মুকুলের রাজনৈতিক কেরিয়ারে উত্থান-পতন, কোন পথে বিজেপি হয়ে ফের তৃণমূলে ফেরা
মুকুলের রাজনৈতিক কেরিয়ার, তৃণমূল থেকে বিজেপি হয়ে ফের তৃণমূলে কখন কোন পদে
মুকুল রায় তৃণমূলে ফিরে রাজনৈতিক কেরিয়ারের বৃত্ত সম্পূর্ণ করলেন কি না, তা নিয়ে বিতর্ক থাকবেই। কারণ তাঁর রাজনৈতিক কেরিয়ারের সূত্রপাত কংগ্রেস থেকে। তিনি কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য হয়েছিলেন। আর সেই মুকুল রায় প্রায় ২০ বছরের সম্পর্ক ছিন্ন করে যোগ দিয়েছিলেন বিজেপিতে। চার বছর সেখানে কাটিয়ে ফিরে এসেন মমতার তৃণমূলে।
মুকুলের রাজনৈতিক কেরিয়ারের প্রথম দশ
মুকুল রায় রাজনৈতিক কেরিয়ার শুরু করেছিলেন যুব কংগ্রেস নেতা হিসেবে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন যুব কংগ্রেস নেত্রী তখন তাঁর টিমে ছিলেন মুকুল রায়। কংগ্রেসে তিনি বড় পদ পাননি, তবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ নেতা হিসেবে তিনি উঠে এসেছিলেন অনেক ভিড়ের মধ্যে থেকে।
মমতার হাতে হাত মিলিয়ে তৃণমূল তৈরি
১৯৯৮ সালে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন রাজ্যে পরিবর্তন আনতে কংগ্রেসের ছত্রছায়া ত্যাগ করে তৃণমূল কংগ্রেস তৈরি করতে মনস্থ করেছিলেন, তার অগ্রভাগে ছিলেন মুকুল রায়। মুকুল রায়ের হাত দিয়েই তৈরি হয়েছিল তৃণমূল কংগ্রেস। তারপর সেই দলের সর্বেসর্বা হয়ে উঠেছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মমতাকে নেত্রী মেনে সেকেন্ড ইন কম্যান্ড ছিলেন তিনি।
২০০১ সালে বিধানসভা নির্বাচনে পরাজয়
এরপর তৃণমূলের টিকিটে মুকুল রায় প্রথমবার নির্বাচনে লড়েছিলেন। ২০০১ সালে জগদ্দল বিধানসভা কেন্দ্র থেকে নির্বাচনে লড়াই করে তিনি জিততে পারেননি। তাঁকে হার মানতে হয়েছিল প্রথম নির্বাচনে। তারপর থেকে আর তিনি ভোটে দাঁড়াননি। দলের সংগঠনকে সাজানোর গুরু দায়িত্ব নিয়েছিলেন নিজের কাঁধে।
রাজ্যসভাস সাংসদ থেকে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী
২০০৬ সালে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁকে দলের সাধারণ সম্পাদক নিযুক্ত করেন। ওই সালেই তিনি রাজ্যসভার সাংসদও হন। ২০১২ সাল পর্যন্ত তিনি রাজ্যসভার সদস্য ছিলেন। ২০১২ সালের ২০ মার্চ তাঁর রাজ্যসভার সাংসদ পদের মেয়াদ শেষ হয়। পুনরায় তিনি সাংসদ হিসেবে রাজ্যসভায় যান। এরই মধ্যে তিনি কেন্দ্রীয় জাহাজ প্রতিমন্ত্রী ও রেলমন্ত্রী নিযুক্ত হন।
তৃণমূল ও রাজ্যসভার সাংসদ পদ ত্যাগ
২০১৫ সালের পর থেকে তৃণমূলে তাঁর গুরুত্ব কমতে থাকে। নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে তাঁর মনোমালিন্যের খবর সামনে আসতে থাকে। ফলে মুকুল রায়ের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হয় তৃণমূলের। ২০১৭ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর তিনি তৃণমূল কংগ্রেস থেকে পদত্যাগ করেন। রাজ্যসভার সাংসদ পদ ছাড়েন ১১ অক্টোবর।
বিজেপিতে যোগদান, তৃণমূলে সম্পর্ক ছিন্ন
তৃণমূল ত্যাগের পর মুকুল রায় কোনও দলে যোগ দেবেন, নাকি নিজে কোনও দল গড়বেন, তা নিয়ে জল্পনা তৈরি হয়। দীর্ঘ টালবাহানার পর মুকুল রায় বিজেপিতে যোগ দিতেই মনস্থ করেন। সেইমতো ২০১৭ সালের ৩ নভেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে তিনি বিজেপিতে যোগদান করেন। ছিন্ন হয় তৃণমূলের সঙ্গে সব সম্পর্ক।
পদহীন মুকুলের পঞ্চায়েত ও লোকসভায় সাফল্য
বিজেপিতে যোগদানের পর তাঁর হাত ধরেই শুরু হয় বঙ্গে গেরুয়া উত্তরণ। ২০১৮ সালের পঞ্চায়েত ও ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে তাঁর নেতৃত্বে বিজেপি সাফল্য পায়। পদহীন থেকেও তিনি বিজেপির সংগঠনকে বাড়িয়ে নিয়ে যেতে থাকেন। বিজেপি পদহীন মুকুলের কাছে তখন তৃণমূলকে হারানোই প্রধান লক্ষ্য।
একুশের ভোটে জিতে প্রথমবার বিধায়ক মুকুল
একুশের বিধানসভা নির্বাচনের আগে বিজেপি তাঁর সর্বভারতীয় সহ সভপাতির পদ দেয়। কিন্তু আদতে সেই পদের কোনও গুরুত্ব ছিল না। তিনি গুরুত্ব ও দায়িত্ব চেয়েছিলেন বিজেপির কাছ থেকে, তা তিনি পাননি। পেয়েছিলেন কৃষ্ণনগর উত্তর বিধানসভার টিকিট। একুশের ভোটে জিতে প্রথমবার বিধায়ক হন মুকুল রায়।
চারবছর বিজেপিতে কাটিয়ে তৃণমূলে ঘরওয়াপসি
২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি জিততে পারেনি। পরিবর্তনের লক্ষ্যে তৃণমূলের কাছে গোহারা হয় বিজেপি। এরপর থেকেই মুকুলকে নিয়ে জল্পনা চলছিল। ১১ জুন শুক্রবার মুকুলের ঘরওয়াপসি হয়। চারবছর বিজেপিতে কাটিয়ে তৃণমূলে ফিরে আসেন তিনি।
একুশের কুরুক্ষেত্রের আগেই কি চূড়ান্ত ছিল মুকুলের ঘরে ফেরা! জল্পনায় কিছু বিবৃতি