নন্দীগ্রাম অধীর আগ্রহে তাকিয়ে ভবানীপুরের দিকে, উপনির্বাচনের ফলাফল নিয়ে কী তাদের প্রত্যাশা
নন্দীগ্রাম অধীর আগ্রহে তাকিয়ে ভবানীপুরের দিকে, উপনির্বাচনের ফলাফল নিয়ে কী তাদের প্রত্যাশা
নন্দীগ্রামে মমতা বনাম শুভেন্দুর হাইভোল্টেজ লড়াইয়ের সাক্ষী থেকেছে বাংলা। এবার লড়াই ভবানীপুরে। বাংলার উপনির্বাচনে বড় লড়াই বলেই গণ্য হচ্ছে। কারণ প্রার্থী যখন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, তখন লড়াই তো হাইভোল্টেজ হবেই। আর নন্দীগ্রাম এবার তাকিয়ে ১৩০ কিমি দূরে ভবানীপুরের উপনির্বাচনের ফলাফলের দিকে।
নিজের কেন্দ্র ভবানীপুরে ফিরে আসতে হয়েছে মমতাকে
বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চার মাস আগে হেরে গিয়েছিলেন নন্দীগ্রামের যুদ্ধে। একেবারে শেষ রাউন্ডে তাঁকে বিজয়ী ঘোষণার পরও বদলে গিয়েছিল ফলাফল। শেষপর্যন্ত হার মেনে নিতে হয়েছিল। তাই ভবানীপুর উপনির্বাচনে তাঁকে সামিল হতে হয়েছে। নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য নিজের কেন্দ্র ভবানীপুরে ফিরে আসতে হয়েছে তাঁকে।
নির্বাচনের অনুভূতি এখনও নন্দীগ্রাম ছেড়ে যায়নি
বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে শেষ রাউন্ডে মাত্র ১৯৫৬ ভোটে পরাজিত হন শুভেন্দু অধিকারীর কাছে। তারপর নন্দীগ্রাম ভবানীপুরের উপনির্বাচেনর লড়াই সম্পর্কে কী ভাবছে? নন্দীগ্রামের ভোট যুদ্ধ শেষ হলেও আসলে নির্বাচনের অনুভূতি এখনও নন্দীগ্রাম ছেড়ে গেছে বলে মনে হয় না। এখনও বিজেপি ও তৃণমূলের ব্যানারে সেই লড়াই জারি রয়েছে।
মমতার বিজয়ের মার্জিন বনাম বিপর্যয়ের সম্ভাবনা
নন্দীগ্রামের আকাশে-বাতাসে এখনও ভোট-উত্তেজনা। অনেক মানুষ এখন দিক পরিবর্তন করেছে। নন্দীগ্রামের বেশিরভাগ চায়ের দোকান ও স্থানীয় আড্ডাখানায় আলোচনার বিষয় হল ভবানীপুর ভোট। মানুষ ভবানীপুর উপনির্বাচনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিজয়ের মার্জিন নিয়ে বিতর্ক করছে। কেউ কেউ ভাবছে আবার বিপর্যয়ের সম্ভাবনা আছে কি না।
তৃণমূল কর্মীদের কেড়ে নিতে চায়, আমরা লড়াই করি
নন্দীগ্রামে শুভেন্দু অধিকারীর তৈরি এমএলএ হেল্প সেন্টারের কর্মীরা বলছেন যে তারা এখানে লোকদের সাহায্য করার সময় পার্টির রঙ দেখে না। যে দল থেকে আসুক, আমাদের এমএলএ সাহায্য করেন। আমরা এটা সবার জন্য করি। তৃণমূল এখন আমাদের কর্মীদের কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে। কিন্তু আমরা লড়াই করে যাচ্ছি।
মমতাকে উপযুক্ত লড়াই, ভবানীপুরেও নন্দীগ্রামের পুনরাবৃত্তি!
বিজেপি নেতা প্রলয় পাল বলেন, ১৬ অগাস্ট খেলা হবে দিবাসে আমার হাত ভেঙে দিয়েছে। আমরা জিতেছি এবং আমরা আমাদের যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে এখনও। শুভেন্দু অধিকারী আমাদের নেতা। শাসক দল আমাদের উপর চাপ সৃষ্টি করছে কিন্তু আমরা নতি স্বীকার করব না। ভবানীপুরেও আমরা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে উপযুক্ত লড়াই দেব। সেখানেও নন্দীগ্রামের পুনরাবৃত্তি হবে।
মমতারই আমাদের এমএলএ হওয়া উচিত ছিল, বলছে বিরুলিয়া
আবার বিরুলিয়া বাজারের চিত্রটা অন্যরকম। ১০ মার্চ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আহত হয়েছিলেন এই বিরুলিয়া বাজারে। নির্বাচনী প্রচারে সেদিন যেখানে তাঁর গাড়ি দাঁড়িয়ে ছিল, সেই পোস্টটি এখন চারদিক থেকে তৃণমূলের পতাকায় মোড়া। মিষ্টির দোকানের মালিক যিনি সেদিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পায়ে বরফ দিয়েছিলেন তিনি বলেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যেভাবে আঘাত পেয়েছেন, তা আমাদের খারাপ লাগছে। তাঁরই আমাদের এমএলএ হওয়া উচিত ছিল, তাহলে আমরা আরও সুবিধা পেতাম। আমরা ছোট মানুষ কিন্তু আমরা আশা করি ভবানীপুরে তিনি সর্বোচ্চ ব্যবধানে জয়ী হবেন।
নন্দীগ্রাম এখন বলছে, দুঃখিত! আমরা দিদিকে পেলাম না
নন্দীগ্রাম এখন বলছে, আমরা খুবই দুঃখিত। আমরা সুযোগ পেয়েও আমাদের এমএলএ হিসাবে দিদিকে পেলাম না। আমরা এখন ভবানীপুরের দিকে তাকিয়ে আছি এবং আমরা জানি তিনি আগের সব জয়ের মার্জিন ভেঙে দেবেন। বিরুলিয়া বাজারের বেশিরভাগই মমতাকে তাঁদের এমএলএ হিসাবে না পেয়ে মর্মাহত। রাজনৈতিক মহল মনে করছে, বাংলার ভোটের ফলাফল নন্দীগ্রামের মানসিকতা পরিবর্তন করেছে?
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হার একটি ষড়যন্ত্র ছিল, বলছে নন্দীগ্রাম
নন্দীগ্রামের অনেকেই মনে করেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হার একটি ষড়যন্ত্র ছিল। নন্দীগ্রাম থেকে মুখ্যমন্ত্রী হেরে গেছেন। তিনি এখানকার এমএলএ নন। দেখুন আমরা সবাই উপকৃত হচ্ছি। এটা আমাদের দুর্ভাগ্য যে আমরা তাঁকে বিধায়ক হিসেবে পাইনি। আমরা ভবানীপুরে তাঁর শুভ কামনা করছি। চাইছ তিনি বিপুল ভোটে জিতুন।
বিজেপিকে নন্দীগ্রামের চক্রান্তের জবাব দেবে ভবানীপুর
নন্দীগ্রাম ব্লক ২-এর তৃণমূল পার্টি অফিসে উপস্থিত নেতা-কর্মীরা বলেন, ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করছি যে, মুখ্যমন্ত্রী ভবানীপুর থেকে সবচেয়ে বড় ব্যবধানে জয়ী হন। নন্দীগ্রামে মুখ্যমন্ত্রীকে এমএলএ হিসেবে পাইনি, এটা আমাদের লজ্জার। কিন্তু আমরা নিশ্চিত ভবানীপুর এর প্রতিশোধ নেবে। নন্দীগ্রামে বিজেপি অর্থ, পেশীশক্তি ও ইসি ব্যবহার করেছে। আমরা জানি ভিভিপ্যাটে টেম্পারিং হয়েছে। ভবানীপুরে মানুষ তাই এবার এত ভোট জয়ী করবেন যে নন্দীগ্রামের চক্রান্তের জবাব পাবে বিজেপি।
নন্দীগ্রামও ভবানীপুরের জন্য অপেক্ষা করছে
একটা বিষয় পরিষ্কার, নন্দীগ্রামও ভবানীপুরের জন্য অপেক্ষা করছে। ভবানীপুর উপনির্বাচনের রায় নন্দীগ্রামকে কিছুটা সান্ত্বনা দিতে পারে। তৃণমূল মুখ্যমন্ত্রীর বড় জয়ের দিকে তাকিয়ে রয়েছে। অন্যদিকে, বিজেপি মনে করছে, প্রিয়াঙ্কা টিবরেওয়াল শুভেন্দু অধিকারীর মতো এক বিশাল ঘাতক হবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। সেই কারণেই ভবানীপুর নির্বাচনে শুভেন্দু অধিকারী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন। তবে এটা স্পষ্ট যে, ভবানীপুরের ফলাফল নন্দীগ্রামেও প্রভাব ফেলবে।