মোদীকে ‘মহম্মদ বিন তুঘলক’ আখ্যা! বাংলায় লগ্নি নিয়ে কেন্দ্রের সঙ্গে সংঘাত মমতার
আগে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদীর সরকারের অধারকার্ড ও নোটবাতিলের বিষয়টিকে ‘তুঘলকি’ সিদ্ধান্ত বলে কটাক্ষ করেছিলেন। এবার শিল্পে বিনিয়োগ নিয়ে কেন্দ্রকে সরাসরি অভিযুক্ত করলেন মুখ্যমন্ত্রী।
কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদী সরকারের বিরুদ্ধে ফের তুঘলকি-তোপ দাগলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এবার তিনি কেন্দ্রকে বার্তা দিলেন বাংলার শিল্প-বিনিয়োগে বাধ সাধলে তিনি ছেড়ে কথা বলবেন না। তিনি এক সর্বভারতীয় সংবাদ মাধ্যমের সাক্ষাৎকারে মোদীর বিরুদ্ধে তোপ দেগে বলেন, 'মোদীর সরকারের পক্ষ থেকে কিছু সংস্থাকে নিষেধ করা হচ্ছে বাংলায় লগ্নি না করতে। সেই কারণে কথা দিয়েও অনেক শিল্পপতি এড়িয়ে যাচ্ছেন বাংলায় বিনিয়োগের ব্যাপারে।'
আগে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদীর সরকারের অধারকার্ড ও নোটবাতিলের বিষয়টিকে 'তুঘলকি' সিদ্ধান্ত বলে কটাক্ষ করেছিলেন। এবার শিল্পে বিনিয়োগ নিয়ে কেন্দ্রকে সরাসরি অভিযুক্ত করলেন মুখ্যমন্ত্রী। এ প্রসঙ্গে সরাসরি প্রধানমন্ত্রীকে 'মহম্মদ বিন তুঘলক' বলে কটাক্ষ করতেও ছাড়লেন না।
এদিন মমতা অভিযোগ করেন, 'কেন্দ্র সরাসরি কেন্দ্রকে বলছে বাংলায় বিনিয়োগ করা যাবে না। ফলে আমাদের প্রস্তাবিত প্রকল্পগুলি পড়ে থাকছে।' কেন এই প্রকল্পগুলি শেষ করতে দেওয়া হচ্ছে না, তা নিয়েই প্রশ্ন তুলে দেন মুখ্যমন্ত্রী। এই ঘটনা যুক্তরাষ্ট্রীয় পরিকাঠামোকে আঘাত করছে। এই ঘটনা জরুরি ব্যবস্থাকেও হার মানাচ্ছে বলেও তিনি এদিন অভিযোগ করেন।
মমতা বলেন, 'আমি বাংলায় শিল্প আনার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছি। আর কেন্দ্র সমস্ত শিল্পপতিদের স্ক্যানারের তলায় রেখে দিয়েছে। বাংলায় আসতে নিষেধ করে যাচ্ছে। ফলে অনেকেই বাংলায় আসতে ভয় পাচ্ছেন। এই অবস্থায় শিল্পপতিরাই বা সাহস করে কী করে আসবেন বাংলায় বিনিয়োগ করতে। কেন্দ্রের এই ঘৃণ্য রাজনীতির ফল ভোগ করতে হচ্ছে আমাদের।'
এদিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আরও বলেন, 'শুধু শিল্পপতিরাই নন, স্ক্যানারের নিচে রয়েছে সমস্ত সংবাদমাধ্যমও। এসব কী হচ্ছে! মহম্মদ বিন তুঘলকের মতো কাজ করে যাচ্ছেন আমাদের প্রধানমন্ত্রী। এর আগে ঠিকই একই ঘটনা ঘটিয়েছেন নোট বাতিলের ক্ষেত্রে। হঠাৎ ইচ্ছা হল- নোট বাতিল করে দিলেন। হঠাৎ ইচ্ছা হল- নতুন মুদ্রা নিয়ে চলে এলেন। আবার আধারকার্ড নিয়েও একই কাজ করে চলেছেন। প্রধানমন্ত্রী যা করে চলেছেন, তা 'তুঘলকি' কর্মকাণ্ড ছাড়া আর কিছু বলা যায় না।'
মমতা এদিন ব্যাখ্যা করেন, 'কালো টাকা উদ্ধারের লক্ষ্যে নোট বাতিল করা হয়েছিল বলা হলেও, তা যে কতখানি মিথ্যাচার সেই প্রমাণ ইতিমধ্যেই পাওয়া গিয়েছে। অর্থমন্ত্রী নিজেই সঠিক ব্যাখ্যা দিতে পারেননি- কোথায় গেল কালো টাকা? কেন্দ্র ব্যাখ্যা দিয়েছিল, এই সিদ্ধান্ত সন্ত্রাসবাদ দমন করবে, কিন্তু নোট বাতিলের পর কয়েকগুণ বেড়েছে সন্ত্রাসবাদ। আদতে সবই হয়েছিল স্বার্থসিদ্ধির জন্য।'
বিজেপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, 'বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নোট বাতিলের বিরুদ্ধে। কারণ, তাঁর দলের হাতে রয়েছে অনেক কালো টাকা। সেই টাকা এবার ধরা পড়ে যাবে।' এ প্রসঙ্গে মমতার জবাব, বাস্তবে কী হয়েছে তা তো দেখা গিয়েছেই। একটাও কালো টাকা উদ্ধার করতে পারেনি বিজেপি। টাকা তো সব পার্টিরই রয়েছে। বিজেপিরই কি শুধু ছাই আছে! কিন্তু কার কী আছে, তারা সেই টাকা নিয়ে কী করেছে, তা জলের মতো পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে সাধারণ মানুষের কাছে।
[আরও পড়ুন :নোট বাতিল একেবারেই 'ফ্লপ শো', মমতার টুইট হানায় বিদ্ধ মোদী]
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, 'আসলে কেন্দ্রের সরকার বিভাজনের রাজনীতি করে চলেছে। অবিজেপিশাসিত রাজ্যগুলির সঙ্গে সংঘাতে তৈরি করছে। বাংলায় ধর্মীয় বিভাজনের রাজনীতি শুরু করেছে কেন্দ্র। ক্ষমতা দখলের জন্য নোংরা রাজনীতি করতে সিদ্ধহস্ত কেন্দ্রীয় সরকার। কিন্তু বাংলার মাটি বিবেকানন্দ-রবীন্দ্রনাথের মাটি, এই মাটিতে এত সহজে ধর্মীয় তাস খেলতে পারবে না বিজেপি। আর রাজ্য বিভাজন করার যে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বিজেপি, তাও স্বপ্নই থেকে যাবে। কোনওদিন বাংলা ভাগ করতে পারবে না বিজেপি।'