তৃণমূলের প্রাক্তনী মুকুলই বিজেপির প্রধান স্থপতি, মমতার চিন্তা কমাতে পারছেন না পিকেও
তৃণমূলের প্রাক্তনী মুকুলই বিজেপির প্রধান স্থপতি, মমতার চিন্তা কমাতে পারছেন না পিকেও
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দলে এককালে সেকেন্ড ইন কম্যান্ড ছিলেন মুকুল রায়। সেই মুকুল রায়ই এখন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে চিন্তার কারণ হয়ে উঠেছেন। তৃণমূলের প্রাক্তনী মুকুল রায়ই পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির প্রধান স্থপতি হয়ে গিয়েছেন। তৃণমূলের অভ্যন্তরে বিভাজন রেখা স্পষ্ট করে দিচ্ছেন। তারপর তৃণমূল ভেঙে জয়ের ভিত গড়ছেন তিনিই।
বিজেপির সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন শোভন-বৈশাখীর! একুশে ভোটের মুখে মহাধাক্কা পদ্মশিবিরে
মুকুল-শুভেন্দুদের বিরুদ্ধে জিততে মমতা-পিকের পঞ্চবাণ, একুশের ভোটে তৈরি রণকৌশল
সর্বশক্তি নিয়ে ডায়মন্ড হারবারে থাবা বসাতে উদ্যত বিজেপি, দুর্গ রক্ষার চ্যালেঞ্জ অভিষেকের
বিজেপির জয়ের ভিত গড়ছেন মুকুল
তৃণমূলের সেকেন্ড ইন কম্যান্ড বর্তমানে বিজেপির কেন্দ্রীয় সহ সভাপতি। তিনি বিজেপির বাংলা জয়ের ভিত গড়ছেন। বিজেপির লক্ষ্য স্থির করে অমিত শাহ বলেছিলেন, ইস বার বার ২০০ পার। পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় ২৯৪ জন সদস্যের মধ্যে বিজেপির ২০০ বিধায়ক করার লক্ষ্যেই এগোচ্ছেন তিনি।
শুভেন্দু যা বলবে তা-ই করবেন তৃণমূলের শিশির! মোদীর সফরের আগে জল্পনা তুঙ্গে
যুব কংগ্রেস নেতা থেকে তৃণমূলে
যুব কংগ্রেস নেতা হিসাবে মুকুল রায় তাঁর রাজনৈতিক জীবনের সূচনা করেছিলেন। এরপর তিনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দলের অংশ হয়ে গিয়েছিলেন তৃণমূলের জন্মলগ্ন থেকে। ১৯৯৯ সালের জানুয়ারিতে কংগ্রেস থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে মমতা যখন নতুন দল গড়েছিলেন, মুকুল রায় সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেসের প্রতিষ্ঠাতা সদস্যদের মধ্যে ছিলেন।
কে কোথায় এগিয়ে, একুশের নির্বাচনের আগে কোচবিহারের সাত কেন্দ্রের হালহকিকৎ
মুকুল রায় দিল্লিতে তৃণমূলের মুখ ছিলেন
মুকুল রায় দিল্লিতে তৃণমূলের মুখ হিসাবে উঠে এসেছিলেন। ২০০৬ সালে তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক হন এবং রাজ্যসভার সাংসদ হন। ইউপিএ দ্বিতীয় সরকারে তিনি রেলমন্ত্রী হওয়ার আগে নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার আগে থেকেই তিনি দিল্লিতে বিভিন্ন মন্ত্রক সামলেছিলেন।
সারদা-নারদ কেলেঙ্কারির পরই দূরত্ব বৃদ্ধি
মমতা মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর মুকুল রায় রেলমন্ত্রক পান। মুকুল রায়ের কার্যকাল যদিও সংক্ষিপ্ত ছিল। ২০১২ সালের সেপ্টেম্বরে তৃণমূল ইউপিএ জোট ছেড়ে বেরিয়ে আসে। এরপর ২০১৩ সালে সারদা কেলেঙ্কারিতে তৃণমূল নেতাদের নাম জড়ায়। সেই তালিকায় ছিল মুকুল রায়ের নামও। নারদ স্টিং অপারেশনেও তাঁর নাম জড়ায়।
সিঙ্গুরের কংক্রিটের জঙ্গলে ফেরেনি সবুজ! শিল্প বনাম কৃষি একুশের ভোট-বাজারে
রাজ্যে ঘাঁটি তৈরিতে বিজেপিকে সহায়তা
তারপর থেকেই মুকুল রায় ও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মধ্যে দূরত্ব বাড়তে থাকে। ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে মুকুল রায়কে ছয় বছরের জন্য তৃণমূল থেকে বরখাস্ত করা হয়েছিল। নভেম্বরে তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে বিজেপিতে যোগ দেন। বাংলার রাজনীতিতে চাণক্য নামে অভিহিত মুকুল রায় সেই সময় থেকেই রাজ্যে ঘাঁটি তৈরিতে বিজেপিকে সহায়তা করে যাচ্ছেন।
পিকের কৌশলে এগিয়ে মমতা! একুশের ভোট প্রচারে হাতিয়ার যখন সোশ্যাল মিডিয়া
মুকুল রায়ের নেতৃত্বে সাফল্যের পর
এরপর ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে বিজেপি মুকুল রায়ের নেতৃত্বে চূড়ান্ত সাফল্য পায়। বিজেপি ১৮টি আসনে জয়লাভ করে। মুকুল রায়ের হাত ধরে আরও বাড়তে থাকে বিজেপি। তিনি বিজেপিতে নিয়ে আসেন তৃণমূলের বিধায়ক শোভন চট্টোপাধ্যায়, সব্যসাচী দত্ত, সুনীল সিং, বিশ্বজিৎ দাস, উইলসন চম্পামারী এবং মিহির গোস্বামীদের। হালে শুভেন্দু অধিকারী, রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় এবং জিতেন্দ্র তিওয়ারির মতো নেতাও তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে আসেন।
তৃণমূলে ভাঙন আর বিজেপির শক্তিবৃদ্ধি
তৃণমূলে ভাঙন আর বিজেপির শক্তিবৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে ভোটের মুখেও। প্রশান্ত কিশোরের মতো ভোট কৌশলী এনেও ভাঙন রুখতে ব্যর্থ তৃণমূল। সোমবারও তৃণমূলের পাঁচ বিধায়ক বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন টিকিট না পেয়ে। মমতা-ঘনিষ্ঠ সোনালি গুহ, রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য, জটু লাহিড়ী, শীতল সর্দার এবং দীপেন্দু বিশ্বাসের মতো হেভিওয়েটরা যোগদান করেন বিজেপিতে। আর সবাই মুকুল রায়ের সঙ্গে দেখা করেই বিজেপির পতাকা হাতে তুলে নেন।
ভাঙন-লীলা দেখাচ্ছন মুকুল-শুভেন্দুর মতো বিজেপি নেতারা
মুকুল রায় যোগ দেওয়ার পর থেকে তো তৃণমূল ভেঙেই চলেছেন। ২০১৯-এর আগে পরে তিনি একাই তৃণমূলের কোমর ভেঙে দিতে সফল হয়েছিলেন। এবার ২০২১-এর বিধানসভা ভোটের মুখে তৃণমূলে ছেড়ে বিজেপিতে নাম লিখিয়ে শুভেন্দু অধিকারী, রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়রাও ভাঙন-লীলা দেখাতে শুরু করেছেন।
তৃণমূল নেতাদের এনে বিজেপি পরিপুষ্ট হচ্ছে একুশে
বিধানসভা ভোটের মুখে তৃণমূলের রক্তক্ষরণ হয়েই চলেছে। শুভেন্দু ও রাজীবের সঙ্গে দল চেড়েছেন একঝাঁক নেতা-বিধায়ক। এখন ভোট ঘোষণা হয়ে যাওয়ার পরও বিজেপির নির্বাচনী কার্যালয়ে এনে দলবদলের শো দেখানো হচ্ছে। প্রতিদিনই তৃণমূল নেতাদের এনে দলবদল করানো হচ্ছে, বিজেপি পরিপুষ্ট হচ্ছে তৃণমূলের বিক্ষুব্ধদের পেয়ে।
প্রতিদিনই দলবদলের শো চলছে বিজেপির অফিসে
দুদিন আগে পাঁচ বিধায়ক যোগ দিয়েছিলেন বিজেপিতে। এবার এক মন্ত্রী, এক বিধায়ক ছাড়াও একঝাঁক তরুণ তুর্কি নেতা-নেত্রী যোগ দিলেন বিজেপিতে। এদিন দলবদলের শো হল দিলীপ ঘোষ ও রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরে। আগের দিন মুকুল-শুভেন্দুরা দিলীপ ঘোষকে নিয়ে তৃণমূল নেতাদের দলবদল করিয়েছিলেন।
বিজেপি কার্যত তৃণমূলের বি টিম হয়ে গিয়েছে একুশে
তৃণমূল যেমন ভাঙছে, গড়ছে বিজেপি। কিন্তু এই গড়ে ওঠা পরমাটিতে। পরগাছা নেতাদের এনে বিজেপি কার্যত তৃণমূলের বি টিম হয়ে গিয়েছে। দিলীপ ঘোষ-সহ কতিপয় নেতা রয়েছেন বিজেপির। বাকি সবই তৃণমূলের নেতা-নেত্রীরা আজ ভিড় জমাচ্ছেন বিজেপিতে। এই দলবদলের ফলে্ তাই বিজেপিকে পায়ের তলায় কতটা জমি দেবে প্রশ্ন রয়েই যায়।
এখন দলবদলের প্রতিযোগিতা চলছে মুকুল-শুভেন্দু-রাজীবদের
বিজেপিতে এখন তৃণমূল নেতাদের আধিক্য থাকায় তাঁদের মধ্যেই প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে কে কত সদস্যকে যোগদান করাতে পারেন। একদিন মুকুল রায় তো অন্যদিন শুভেন্দু অধিকারী বিজেপিতে যোগদান করাচ্ছেন। আবার রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ও পিছিয়ে নেই। নিজের নিজের শক্তি প্রদর্শন করে চলেছেন নেতারা।
{quiz_525}