মতুয়া ভোটকে কব্জা করতে মাস্টারস্ট্রোক মোদীর! একুশের নির্বাচনে টার্গেট বাংলা
বাংলার নির্বাচনে এবার কাঁটে কা টক্কর চলছে তৃণমূল বনাম বিজেপির মধ্যে। তৃণমূলকে সরিয়ে বিজেপি এবার পরিবর্তনের সরকার গড়তে উদগ্রীব। সেই লক্ষ্যপূরণে এবার মতুয়া ভোট বড় ফ্যাক্টর হবে।
বাংলার নির্বাচনে এবার কাঁটে কা টক্কর চলছে তৃণমূল বনাম বিজেপির মধ্যে। তৃণমূলকে সরিয়ে বিজেপি এবার পরিবর্তনের সরকার গড়তে উদগ্রীব। সেই লক্ষ্যপূরণে এবার মতুয়া ভোট বড় ফ্যাক্টর হবে। আর মতুয়া ভোটকে এবার কব্জা করতে স্বয়ং মোদী দিয়েছেন মাস্টারস্ট্রোক। শান্তনু ঠাকুরকে নিয়ে তিনি পাড়ি দিয়েছেন বাংলাদেশের মতুয়া মন্দিরে।
৩৭ থেকে ৪০টি আসনে মতুয়াদের দাপট প্রবল
প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশ সফরকালেও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী শনিবার মতুয়া মন্দিরে যান। তিনি জানেন, পশ্চিমবঙ্গের বেশ কয়েকটি বিধানসভা কেন্দ্রের নির্বাচনের ফলাফলকে প্রভাবিত করতে পারেন মতুয়ারা। ৩৭ থেকে ৪০টি আসনে মতুয়াদের দাপট প্রবল। এছাড়া আরও ৪০-৫০টি আসনে মতুয়ারা রয়েছেন।
ওড়াকান্দিতে মতুয়াদের পবিত্র মন্দিরে মোদী
ওড়াকান্দিতে মতুয়াদের পবিত্র মন্দিরে তিনি শ্রদ্ধা নিবেদন করেননি। পাশাপাশি মেয়েদের জন্য একটি স্থানীয় বিদ্যালয় উন্নীত করার এবং একটি নতুন প্রাথমিক বিদ্যালয় গড়ার প্রতিশ্রুতি দেন। তিনি হিন্দু বৈষ্ণব সম্প্রদায়ের প্রতিষ্ঠাতা হরিচাঁদ ঠাকুরের ভূয়সী প্রশংসা করেন। ১৮১২ সালে তিনি নিকটবর্তী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেছিলেন, তবে তিনি বেশিরভাগ জীবন অতিবাহিত করেছিলেন ওড়াকান্দিতে। ১৮৭৮ সালে ওড়াকান্দিতে তিনি মারা যান।
মতুয়া সম্প্রদায়ের ‘বড়মা'র সঙ্গে সাক্ষাতের কথা স্মরণ
প্রধানমন্ত্রী তাঁর এই বাংলাদেশ সফরে মতুয়া সম্প্রদায়ের 'বড়মা' বীণাপাণিদেবীর সঙ্গে সাক্ষাতের কথাও স্মরণ করেন। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগনায় ঠাকুরনগরে গিয়েছিলেন মোদী। তখনই বড়মার সঙ্গে তাঁর সাক্ষাৎ হয়। মোদী বলেন, ওড়াকান্দিতে আসার পরে ভারতে বসবাসকারী আমার মতুয়া ভাইদের অনুভূতিটি বেশ অনুভব করতে পারছি।
আজ আমার সেই ইচ্ছাপূরণ হয়েছে, বাংলাদেশ সফরে মোদী
মোদী বলেন, ২০১৫ সালে যখন আমি প্রথম বাংলাদেশ সফর করেছি, তখন আমি ভেবছিলাম আবার কবে আমি এখানে আসতে সক্ষম হব। আজ আমার সেই ইচ্ছাপূরণ হয়েছে। মোদী শুক্রবার প্রতিবেশী দেশে তাঁর দু-দিনের সফর শুরু করেন এবং শনিবার ওড়াকান্দিতে মতুয়া মন্দিরে যান। যেদিন পশ্চিমবঙ্গের ২৯৪টি আসনের মধ্যে প্রথম দফায় ৩০টি আসনে ভোটগ্রহণ হল।
সংস্কারবাদী আন্দোলনের মধ্য দিয়ে মতুয়াদের প্রতিষ্ঠা
তিনি ওড়াকান্দিতে ঠাকুরবাড়ি পরিদর্শন করেছিলেন এবং হরিচাঁদ ঠাকুরের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেছিলেন। হরিচাঁদ ঠাকুর উনিশ শতকের গোড়ার দিকে সংস্কারবাদী আন্দোলনের মধ্য দিয়ে এই সম্প্রদায়টির প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এই সম্প্রদায়টিতে নমঃশুদ্র, চামার এবং মালিরা অন্তর্ভুক্ত রয়েছেন। এঁরা তখন অবিভক্ত বাংলায় উচ্চবর্ণের হিন্দুদের দ্বারা অস্পৃশ্য হিসাবে বিবেচিত ছিলেন।
ওড়াকান্দি ঠাকুরবাড়ির কথা সারা জীবন মনে রাখব
মোদী বলেন, "ওড়াকান্দি ঠাকুরবাড়িতে আমার এই সফরটি এমন একটি অভিজ্ঞতা যে আমি তা সারা জীবন মনে রাখব। এটি একটি অত্যন্ত পবিত্র স্থান, যা মতুয়া সম্প্রদায়ের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত। প্রধানমন্ত্রী টুইটারে পোস্টে এই বার্তা দেন। পশ্চিমবঙ্গে মতুয়ারা সংখ্যায় বৃদ্ধি পেয়েছে, যেহেতু দেশভাগের পর তাদের অনেকে পূর্ব পাকিস্তান থেকে চলে এসেছিল ভারতে। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ গঠনের পরেও তাঁরা থেকে গিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গেই।
তৃণমূলের মতুয়া ভোটব্যাঙ্কে আঘাত হানতে
রাজ্যের বিগত বেশ কয়েকটি নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গের মতুয়ারা তৃণমূলের একটি নির্ভরযোগ্য ভোটব্যাঙ্ক ছিল। ২০১১ সালে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মতুয়া মহাসঙ্ঘের সঙ্ঘাধিপতি বীণাপাণি দেবীর অত্যন্ত নিবিড় সম্পর্ক রেখেছিলেন। ২০১৯-এর ভোটে তৃণমূলের মতুয়া ভোটব্যাঙ্কে আঘাত নেমে আসে। বর্তমানে মতুয়া মহাসঙ্ঘের এক সদস্য বড়মার নাতি শান্তনু ঠাকুর বিজেপির সাংসদ।