রামকৃষ্ণ মিশনে এবার পড়ুয়াদের সংস্কৃতের পাঠ দেবেন মুসলিম অধ্যাপক
সংস্কৃত পড়াবেন মুসলিম ও উপজাতি সম্প্রদায়ের শিক্ষকেরা, অনন্য নজির রামকৃষ্ণ মিশনের
মঙ্গলবার রামকৃষ্ণ মিশন বিদ্যামন্দিরে সংস্কৃতের সহকারী অধ্যাপক পদে নিয়োগ করা হয়েছে রমজান খান ও গণেশ টুডুকে। শিক্ষাব্যবস্থায় ধর্মনিরপেক্ষতার প্রশ্নে রামকৃষ্ণ মিশনের এহেন পদক্ষেপকে সাধুবাদ জানিয়েছেন অনেকেই। ২০১৮ সালেই রামকৃষ্ণ মিশন বিদ্যামন্দিরকে দেশের অন্যতম সেরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসাবে ঘোষণা করে মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রক।
চলতি সপ্তাহেই মুসলিম অধ্যাপকের ক্লাস করতে নারাজ বিএইচইউয়ের পড়ুয়ারা
অন্যদিকে চলতি সপ্তাহেই বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃত বিভাগে একজন মুসলিম অধ্যাপকের নিয়োগ ঘিরে তৈরি হয় অচলাবস্থা। গবেষক ফিরোজ খানের কাছে সংস্কৃতের পড়তে না চেয়ে উপাচার্যের বাড়ির সামনে প্রতিবাদ-বিক্ষোভে সামিল হয় পড়ুয়ারা। যদিও এই শিক্ষায় ধর্মীয় মেরু করণের ঘটনায় স্বভাবতই তাজ্জব হয় দেশের শিক্ষামহল।
২০০০ সালেও রামকৃষ্ণ মিশন বিদ্যামন্দিরের দর্শন বিভাগে নিয়োগ হয় একাধিক মুসলিম অধ্যাপকের
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সংস্কৃতে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর স্তরে সর্বাধিক নম্বর অর্জনকারী শেখ সাবির আলী বর্তমানে বারাসাতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃতের অধ্যাপক। বিদ্যামন্দিরে মুসলিম অধ্যাপক নিয়োগ এই প্রথম নয়। ২০০০ সালেও শামীম আহমেদকে বিদ্যামন্দিরের দর্শন বিভাগের শিক্ষক হিসাবে নিয়োগ করা হয়। মহাভারতের উপর গবেষণা করা এই মুসলিম অধ্যাপক বর্তমানে বিভাগীয় প্রধানের দায়িত্বও সামলাচ্ছেন। গত দুই দশক ধরে পড়ুয়াদের ভারতীয় দর্শনের পাঠ দিয়ে চলেছেন তিনি। আহমেদের সাথে ফরিদুল রহমানকেও ওই বিভাগে নিয়োগ করা হয়েছিল ওই সময়।
বেনারস হিন্দু ইউনিভার্সিটির ঘটনা প্রসঙ্গে নৃসিংহ প্রসাদ ভাদুড়ির বক্তব্য
বেনারস হিন্দু ইউনিভার্সিটিতে ছাত্রদের মুসলিম অধ্যাপকের ক্লাস না করতে চাওয়ার ঘটনায় গভীর হতাশা প্রকাশ করতে দেখা যায় বিশিষ্ট সংস্কৃত পণ্ডিত নৃসিংহ প্রসাদ ভাদুড়িকে। এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, "ইংরেজিতে সংস্কৃত অধ্যয়নের প্রশ্ন এলেই যে কোনও ব্যক্তিকেই স্যার জন জর্জ উড্রোফের মহানির্বানতন্ত্রের অনুবাদ পড়তে হবে। তাঁর দ্বারা অনুবাদ করা হিন্দু ধর্ম সম্পর্কিত সমালোচনামূলক রচনা সম্বলিত বইগুলিও এই ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা রাখে। তখন তো কেউ কেউ ধর্ম খুঁজতে যায় না।"
এখানেই না থেমে তিনি আরও বলেন, "ফ্রেড্রিক ম্যাক্স মুলার রচিত দ্য স্যাক্রেড বুকস অফ দ্য ইস্ট সংস্কৃত শিক্ষার্থীদের অন্যতম একটি পাঠ্য। প্রতিবছর হাইডেলবার্গ, শিকাগো এবং অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সংস্কৃতের পণ্ডিতরা এসে বিএইচইউতে বক্তৃতা দেন। তখন তাদের কাউকেই থামাতে দেখা যায় না শিক্ষার্থীদের। তাহলে তাদের এখন এতটা হিংস্র হয়ে পড়ার কারণ কি ? মুসলিম হওয়ার কারণেই কি ফিরোজের উপর এই বৈষম্যমূলক আচরণ ? "
মুসলিম অধ্যাপক নিয়োগে রামকৃষ্ণ মিশনের বিশিষ্ট শিক্ষাবিদরা কি ভাবছেন জেনে নিন
রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের সাধারণ সম্পাদক স্বামী সুভিরানন্দ রমজান খান ও গণেশ টুডুর নিয়োগ প্রসঙ্গে বলেন, "আমরা প্রকৃতির বহুত্ববাদে বিশ্বাসী। রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব সর্বদা সমাজের সর্বস্তরে সম্প্রীতির প্রচারই করে গেছেন।" পাশাপাশি রামকৃষ্ণ বিবেকানন্দ এডুকেশনাল অ্যান্ড রিসার্চ ইন্সটিটিউটের উপাচার্য স্বামী আত্মপ্রিয়ানন্দ বলেন, "আমরা সহনশীলতা এবং সর্বজনীন গ্রহণযোগ্যতার অনুশীলন করি। স্বামীজি সর্বজনীন ধর্ম সম্পর্কে কথা বলতেন এবং আমরা বাস্তবে এটি অনুশীলন করি।"