চিরাচরিত পার্টি-লাইনের বাইরে বেরিয়ে এসে কীভাবে শিল্পায়নের জন্য সওয়াল করেছিলেন তিনি। এই সাক্ষাৎকার নিয়ে সিপিএম-এর অন্দরমহলেও আলোড়ন পড়ে গিয়েছিল। বিশেষ করে জমি অধিগ্রহণে বুদ্ধ-সরকারের নীতি নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করেছিলেন কারাটপন্থীরা। বুদ্ধপন্থী নিরুপম সেন-এর স্পষ্ট বক্তব্য ছিল উন্নয়ন নিয়ে। রাজ্যের বেহাল শিল্পের ছবির বদল আনতে গেলে বিনিয়োগকারীর পছন্দের স্থানকেই যে অগ্রাধিকার দিতে হবে তা সাফ জানিয়ে দিয়েছিলেন রাজ্যের তৎকালীন শিল্পমন্ত্রী। আর ন্যানোর মতো গাড়ি কারখানার জন্য কেন অনুসারী শিল্পে সিঙ্গুরেই রাখাটা দরকার তার জবাবও দিয়েছিলেন তিনি। শিল্প ছাড়া রাজ্যের বেহাল রাজকোষের হাল ফেরানো যে সম্ভব নয় এবং পশ্চিমবঙ্গ সিপিএম নেতৃত্ব যে সেটা অনুভব করতে পেরেছে তা নিরুপমের বক্তব্যেই স্পষ্ট হয়ে উঠেছিল। এমনকী, উন্নয়নের জন্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গেও যে বুদ্ধদেবের সরকার আলোচনার টেবিলে বসতে তৈরি সেই কথাও জানিয়েছিলেন তিনি।

[আরও পড়ুন:জনপ্রিয় অভিনেতা গৌতম দের জীবনাবসান, শোকস্তদ্ধ টলিউড ][আরও পড়ুন:জনপ্রিয় অভিনেতা গৌতম দের জীবনাবসান, শোকস্তদ্ধ টলিউড ]

বলতে গেলে এই একটা সাক্ষাৎকার যেন নিরুপম সেনকে বুদ্ধদেবের পিছনে থাকা সহচর থেকে পাশ্বর্তী-সহচর-এ পরিণত করেছিল। ২০০৬ সালে বিধানসভা নির্বাচনে বিপুল সংখ্যক আসন জিতে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে সরকার গড়ে বামফ্রন্ট। সরকারের শপথ গ্রহণ দিনেই পরিষ্কার হয়ে গিয়েছিল সিঙ্গুরে টাটার গাড়ি প্রকল্পের বিনিয়োগের বিষয়টি। আর শিল্পমন্ত্রী হিসাবে নিরুপম সেন পুরোদমে বুদ্ধদেবেরে উন্নয়নের ভাবনার সৈনিক হিসাবে নেমে পড়েছিলেন এই কর্মযজ্ঞে। সিঙ্গুরের পিঠোপিঠি নন্দীগ্রামেও অসন্তোষ বেড়েছিল। নন্দীগ্রামে নিখোঁজ কর্তব্যরত এক পুলিশ অফিসারের দেহ উদ্ধার হতেই আস্তে আস্তে বিষয়গুলি সামনে আসছিল। প্রথমে সিঙ্গুর, পরে নন্দীগ্রাম- শিল্পের নামে জমি অধিগ্রহণ নীতি নিয়ে বুদ্ধদেবের সরকারের উপর চাপ বাড়ছিল। কিন্তু , সে সময় যে মানুষটি বারবার উন্নয়নের স্বার্থে ভারী শিল্পের কতটা প্রয়োজনীয়তা তা যেভাবে বিভিন্ন স্থানে ব্যাখ্যা দিয়ে বেড়াচ্ছিলেন তিনি নিরুপম সেন। বণিকসভার সম্মেলন থেকে বিভিন্ন সভা-সমিতি- রাজ্যের বেহাল আর্থিক দশাকে সোজা করতে গেলে যে একটা 'হোলিস্টিক ডেভলপমেন্ট মডেল' দরকার তার জন্য সমানে সওয়াল করে গিয়েছিলেন নিরুপম সেন।

যুক্তি পাল্টা যুক্তি- সিঙ্গুর, নন্দীগ্রাম-কে ঘিরে তৈরি হওয়া পরিস্থিতি-তে এভাবেই নিজেকে বিরোধীদের সামনে মেলে দিয়েছিলেন তিনি। সিঙ্গুর, নন্দীগ্রাম নিয়ে উদ্ভুত পরিস্থিতিতে যে প্রশ্ন আর বিতর্ক বাণে জর্জরিত হয়ে যে নিরুপম সেন মেজাজ হারিয়েছেন এমন উদাহরণ আজ পর্যন্ত মেলেনি। 'বন্টন ব্যবস্থার রাজনীতি' বা 'রিডিস্ট্রিবিউটিভ ওয়েলফেয়ার ইনিসিয়েটিভ'-এর ভাবনা ছেড়ে 'প্রাইভেট ইনভেস্টমেন্ট'-এ পক্ষেই সওয়ালকারী বনেছিলেন তিনি। রাজ্যের হাল ফেরাতে আপাতত এই ভাবনাতেই অনড় থাকা উচিত বলেও মনে করতেন তিনি। তবে শিল্পের জন্য যে তিনি কৃষি বিরোধী ছিলেন তাও নয়। তাঁর ভাবনাই ছিল কৃষি-কে ভিত্তি বানিয়ে শিল্পোন্নয়ন।

সন্দেহ নেই সিঙ্গুর-নন্দীগ্রামের জন্য আজও রাজ্যের একটা সংখ্যক মানুষের কাছে তাঁর গ্রহণযোগ্যতা নিয়েই প্রশ্ন রয়েছে। নিরুপম সেন নিজেও সেটা জানতেন। মন্ত্রী হওয়ার আগে রাজনৈতিক জীবনে কম বিতর্কে জড়াননি নিরুপম। ১৯৪৬ সালের ৮ অক্টোবর জন্ম হওয়া নিরুপম সেনের শৈশব কেটেছিল বর্ধমানের গোবিন্দপুর অঞ্চলে। ১৯৬১ সালে বর্ধমানে রাজ কলেজের ছাত্রজীবনে রাজনীতির হাতেখড়ি। কৃষক ও শ্রমিক আন্দোলনে জড়িয়েও পড়়েছিলেন। বর্ধমানের সাঁইবাড়ি হত্যাকাণ্ডেও নাম জড়়িয়েছিল নিরুপমের। যদিও, বামেদের দাবি মিথ্যা মামলায় তাঁকে ফাঁসিয়েছিল তৎকালীন কংগ্রেস সরকার।

[আরও পড়ুন:চলে গেলেন সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম-এর অন্য়তম কুশীলব নিরুপম সেন, বুধবার শেষকৃত্য][আরও পড়ুন:চলে গেলেন সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম-এর অন্য়তম কুশীলব নিরুপম সেন, বুধবার শেষকৃত্য]

সাঁইবাড়ি হত্যাকাণ্ড নিরুপম সেনকে সারাক্ষণ তাড়া করে গিয়েছে। যে কোনও বাম বিরোধী দলই তাঁকে এই নিয়ে নিশানা করতে ছাড়েনি। এর সত্ত্বেও হাল ছাড়েননি নিরুপম। রাজনৈতিক জীবনের এই বিতর্ক-কে মেনে নিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু, ২০১১ সালে তৃণমূলের কাছে হারের বিষয়টি যেন মেনে নিতে পারেননি বুদ্ধদেব জামানার শিল্পমন্ত্রী। রাজ্যের উন্নয়নে যে ব্যক্তি বুদ্ধদেবের সুর্যোদয় আনার স্বপ্নে-র সওয়ারি হয়েছিলেন তাঁর রাজনৈতিক বৃত্তটা যেন 'সূর্যাস্ত'-এ পর্যসিত হয়েছিল। ২০১৩সালে সেরিব্রাল অ্যাটাক হয় নিরুপমের। এরপর থেকেই আস্তে আস্তে অসুস্থতা বেড়ে যাচ্ছিল। একটা সময় হুইল চেয়ারে বসেই কেটে যেতে থাকে জীবন। কাউকেই চিনতে পারতেন না। বুদ্ধদেব-এর ক্যাবিনেটের দ্বিতীয় সর্বোচ্চতম ব্যক্তি-র ঋজু-ছিপছিপে লম্বা গড়নের শরীরের অবস্থা সকলকেই অবাক করেছিল। সপ্তাহখানেক আগে অসুস্থতা এতটাই চরমে পৌঁছয় যে হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে ভেন্টিলেশনে দিতে হয়েছিল। নিরুপম সেন ৭২ বছরে এক অসুস্থ-অর্থব শরীর নিয়ে চিরতরে বিদায় নিলেন ঠিকই কিন্তু রাজ্যের শিল্পোন্নয়নের ইতিহাসে তিনি একজন সাহসী শিল্পমন্ত্রী হিসাবেই অ্যাখ্য়ায়িত হয়ে থাকবেন। রাজ্যে সূর্যোদয় আনতে গিয়ে যতই তিনি সূর্যাস্তের শরিক হন না কেন তাতে তাঁর এই 'সাহসী' তকমা মোছার নয়।

English summary
Nirupam Sen, the Industrial Minister of Buddhadev Bhattacharjee's regime in West Bengal passes away on Monday, i.e 24 December, 2018. Take a look on his role in Singur and Nandigram Land Agitation.
চটজলদি খবরের আপডেট পান
Enable
x
Notification Settings X
Time Settings
Done
Clear Notification X
Do you want to clear all the notifications from your inbox?
Settings X