আপাতত বিজেপি সঙ্গ নয়, মুকুল গড়ছেন নতুন দল, চূড়ান্ত দলের প্রতীকও
২০ বছরের সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে গিয়েছে। এবার আর পিছুটান নেই তাঁর। এই অবস্থায় দাঁড়িয়ে বিজেপি নয়, নতুন দল গঠন করে ফের রাজনৈতিক ইনিংস শুরু করার ব্যাপারে আরও এক পা এগোলেন মুকুল রায়। দলের নাম, দলের প্রতীক সবই প্রায় চূড়ান্ত, এখন স্রেফ পথ চলা শুরুর অপেক্ষা তাঁর নতুন দলের। পুজোর পরই তিনি নতুন ইনিংসের সূচনা করে দেবেন বলে রাজনৈতিক মহলের একাংশের মত।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যেমন কংগ্রেস ছাড়ার আগে তৃণমূল কংগ্রেসের ক্ষেত্র প্রস্তুত করে রেখেছিলেন মুকুল রায়, তেমনই মুকুল রায় তৃণমূল কংগ্রেস ত্যাগের আগে তাঁরও মাথার উপর চাল প্রস্তুত করা হয়ে গিয়েছিল। এক্ষেত্রেও তাঁর অনুগামীদের দিয়ে নতুন দলের রেজিস্ট্রেশন করিয়ে রেখেছেন তিনি নিজেই। এবার অপেক্ষা সেই দলে মুকুল রায়ের যোগ দেওয়ার। তৃণমূলের এক সময়ের সেকেন্ড ইন কম্যান্ড এবার এক নতুন দলের হাইকম্যান্ড হতে চলেছেন।

জানা গিয়েছে, সেই নতুন দলেও থাকছে তৃণমূলের ছোঁয়া। তাঁর দলের নাম হচ্ছে জাতীয়তাবাদী তৃণমূল কংগ্রেস পার্টি বা ন্যাশনালিস্ট তৃণমূল কংগ্রেস পার্টি। নির্বাচন কমিশনের কাছে ইতিমধ্যেই সেই দলের নিবন্ধন হয়ে গিয়েছে। এবং বর্তমানে সেই দলের সভাপতি হিসেবে রয়েছেন মুকুল ঘনিষ্ঠ এক তৃণমূল নেতা। এবং গুরুত্বপূর্ণ সমস্ত পদেই মুকুল অনুগামীদের নাম রয়েছে।
সম্প্রতি এক হিন্দি সংবাদপত্রে একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ পায়। সেই বিজ্ঞপ্তিতে স্পষ্ট মুকুলের ভবিষ্যৎ পদক্ষেপ। নতুন ওই দলের সদর দফতর হিসেবে উল্লেখ রয়েছে কোচবিহারের দিনহাটার থানাপাড়া রোডের নাম। কোথাও মুকুল রায়ের নাম না থাকলেও যাঁরা রয়েছেন তাঁরা সবাই মুকুল অনুগামী ও মুকুল-ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত। রয়েছেন সৃজন রায়, পৃথ্বীশ দাশগুপ্ত থেকে শুরু করে ফরিদ খান, কাসেম আলির মতো তৃণমূলের সংখ্যালঘু মুখরাও। দলের সভাপতি হিসেবে অমিতাভ মজুমদারের নাম রয়েছে। এমনকী এই দলের প্রতীকও তৈরি হয়ে গিয়েছে। জোড়া পাতা হবে এই দলের প্রতীক।
সম্প্রতি মুকুল রায় দিল্লি গিয়েছিলেন। মহালয়ার দিনেই তিনি নয়া দল তৈরির সমস্ত কাজকর্ম সেরে ফেলেন। যা জটিলতা ছিল সেইসব সমস্যা মিটিয়ে তিনি অনেকটাই চাপমুক্ত হয়ে ফেরেন তিনি। কলকাতার ফিরে একাধিক পুজো উদ্বোধনেও দেখা যায় মুকুল রায়কে। রবিবার তিনি তৃণমূল কংগ্রেসের সাসপেন্ডেড সাংসদ কুণাল ঘোষের পুজো উদ্বোধনে গিয়ে কটাক্ষ করেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে। তারপরই তাঁর দল ছাড়া নিয়ে জল্পনা বেড়ে যায়। সেইমতোই মহাপঞ্চমীতে তৃণমূল ছাড়ার কথা ঘোষণা করে দেন মুকুল রায় নিজেই। অদ্যাবধি পরে দলের মহসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় মায়ের বোধনের আগের দিনই তৃণমূল থেকে মুকুল রায়কে 'বিসর্জন' দিয়ে দেন।
মুকুলবাবু তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যাবেন কি না তা নিয়ে দীর্ঘ জল্পনা চলছিল। তবে রাজনৈতিক মহলের একাংশের মতে, মুকুল রায় বিজেপি থেকে বার্তা পান, তাঁকে সরাসরি দলে নেবে না কেন্দ্রের শাসক দল। তিনি যদি নতুন দল গড়েন তাঁকে এনডিএ-তে স্বাগত জানানো হতে পারে।
সেই আঙ্গিকে নতুন দলের ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারেন মুকুল। নতুবা সাম্প্রদায়িক তকমা লেগে থাকা বিজেপি থেকে তিনিও সমদূরত্ব রেখে ভবিষ্যতে তাঁর লড়াইয়ের পথ প্রস্তুত করতে পারেন তিনি। আপাতত নতুন দলকে শক্তিশালী করাই তাঁর এক ও একমাত্র লক্ষ্য হবে।
সেই লক্ষ্যে তৃণমূলের একটা বড় অংশ যেমন আসতে পারেন তাঁর সঙ্গে। তেমনই আসতে পারেন সিপিএম ও কংগ্রেসের বহু নেতা-নেত্রীই। সেইসঙ্গে কুণাল ঘোষ ও ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়দের মতো সাসপেন্ডেড সাংসদরাও মুকুলের দলে নাম লেখাতে পারেন। আদি তৃণমূলীরা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়র দলের প্রতি সন্তুষ্ট নন। এমন অনেক নেতা-কর্মী মুকুলের দলে ভিড়তে পারেন। সেদিক দিয়ে পঞ্চায়েত ভোটের আগে মমতার কাছে মাথাব্যাথার কারণ হয়ে উঠতে পারেন একদা তাঁর ছায়াসঙ্গী মুকুল রায়।