মুকুলের তালিকায় ৮০ জনের নাম! তৃণমূল ছাড়তে প্রস্তুত কোন সাংসদ-বিধায়করা
বিজেপিতে গেলে কারা আসতে পারেন, কারা বাদ যেতে পারেন। আর নতুন দল গড়লে তিনি কাদের সঙ্গে পাবেন, তার তালিকাও প্রস্তত। মুকুল অনুগামীদের কথামতো সেই তালিকা কিন্তু বেশ লম্বাই।
ক'দিন আগেই শোনা যাচ্ছিল তৃণমূলের অনেক সাংসদ ও বিধায়ক পা বাড়িয়ে রয়েছেন বিজেপিতে। তবে মুকুল রায় তৃণমূল ছাড়ার পর সেই আলোচনা ঘুরে গিয়েছে। এখন মুকুল রায়ের সঙ্গে কতজন বিধায়ক-সাংসদ রয়েছেন- তা নিয়েই যাবতীয় জল্পনা চলছে রাজনৈতিক মহলে। কান পাতলেই আলোচনা- কারা আসতে পারেন তৃণমূল ছেড়ে? আর কী হলেই বা তাঁরা ভিড়বেন মুকুল শিবিরে?
আলোচনায় শোনা যাচ্ছে অনেক তৃণমূল সাংসদ-বিধায়কেরই নাম রয়েছে মুকুল রায়ের তৈরি তালিকায়। এমনকী মুকুল রায় এই অঙ্কও কষে ফেলেছেন- বিজেপিতে গেলে কারা আসতে পারেন, কারা বাদ যেতে পারেন। আর নতুন দল গড়লে তিনি কাদের সঙ্গে পাবেন, তার তালিকাও প্রস্তত। মুকুল অনুগামীদের কথামতো সেই তালিকা কিন্তু বেশ লম্বাই। অন্তত ৫০ থেকে ৬০ জন বিধায়ক ও ১৫-২০ জন সাংসদ রয়েছেন মুকুলের তালিকায়।
ভাঙাগড়ার এই খেলায় মুকুল রায় সফল হলে তৃণমূলের কপালে দুঃখ রয়েছে। তৃণমূল চাইছে তড়িঘড়ি সেই পথ বন্ধ করতে। রাতারাতি দলের অন্দরে ক্ষোভ-বিক্ষোভ মেটানোর চেষ্টা করছেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী তথা দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মুকুলকে শিক্ষা দিতে তিনি নিজে আসরে নেমে দলের ফাঁক পূরণ করছেন। দলের ভাঙন রোধ করতে প্রত্যয়ী ভূমিকা নিচ্ছেন নেত্রী স্বয়ং।
কিন্তু কারা রয়েছেন মুকুলের শিবিরের দিকে পা বাড়িয়ে। এ প্রসঙ্গে বলে রাখা দরকার মুখ্যমন্ত্রীর কেন্দ্র থেকেই বেশ কয়েকজন নিচু সারির নেতা সম্প্রতি যোগ দিয়েছিলেন বিজেপিতে। তাঁরা সবাই-ই মুকুল ঘনিষ্ঠ বলেই পরিচিত। তাঁর মধ্যে এক নেতা বাবান ঘোষ এখন মুকুল রায়ের সঙ্গে বিজেপির যোগসূত্র তৈরি করছেন। আর অন্যদিকে রয়েছেন ফরিদ খানের মতো তৃণমূলের সংখ্যালঘু সেলের নেতা। তিনি চাইছেন, বিজেপি নয়, মুকুল রায় নতুন দল গড়ুন।
এই অবস্থায় দাঁড়িয়ে নারদে অভিযুক্ত অনেক নেতা-নেত্রীই মুকুল রায়ের সঙ্গে যোগযোগ রেখে চলেছেন। মুকুল রায় নতুন দল করলে তাঁরা নির্দ্বিধায় যেতে পারেন সেই দলে। এক্ষেত্রে যেমন দু-একজন সাংসদ রয়েছেন, তেমনই রয়েছেন কয়েকজন মন্ত্রী-বিধায়কও। হাওড়া ও ২৪ পরগনার কয়েকজন বিধায়ক-সাংসদের নামও রয়েছে এই তালিকায়।
ইতিমধ্যেই উত্তরবঙ্গের বেশ কয়েকজন নেতা-নেত্রীর নাম শোনা গিয়েছে। সৌরভ চক্রবর্তী থেকে শুরু করে কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ মুখোপাধ্যায়, সৌমিত্র খান থেকে নরোত্তম রায়দের নাম প্রকাশ্যে এসেছে। তাঁরা মুকুল রায়ের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। তারপর মুকুল তৃণমূল ছাড়ার কথা ঘোষণার পরই এক সাংসদের ফেসবুক পোস্ট ঘিরেও কম জল্পনা হয়নি।
সেই সাংসদ অনুপম হাজরার নামও মুকুলের তালিকায় থাকা স্বাভাবিক। দীর্ঘদিন ধরেই তৃণমূলে নিষ্ক্রিয় শীলভদ্র দত্তের মতো নেতারা। তিনিও থাকতে পারেন মুকুলের তালিকায়। এছাড়া অনেক বিধায়ক-সাংসদ রয়েছেন, যাঁরা তৃণমূলে একেবারেই কোণঠাসা, তাঁদের সঙ্গেও যোগযোগ রাখছেন মুকুল রায়। আর যাঁরা কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে এসেছেন মুকুলের হাত ধরে, তাঁরা প্রায় সকলেই রয়েছেন তৃণমূলের বহিষ্কৃত এই সাংসদের সঙ্গে।
খুব গোপনেই এই কাজ করছেন মুকুল রায়। ঠিক যেভাবে তিনি অন্য দল ভেঙে তৃণমূলের শক্তিবৃদ্ধি করিয়েছিলেন। একের পর এক পুরসভা, জেলাপরিষদ, পঞ্চায়েত দখলে এনে দিয়েছিলেন তৃণমূলকে, সেই একই পদ্ধতিতে পাল্টা দিতে তৈরি পুরনো টিমকে। পুরনো খেলাতেই মাত দিয়ে তিনি নিজের শিবিরকে শক্তিশালী করতে চাইছেন। শুধু উপরতলার নেতারাই নন, নিচুতলাও নেতা-কর্মী এনেও শক্তপোক্ত ভিত তৈরি করাই তাঁর লক্ষ্য।
কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেওয়া বিধায়কের সংখ্যাটা তো নেহাত কম নয়। শুধু এই আমলেই তুষারকান্তি ভট্টাচার্য থেকে শুরু করে হাসানুজ্জামান শেখ, রবিউল আলম চৌধুরী, শম্পা দড়িপা, কানাইলাল আগরওয়াল, মানস ভুঁইয়া, শঙ্কর সিং, অরিন্দম ভট্টাচার্য-রা তৃণমূলে নাম লিখিয়েছেন।
সোহরাব হোসেনদের মতো প্রাক্তনীরাও এখন তৃণমূল শিবিরে। কিন্তু এঁদের অনেকেই যে এখন মুকুলপন্থী হয়ে উঠেছেন, তা অজানা নয় স্বয়ং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়েরও। তাই আগেভাগে সাবধান হচ্ছেন তিনি। কিন্তু আদৌ কি ক্ষত দূর হচ্ছে, নাকি তলে তলে মুকুলের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেই চলছেন তাঁরা। ক্রমেই তৃণমূলের চিন্তার কারণ হয়ে উঠছেন মুকুল রায়।
তবে মুকুল রায় যদি বিজেপিতে যোগ দেন, সেক্ষেত্রে অনেক নেতা-নেত্রীই তৃণমূল ছাড়বেন না। সেক্ষেত্রে অধিকাংশই মুখ বুজে তৃণমূলে পড়ে থাকাই শ্রেয় মনে করছেন। পঞ্চায়েত ভোট এগিয়ে এলেও বিজেপি সে অর্থে হালে পানি পাবে না বলেই বিশ্বাস ওইসব নেতাদের। আর তাঁদের পক্ষে বিজেপিতে যাওয়াও সম্ভব নয়। তাই মুকুল রায় এখন উভয় সংকটে পড়েছেন। সাত-পাঁচ ভেবেই এগনোর চেষ্টা করে যাচ্ছেন তিনি।