পুজোর মরশুমে লুপ্তপ্রায় নীলকণ্ঠ পাখির ব্যবসা মধ্যগগনে, সচেতনতা তৈরির প্রয়াস বন দফতরের
নীলকণ্ঠ পাখি খুঁজতে গেলে যেন পাড়ি দিতে হয় গহীন অরণ্যে। কারণ বহু চর্চিত এই পাখি বর্তমানে লুপ্তপ্রায়। পাখিটি কেনা-বেচা তো দূরের কথা পাখিটি ধরার ব্যাপারেও আইনত নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।
আবার হয়তো বেড়িয়ে যাবো 'নীলকণ্ঠ পাখির খোঁজে'... আবার পাড়ি দিতে হবে কোনও গভীর অরণ্যে! কবিতার এই লাইনটি আজ একেবারেই খাঁটি হয়ে উঠেছে। সত্যিই নীলকণ্ঠ পাখি খুঁজতে গেলে যেন পাড়ি দিতে হয় গহীন অরণ্যে। কারণ বহু চর্চিত এই পাখি বর্তমানে লুপ্তপ্রায়। পাখিটি কেনা-বেচা তো দূরের কথা পাখিটি ধরার ব্যাপারেও আইনত নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।
এই পাখিকে বাঁচাতে সংরক্ষিত পশুপাখির তালিকার চতুর্থ তফসিলে ভুক্তও করে রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন পরিবেশবিদরা। এত কিছুর পরেও আইনকে বুড়ো আইন দেখিয়ে চলছে এই পাখির কারবার। সব রকমের কড়া নজরদারি সত্ত্বেও তা এড়িয়ে চোরা চালানকারীরা পাখির ধরপাকড় থেকে শুরু করে কেনাবেচা চালিয়ে যাচ্ছে।
বন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, নীলকণ্ঠ কেনাবেচার কথা কানে এসেছে তাঁদেরও। মাঝে কয়েকবছর নীলকণ্ঠ পাখি বিক্রিতে ভাটা পড়লেও ফের এই পাখি কেনাবেচা বেড়েছে বলেও জানতে পেরেছেন বনকর্তারা। তাতে রাশ টানতেই এবার উৎসবের মরসুম শুরুর পর থেকেই সক্রিয় হয়েছে বনদফতর।
আরও জানা গিয়েছে, প্রত্যন্ত সুন্দরবন থেকে চোরা পথে এই পাখি ঢুকছে গ্যালিফ স্ট্রিট-সহ কলকাতা ও লাগোয়া এলাকার পশুপাখির বাজারগুলিতে। বন দফতরের অভিমত, শুধু ধরপাকড় করে এই কারবারের লাগাম টানা যাবে না। এর পাশাপাশি সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানোও জরুরি। কারণ, বনেদি বাড়িতে পুজো চলাকালীন হানা দেওয়া ঠিক নয়। গ্রেফতারিও কার্যত অসম্ভব। তাই নীলকণ্ঠ বাঁচাতে সচেতনতার পথেই হাঁটতে চাইছেন বন্যপ্রাণ শাখার শীর্ষকর্তারা।
সম্প্রতি দক্ষিণ ২৪ পরগনার রায়চৌধুরী বাড়ির পুজোর রীতির কথা প্রকাশ্যে আসতেই এই নীলকন্ঠ পাখির হদিস পাওয়া যায়। তবে জমিদারদের বংশধরেরা জানান, এখনও রীতি মেনে প্রজারাই কলার মোচার মত দেখতে এই পাখির যোগান দেন। যার মাথার উপরে কিছুটা নীল এবং পালকের নিচের দিকটা নীল রঙয়ের। বংশধরেরা আরও জানান, পুজোর সাবেক প্রথার সঙ্গে জুড়ে রয়েছে নীলকণ্ঠ পাখি।
রীতি অনুযায়ী, দশমীর দিন প্রতিমা বিসর্জনের আগে নীলকণ্ঠ পাখি ওড়ানো হয়। পৌরাণিক মতে, নীলকণ্ঠ পাখি উড়ে গিয়ে কৈলাসে শিবের কাছে উমার ফিরে যাওয়ার বার্তা পৌঁছে দেয়। কলকাতার সহ রাজ্যের বহু বনেদি বাড়িতেই দীর্ঘ দিন ধরে এই রীতি চলে এসেছে। রায়চৌধুরী বাড়ির লোকেরা এতে ভুল কিছু দেখছেন না। তবে বনদফতর নতুন নিয়ম প্রণয়ন করলে কী হয় সেটাই এখন দেখার।