মুকুল বেসুরো হয়েও ‘খেলা’ চালিয়ে যাচ্ছেন, তৃণমূলে ভাঙন অন্তরালে পাঠিয়েছে পিকে-কে
মুকুল বেসুরো হয়েও ‘খেলা’ চালিয়ে যাচ্ছেন, তৃণমূলে ভাঙনে প্রশান্ত কিশোর অন্তরালে
প্রশান্ত কিশোর তৃণমূলের দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রশ্ন উঠছিল তিনি কি তৃণমূলের মুকুল রায়র অভাব পূরণ করতে পারবেন? ২০১৯-এর পর ভাঙন রুখে দলকে ফের চাঙ্গা করে তুলেছিলেন তিনি এবং বার্তা দিয়েছিলেন ভোট কৌশলে এবং প্রচার পরিকল্পনায় তিনিও কমিত যান না। কিন্তু ২০২১-এ যে ধাক্কা একের পর এক দিয়ে যাচ্ছেন মুকুল রায়, তার জবাব এখনও নেই পিকে ওরফে প্রশান্ত কিশোরের কাছে।
শুভেন্দু-গড়ে তৃণমূলের 'হারাকিরি’! অনুগত সৈনিকদের ঘাড়ে কোপ, নেপথ্যে কি পিকের হাত
মুকুলের বিকল্প তৈরি হয়নি তৃণমূলে! পিকে-অভিষেকদের রসায়ন ব্যর্থ একুশের ভোটে
পাল্টা দেওয়া শুরু করেছেন মুকুল রায়
মুকুল রায় প্রায় গোটা ২০২০ সালই বিজেপিতে নির্লিপ্ত ছিলেন। সেভাবে সক্রিয় হননি করোনার বাজারে। তখন তৃণমূল একতরফা ভাবে তাঁদের শক্তি বাড়িয়ে নিয়েছে। বিজেপির নিচুতলায় অনেককে ভাঙিয়ে নিয়েছে। কিন্তু বিজেপির কেন্দ্রীয় সহ সভাপতি হওয়ার পর থেকেই ফের পাল্টা দেওয়া শুরু করেছেন মুকুল রায়।
মুকুল মাস্টারস্ট্রোক দিচ্ছেন একের পর এক
মুকুল রায় এতদিন যে অঙ্ক সাজিয়ে রেখেছেন ২০২১-এর নির্বাচন জয়ের, সেইমতোই তিনি তৃণমূলকে ভেঙে চলেছেন। ২০১৯-এর লোকসভা জিতেছিলেন তৃণমূল ভেঙে, ২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনেও তিনি একই পরিকল্পনায় জয় হাসিল করতে চাইছেন। সেই লক্ষ্যে তিনি মাস্টারস্ট্রোক দিয়েই চলেছেন একের পর এক।
শুভেন্দুকে নিয়ে তৃণমূলে বড় থাবা মুকুলের
২০২১-এর ভোটের আগে বিজেপিতে সক্রিয় হয়েই তিনি বড় থাবা বসিয়েছেন শুভেন্দু অধিকারীকে বিজেপিতে নিয়ে এসে। তাঁর হাত ধরে দাদার অনুগামী হিসেবে অনেকেই যোগদান করেছেন। আবার শুভেন্দুর সঙ্গে যোগদানের তালিকায় অনেক মুকুল অনুগামীর নামও ছিল। শীলভদ্র দত্তের মতো নেতারা তৃণমূল কংগ্রেস ছেড়েছেন।
ভিতরে ভিতরে খেলা চালিয়েই যাচ্ছেন মুকুল
শুভেন্দুকে বিজেপিতে যোগদান করিয়েও বসে নেই তিনি। তৃণমূলের কোমর ভেঙেছেন, এবার হাত-পাও গুঁড়িয়ে দিতে তিনি পরিকল্পনা কষছেন। দিল্লিতে বসেই তিনি বেসুরো শতাব্দী রায়কে দলে টানার চেষ্টা চালিয়েছিলেন। তিনিই অমিত শাহের সঙ্গে শতাব্দী রায়ের বৈঠকের মধ্যস্থতা করার চেষ্টা করেছিলেন। অর্থাৎ ভিতরে ভিতরে খেলা চালিয়েই যাচ্ছেন মুকুল রায়।
তৃণমূলের হেভিওয়েটদের টার্গেট করছেন মুকুল
তৃণমূল নেতাদের অধিকাংশের সঙ্গেই যোগাযোগ ছিল মুকুল রায়ের। সেই যোগাযোগ মুকুল রায় বিজেপিতে গেলেও বন্ধ করেননি। তিনি তৃণমূল পার্টিটাকে নিজে হাতে গড়েছিলেন। তৃণমূলের সংগঠন ২০ বছর ধরে সামলেছেন তিনি। ফলে সেই যোগাযোগ কাজে লাগিয়েই তৃণমূলের হেভিওয়েটদের টার্গেট করতে সমর্থ হচ্ছেন তিনি।
পিকে কোন জাদু বলে আটকাবেন মুকুল রায়
ঠিক এই কারণেই মুকুলকে ছুঁতে পারছেন না প্রশান্ত কিশোর। কেননা প্রশান্ত কিশোর হলেন একজন ভোট কৌশলী। প্রচার পরিকল্পনা তিনি করতে পারেন। কিন্তু একটা দলের সংগঠন তিনি গড়তে পারেন না। যে দলটার আগা-গোড়া জানেন মুকুল রায়, তাঁকে তিনি আটকাবেন কোন জাদু বলে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের থেকেও তৃণমূলে থাকাকালীন নেতা-কর্মীদের সঙ্গে বেশি যোগাযোগ ছিল মুকুল রায়ের।
প্রশান্ত কিশোর তৃণমূলের অনেকেরই না-পসন্দ
মুকুল রায় এই অ্যাডভান্টেজেই অনেককে পিছনে ফেলে দিতে পারেন। প্রশান্ত কিশোর প্রচার পরিকল্পনায়, প্রচারের আধুনিকীকরণে এগিয়ে থাকতে পারেন কিন্তু মুকুল রায়ের মতো যোগযোগ তিনি গড়ে তুলতে পারবেন না এই স্বল্প সময়ে। তারপর প্রশান্ত কিশোরের দলে নাক গলানোও অনেকে পছন্দ করছেন না। তিনি সমালোচিত হচ্ছেন।
মুকুলের খেলের কোনও জবাব আছে পিকের কাছে?
তাই প্রশান্ত কিশোরকে একটু ব্যাকফুটে ঠেলে দিতে বাধ্য হয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি সংগঠনের সেভাবে জোর দিচ্ছেন ন আর। আর সামনেও আসছেন না। নেপথ্যে থেকেই তিনি ভোটের কৌশল, প্রচারের কৌশল ঠিক করে দিচ্ছেন। মুকুল রায় যে খেল দেখাচ্ছেন, তার কোনও জবাব পিকের কাছে আছে কি না, তা বোঝা যাবে ভবিষ্যতেই।
মুকুল বেসুরো বাজলেও বিজেপির শক্তি বাড়াচ্ছেন
এদিকে মুকুল রায় মাঝেমধ্যে বেসুরো বাজলেও বিজেপির শক্তি কিন্তু বাড়িয়েই চলেছেন। তবে তিনি বিজেপিতে একইসঙ্গে নিজের দলও ভারী করছেন। ফলে তৃণমূল থেকে আসা নেতারা যে আদতে মুকুলের দলেই ভিড়ছেন তা বিলক্ষণ বোঝেন দিলীপ ঘোষ। স্বভাবতই মুকুল রায় ও দিলীপ ঘোষের মধ্যে দূরত্ব তৈরি হচ্ছে। মুকুল রায় পান থেকে চুন খসলেই বিজেপিতে বেসুরোও বাজছেন। বিজেপিতে পদ পাওয়ার পরও তিনি সরব হচ্ছেন।
বিজেপিতে অনুযোগ আছে মুকুলের, তবু ভাঙছেন তৃণমূল
সম্প্রতি বিজেপিতে গোঁসা করে ছিলেন দীর্ঘদিন। করোনাকালে তাঁকে সামনের সারিতে দেখা যায়নি বিজেপির আন্দোলনে। একা ছড়ি ঘোরাচ্ছিলেন দিলীপ ঘোষ। অবশেষে তিনি বিজেপির কেন্দ্রীয় সহসভাপতি মনোনীত হয়েছেন। দলে তাঁর গুরুত্ব বেড়েছে। আর তারপরই তিনি ফের সক্রিয় হয়ে উঠেছেন। সক্রিয় হয়েই তিনি কাজের কাজটা করে দিয়েছেন। শুভেন্দুকে বিজেপিকে আনতে সফলকাম হয়েছেন দীর্ঘ তিন বছরের প্রচেষ্টায়।
মুকুলকে সরিয়ে ভাইপো! প্রতিশোধ স্পৃহায় ভাঙছে তৃণমূল
মুকুল রায় আসলে বিজেপি বাড়ানোর জন্য যে তৃণমূল ভাঙছেন, তা নয়। তিনি চাইছেন তৃণমূলকে শেষ করতে। যে তৃণমূল তিনি নিজে হাতে গড়ে তুলেছিলেন। স্বপ্ন দিয়ে গড়ে তুলেছিলেন সংগঠন। সেই তৃণমূলে তিনি ব্রাত্য হয়ে গিয়েছেন। সেকেন্ড ইন কম্যান্ড থেকে তাঁর পদস্খলন হয়েছে। খোয়াতে হয়েছে সমস্ত পদ। তাঁর জায়গায় ভাইপোকে তুলে ধরেছেন নেত্রী।
পিকে-কে আনলেও সুবিধা হবে না, বোঝাচ্ছেন মুকুল
মুকুল চান তার জবাব দিতে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে তিনি বুঝিয়ে দিতে চান, মুকুল রায় থাকাকালীন কী হাল ছিল দলের। এখন মুকুল রায় নেই কী হাল হয়েছে। ২০১৯-এ প্রথম একটা বড় নির্বাচনে মুকুল রায়কে ছাড়া লড়েছে তৃণমূল। সেখানে মুখ থুবড়ে পড়তে হয়েছে। ৩৪ থেকে কমে হয়েছে ২২। আর মুকুল রায়ের চাণক্য-নীতিতে বিজেপি ২ থেকে বেড়ে হয়েছে ১৮। এবার পিকে-কে আনলেও যে সুবিধা হবে না তা পরতে পরতে বুঝিয়ে দিচ্ছেন মুকুল রায়।
মুকুলের 'শৈত্য' কাটতে না কাটতেই বিজেপিতে শুভেন্দু বনাম দিলীপ! দ্বৈরথ একুশের আগেই
মুকুল দল ভারী করলেই বেসুরো বাজছেন বিজেপিতে! দিলীপের সঙ্গে বসিয়ে বার্তা শাহের
শুভেন্দুকে মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার 'সুযোগ’ দিলেন মমতা! একুশের লড়াইয়ে চোখ নন্দীগ্রামে
{quiz_482}