পঞ্চায়েত মামলায় ধাক্কার আগেই আরও এক ধাক্কা খেল রাজ্য সরকার, দিল্লি থেকে ইস্যু হাজিরার সমন
পঞ্চায়েত মামলায় মূল ইস্যু হিংসা। আর তাই নিয়ে এখন তোলপাড় রাজ্য-রাজনীতি। যার প্রভাব পড়েছে জাতীয় রাজনীতির অলিন্দেও। এই পরিস্থিতিতে আরও এক ইস্যুতে কার্যত ব্যাকফুটে রাজ্য় সরকার।
পঞ্চায়েত মামলায় মূল ইস্যু হিংসা। আর তাই নিয়ে এখন তোলপাড় রাজ্য-রাজনীতি। যার প্রভাব পড়েছে জাতীয় রাজনীতির অলিন্দেও। এই পরিস্থিতিতে আরও এক ইস্যুতে কার্যত ব্যাকফুটে রাজ্য় সরকার। কারণ, এক হিংসা ঘটনা ও মৃত্যুর প্রেক্ষিতে দক্ষিণ ২৪ পরগনার পুলিশ সুপারকে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনে সশরীরে হাজির হতে বলে সমন করা হয়েছে।
২০১৬ সালের ডিসেম্বরে কুলতুলির মধুসূধনপুর গ্রামে সুশান্ত হালদার নামে এক যুবককে সালিশি সভায় ডেকে মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। ১৩ ডিসেম্বর কলকাতায় চিকিৎসা করাতে নিয়ে যাওয়ার সময় মাঝ রাস্তায় মারা যায় গুরুতর জখম সুশান্ত। এই ঘটনায় অভিযুক্ত হন গোপাল মাঝি নামে স্থানীয় তৃণমূল সভাপতি। ১৬ তারিখ আক্রান্ত আমরার সাহায্যে বারুইপুর সাবডিভিশনের এসডিপিও-র কাছে খুনের অভিযোগ দায়ের করে সুশান্তর পরিবার। কিন্তু, পুলিশি নিস্ক্রিয়তার অভিযোগ এনে পরে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনকে ই-মেল করে নালিশ জানায় আক্রান্ত আমরা।
জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের ওয়েটবসাইটে দেখা যাচ্ছে বেশ কয়েক বার এই নিয়ে দক্ষিণ ২৪ পরগনা র পুলিশ সুপারের কাছে রিপোর্টও চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু সে রিপোর্ট জমা করেনি দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা পুলিশ প্রশাসন। ২০১৭ সালে ২৭ ফেব্রুয়ারি এবং ওই বছরেরই ১৭ জুলাই দক্ষিণ ২৪ পরগনা পুলিশ সুপারকে রিপোর্ট জমা করা নিয়ে সতর্কও করা হয়। এরপরও কোনও রিপোর্ট জমা না পরাতে ক্ষিপ্ত জাতীয় মানবাধিকার কমিশন।
দক্ষিণ ২৪ পরগনা পুলিশ সুপার রিপোর্ট জমা না করে জাতীয় মানবাধিকার আইনকে অমান্য করেছেন বলে মনে করা হচ্ছে। সেই কারণে মানবাধিকার রক্ষা আইনের মাধ্যমে দক্ষিণ ২৪ পরগনার পুলিশ সুপারকে হুঁশিয়ারি দিয়ে তাঁকে দিল্লির দফতরে সশরীরে হাজিরার নির্দেশ দিয়েছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন।
৩০ মে বেলা ১১টার মধ্যে দক্ষিণ ২৪ পরগনার পুলিশ সুপারকে কমিশনের সামনে হাজিরা দিতে হবে বলে নোটিসে জানানো হয়েছে। তবে, রিপোর্ট ২৩ মে-এর মধ্যে কমিশনের দফতরে পৌঁছতে হবে বলেও জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। যদিও, দিল্লির এই সমন নিয়ে দক্ষিণ ২৪ পরগনা পুলিশ সুপারের দফতরের কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।
সালিশি সভায় পিটিয়ে মেরে ফেলার ঘটনায় রাজ্য়-রাজনীতিতে কোনও নতুন ঘটনা নয়। তৃণমূল কংগ্রেস রাজ্যের শাসন ক্ষমতায় আসার আগে বাম আমলে চলা এইসব সালিশি সভার অত্য়াচার নিয়ে সরব হয়েছিল। কিন্তু, কার্যক্ষেত্রে তৃণমূল কংগ্রেসের জামানাতেও যে গ্রাম্য সালিশি সভা চরিত্রগুলি যে বদলায়নি তা নজির এই ঘটনা। তৃণমূলের নেতারা যে এখন এই সব সালিশি সভার দণ্ডমূণ্ডের কর্তা সে অভিযোগ করেছিল সুশান্ত হালদারের পরিবার। কুলতলির মধুসূধন গ্রামের বাসিন্দা বছর চৌত্রিশের সুশান্তর বিরুদ্ধে মাছ চুরির অভিযোগ এনে সালিশি সভা শুরু হয়েছিল। অভিযোগ সালিশি সভায় নির্দয়ভাবে তৃণমূলের লোকজন সুশান্তকে মারধরে করে। রক্তাক্ত হন সুশান্ত।
গুরুতর আহত অবস্থায় সুশান্তকে স্থানীয় গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু, গ্রামীণ হাসপাতাল সুশান্তকে ভর্তি করে রাখতে রাজি ছিল না বলে অভিযোগ। এরপর ১৩ ডিসেম্বর গুরুতর আহত সুশান্তকে কলকাতায় নিয়ে যাওয়ার সময় মাঝ রাস্তায় তাঁর মৃত্যু হয়। স্থানীয় থানা তৃণমূল কংগ্রেসের অঞ্চল সভাপতি গোপাল মাঝির বিরুদ্ধে অভিযোগ নিতেই রাজি ছিল না। শেষমেশ আক্রান্ত আমরার হস্তক্ষেপে বারুইপুরের এসডিপিও খুনের অভিযোগ গ্রহণ করেন। এই ঘটনায় পুলিশি নিস্ক্রিয়তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদে রাস্তাতেও নামে আক্রান্ত আমরা। স্থানীয় জামতলা বাজারে আক্রান্ত আমরা সভাও করে। এসডিপিও-র অফিস ঘেরাও করে অবস্থান করা হয়। অবশেষে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনে নালিশ জানানো হয়। জাতীয় মানবাধিকার কমিশনও পুলিশের ভূমিকায় যে খুশি নয় তা স্পষ্টতই বুঝিয়ে দিয়েছে। সন্দেহ নেই ২০১৬ সালের কুলতলির মধুসূধনপুর গ্রামের খুনের ঘটনায় কিছুটা হলেও মুখ পুড়েছে রাজ্য সরকারের।