তরুণ শিক্ষকের প্রশ্ন হজম হল না বিডিও-র, প্রকাশ্যেই মেজাজ হারিয়ে শাসানি
প্রকাশ্য়েই মেজাজ হারালেন ব্লক উন্নয়ন আধিকারিক। এমনকী, হলভর্তি মানুষের সামনেই এক তরুণ শিক্ষককে শাসালেন সাসপেন্ড করিয়ে দেবেন বলে। এই ঘটনার পুরো ভিডিও এখন ভাইরাল হয়েছে নেট দুনিয়ায়।
প্রকাশ্যেই মেজাজ হারালেন ব্লক উন্নয়ন আধিকারিক। এমনকী, হলভর্তি মানুষের সামনেই এক তরুণ শিক্ষককে শাসালেন সাসপেন্ড করিয়ে দেবেন বলে। এই ঘটনার পুরো ভিডিও এখন ভাইরাল হয়েছে নেট দুনিয়ায়। কেউ একজন এই ঘটনার ভিডিও করেছিলেন। পরে তিনি তা প্রকাশ্যে ছেড়ে দেন। যে স্থানে এই ঘটনা সেটা নদিয়ার নাকাশিপাড়ার বিডিও অফিস। ২৮ অগাস্ট এই ঘটনা ঘটে।
ভোটার তালিকা সংশোধনের জন্য নাকাশিপাড়া বিডিও অফিসে একটি প্রশিক্ষণ শিবিরের আয়োজন করা হয়েছিল। ২৮ তারিখ এই প্রশিক্ষণ শুরু হতেই জানিয়ে দেওয়া হয় টানা ২ মাস ধরে কাজ চলবে। শাশ্বত ঘোষ নামে এক তরুণ শিক্ষক জানতে চেয়েছিলেন কোনও এমার্জেন্সি পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে কি, যার জন্য টানা ২ মাস ধরে কাজ? ভোটার তালিকা সংশোধনের কাজ ১৫ সেপ্টেম্বর শুরু হয়ে ৩১ ডিসেম্বর শেষ হওয়ার কথা। ফলে পুজোর ছুটিও এরমধ্যে পড়ে যাচ্ছে। দুর্গাপুজো বাঙালির সমাজজীবনে সবচেয়ে বড় উৎসব। পুজোর মধ্যে কী হবে কাজের- তা জানতে প্রশিক্ষণ দিতে আসা বিডিও অফিসের লোকেদের জিজ্ঞাসা করেন শাশ্বত। এতে কোনও উত্তর জানা নেই বলে যথেষ্ট রূঢ়ভাবে জবাব দেওয়া হয় বলে অভিযোগ।
ভোটার তালিকার সংসোধনের কাজ সাধারণত ৬ থেকে ৭ দিন চলে। এর জন্য এই কাজে অংশগ্রহণকারীদের ৫০০ থেকে ৮০০ টাকার মতো দেওয়া হয়। এবার টানা ২ মাস কাজ করলে কী মিলবে তাও জানতে চান শাশ্বত। উল্টে শাশ্বতকে বিডিও-র কাছ থেকে এর উত্তর জেনে আসতে বলা হয়। এই নিয়ে এবার বিডিও অফিসের কর্মীদের সঙ্গে বচসা বাঁধে শাশ্বতর। বিডিও অফিসের কর্মীরা চেয়ার ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে বাইরে বেরিয়ে যান।
কিছুক্ষণ পরে তাঁরা বিডিও-কে সঙ্গে করে নিয়ে হলে আসেন। পিছনে চেয়ারে বসেছিলেন শাশ্বত। তাঁকে সামনে ডেকে আনা হয়। দাঁড় করিয়ে তাঁর হাতে মাইক দিয়ে প্রশ্ন করতে বলা হয়। শাশ্বত এবারও একই প্রশ্ন করেন। কিন্তু, নাকাশিপাড়ার বিডিও সমর দত্ত পরিষ্কার জানিয়ে দেন এটা সরকারি নির্দেশ। তাই কোনও প্রশ্ন ছাড়াই তাঁকে কাজ করতে হবে। বিডিও-র এমন উত্তর এবার ক্ষুব্ধ হন শাশ্বত। তিনি সাফ জানিয়ে দেন কাজের বিষয়ে পুরো তথ্য না জানানো হলে তাঁর পক্ষে প্রশিক্ষণ নেওয়া সম্ভব নয়। এরপরই বিডিও মেজাজ হারান। অভিযোগ, তিনি স্পষ্টতই হুঁশিয়ারি দেন শাশ্বতকে।
বেথুয়াডহরির প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক শাশ্বত ততক্ষণে নিজের স্থানে ফিরে গিয়েছিলেন। আচমকাই বিডিও সমর দত্ত চিৎকার বলে ওঠেন, 'বাই হুইপ' তিনি এই কাজ করতে বাধ্য। আর প্রশিক্ষণ না নিলে তাঁকে সাসপেন্ড করা হবে। এরপরই বিষয়টি স্কুল পরিদর্শকের অফিসে ফরোয়ার্ড করে দেন তিনি। বিডিও-র এই স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে স্কুল ইনস্পেক্টরকে বিষটি জানিয়ে অভিযোগ দায়েরের ঘটনার কড়া নিন্দা করেছে বিভিন্ন শিক্ষক সংগঠন। একটা ছোট্ট বিষয়কে কেন এভাবে শাস্তিযোগ্য অপরাধের জায়গায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে তা নিয়ে সমালোচনা শুরু হয়েছে।
বিডিও সমর দত্তের বিরুদ্ধে অহেতুক রূঢ় ব্যবহারের অভিযোগ এই প্রথম নয়। কয়েক মাস আগেই অমিতকুমার মুখোপাধ্যায় নামে এক সরকারি কর্মী সমর দত্তের রূঢ় ব্যবহারের অভিযোগ তুলে ফেসবুকে সরব হয়েছিলেন। তখন পুশুড়ার জয়েন্ট বিডিও হিসাবে কাজ করছিলেন তিনি।
ভোটের যে কোনও কাজেই সবার আগে প্রাথমিক শিক্ষকদের উপরেই কোপটা দেওয়া হয় বলে দীর্ঘদিন ধরেই অভিযোগ উঠেছে। কেন অন্য কোনও সরকারি কর্মীদের এতে সংযুক্ত করা হবে না তা নিয়েও শুরু হয়েছে প্রাথমিক শিক্ষকদের আন্দোলন। মুখ্যমন্ত্রী থেকে শিক্ষামন্ত্রীর কাছে একাধিকবার আবেদন জমা পড়েছে। কিন্তু, কাজের কাজ হয়নি। সম্প্রতি এবিটিপিএ-এর পক্ষ থেকে বিকাশভবনে শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্য়ায়ের কাছে একটি স্মারকলিপি জমা দেওয়া হয়েছে। তাতে শিক্ষকদের শিক্ষার কাজের বাইরে ব্যবহার না করার দাবি রাখা হয়েছে। এবিটিপিএ-র রাজ্য সভাপতি সমর চক্রবর্তীও জানিয়েছেন, ভোটার তালিকা সংশোধনের কাজে অন্য সরকারি কর্মীদেরও অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে। কিন্তু, বারবার প্রাথমিক শিক্ষকদেরকেই এরমধ্যে জোর করে টেনে আনা হয়।
[আরও পড়ুন:মোষ চুরির অভিযোগ! যোগী রাজ্যে গণপিটুনিতে মৃত্যু শাহরুখের ]
উস্থি ইউনাইটেড প্রাইমারি টিচার ওয়েলফেয়ার অ্যসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে শিক্ষকনেতা মইদুল ইসলামও বিডিও-র অতি সক্রিয়তার কড়া সমালোচনা করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, 'বিরোধীরা পঞ্চায়েত নির্বাচনে যখন মনোনয়ন জমা করতে পারছিল না তখন তো এই বিডিও-র এত সক্রিয়তা চোখে পড়েনি। এখন এক নিরীহ শিক্ষক তাঁকে কিছু প্রশ্ন করেছেন বলে তিনি অতিসক্রিয়তা দেখাচ্ছেন! এটা পদের অপব্যবহার করে প্রতিহিংসা মেটানো ছাড়া আর কিছুই নয়। ভোটের কোনও কাজ পড়লেই প্রাথমিক শিক্ষকদের হিড়হিড় করে নিয়ে যাওয়া হয়। এমনিতেই প্রাথমিক শিক্ষকরা ক্লাসের পর ক্লাস নিয়ে, মিড মিল এবং আরও নানা আনুষাঙ্গিক ডিউটি করে যান। এরপরও তাঁদের ভোটের কাজ দেওয়া হয়। এত কাজ চাপানো হলেও প্রাথমিক শিক্ষকদের পিআরটি স্কেলে বেতন দেওয়া হয় না।'
[আরও পড়ুন: ২০১৯-এর আগেই দলের প্রাক্তন হেভিওয়েট ফিরতে পারেন তৃণমূলে! রাজনৈতিক মহলে জল্পনা]
ওয়ানইন্ডিয়া বেঙ্গলি থেকে শাশ্বত-র সঙ্গে কথা বলা হয়। গোটা ঘটনায় আতঙ্কিত তিনি। সামান্য একটা প্রশ্নকে ঘিরে যেভাবে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়েছিল তাতে তিনি অনুতপ্ত। কিন্তু, তা বলে বিডিও যেভাবে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছেন তাতে হতবাক তিনি। ওয়ানইন্ডিয়া বেঙ্গলি থেকে অভিযুক্ত বিডিও সমর দত্তের সঙ্গেও কথা বলা হয়েছিল, গোটা বিষয়টি নিয়ে কিছু জানাতে তিনি অস্বীকার করেন। উল্টে যথেষ্ট রূঢ়ভাবে ঘটনাটি প্রশাসনিক স্তরের বলে মন্তব্য করেন। একটা সামান্য ঘটনাকে ঘিরে কেন এক তরুণ শিক্ষকের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হল? এর জবাব দেননি নাকাশিপাড়ার বিডিও সমর দত্ত।
[আরও পড়ুন:ফটোগ্রাফারদের জন্য সুখবর! হাওড়া ব্রিজে উঠতে চলেছে ব্রিটিশ আমলের নিষেধাজ্ঞা]