মুকুল কি ঝরতে চলেছে বৈশাখীতেই! তৃণমূলে ‘ঘরওয়াপসি’র জল্পনা বাড়ল ভোট মিটতেই
মুকুল রায়ের বিজেপিতে যোগদানের পর থেকেই বিগত তিন বছরে এত বাড়বাড়ন্ত। মুকুলকে কাজে লাগিয়ে তৃণমূল ভেঙেই বঙ্গে শক্তিশালী হয়ে উঠেছে বিজেপি। কিন্তু বাংলায় পরিবর্তনের সরকার গড়ার স্বপ্নপূরণ হয়নি। ভোট মিটতেই শুরু হয়ছে পাল্টা বিজেপিতে ভাঙনের জল্পনা। আর সেই ভাঙন জল্পনায় সবার আগে নাম মুকুল রায়েরই।

মুকুল রায়ের হাত ধরেই বঙ্গে উত্থান বিজেপির
২০১৭ সালে তৃণমূলে গুরুত্ব হারিয়ে যোগ দিয়েছিলেন বিজেপিতে। তারপরই বিজেপিকে তিনি বাংলায় প্রকৃত পরিবর্তনের স্বপ্ন দেখতে শিখিয়েছিলেন। আর প্রতিজ্ঞা করেছিলেন তৃণমূলকে শেষ করে দেওয়ার। তাঁরই হাত ধরে ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনে বাংলায় বিজেপি এক ধাক্কায় দুই থেকে বেড়ে ১৮টি আসন পায়।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের লড়াকু মানসিকতার কাছে হার
রাজনৈতিক মহল মনে করে, ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনে বঙ্গে বিজেপির বাড়বাড়ন্তের পিছনে ছিলেন মুকুল রায়ই। কার্যত তাঁর সাজানো ঘুঁটিতেই দিশেহারা হয় তৃণমূল। তৃণমূলকে ভেঙেই তিনি বিজেপির উত্থান ঘটিয়েছিলেন বঙ্গে। এরপর ২০২১-এর কুরুক্ষেত্রে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের লড়াকু মানসিকতার কাছে হার মানতে হয় বিজেপির ফুল টিমকে।

মুকুল রায় বেসুরো! বিধানসভায় তাৎপর্যপূর্ণ মন্তব্য
একুশের নির্বাচন চলাকালীনই মুকুল রায় বেসুরো বাজতে শুরু করেছিলেন। ভোট মিটতেই তিনি জল্পনার পারদ আরও চড়িয়ে দেন। তাঁর পদক্ষেপ, নানা মন্তব্য ঘিরে এখন চর্চা তুঙ্গে। বিজেপির শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে তিনি আসেননি। শরীরিক অসুস্থতার দোহাই দিয়ে তিনি অনুপস্থিত থাকেন। তারপর এদিন তিনি বিধানসভা বিধায়ক হিসেবে শপথ নিতে গিয়ে তাৎপর্যপূর্ণ মন্তব্য করেন।

মুকুল-সুব্রত বৈঠকে জল্পনার পারদ রাজ্য রাজনীতিতে
শুক্রবার বিধানসভায় শপথগ্রহণ করতে বিধানসভায় আসেন মুকুল রায়। তখনই মুকুল রায়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ হয় তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সির। কথাও বলেন দুজনে। এরপর তাঁকে শপথ বাক্য পাঠ করান প্রোটেম স্পিকার সুব্রত মুখোপাধ্যায়। খুব স্বল্প কিছুক্ষণই বিধানসভায় ছিলেন মুকুল রায়। তখনই এক মন্তব্যে জল্পনা বাড়ে।

মুকুলের নীরব বাণী, কমেন্টের ঝড় সোশ্যালে
একাধিক বিষয়ে প্রশ্ন করা হলেও মুকুল রায় এদিন প্রায় নীরব ছিলেন। শুধু বলেন, কখনও সখনও চুপ থাকতে হয়। যা বলার একদিন সবাইকে ডেকেই বলবেন? এরপরই সোশ্যাল মিডিয়ায় কমেন্টের ঝড় বইতে শুরু করে। সবাইতে ডেকে কী বলবেন মুকুল রায়? তা নিয়ে জোর চর্চা চলে। মুকুলের তৃণমূলে ঘরওয়াপসি নিয়েই অধিকাংশ কমেন্ট পোস্ট হতে থাকে।

বিধানসভার প্রথম দিনেই ‘বোমা’ মুকুলের
মুকুল রায় কৃষ্ণনগর উত্তর কেন্দ্র থেকে জীবনে প্রথমবার প্রতিনিধি নির্বাচিত হন মানুষের ভোটে। তারপর থেকে সেভাবে বিজেপি দফতরমুখো হননি তিনি। তা নিয়ে জল্পনা চলছিলই। আর সেই জল্পনা আরও বাড়িয়ে দিল মুকুলের ওই মন্তব্য। বিজেপির বৈঠক আগেই এড়িয়েছিলেন, এবার বিধানসভা পা রাখার প্রথম দিনেই ছোট্ট একটা মন্তব্যে বোমা ফাটালেন তিনি।

মুকুল রায় কি এড়াতে চাইছেন বিজেপিকে? প্রশ্ন
মুকুল রায় জেপি নাড্ডার উপস্থিতিতে দলীয় শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠনে আসেননি। তারপর এদিন নব নির্বাচিত পরিষদীয় দলের বৈঠক ছিল বিজেপির। তাৎপর্যপূর্ণভাবে সেই বৈঠকে মুকুল রায় থাকলেন না। বিজেপির পরিষদীয় দলের বৈঠকে মুকুলের এই না থাকা নিয়েও চলছে জল্পনা। প্রশ্ন উঠেছে মুকুল রায় কি এড়াতে চাইছেন বিজেপিকে?

দল পদ দিয়েছিল, একুশে গুরুত্ব দেয়নি মুকুলকে
মুকুল রায় বিধানসভা নির্বাচনে লড়াই করতে চাননি। তা সত্ত্বেও তাঁকে প্রার্থী করা হয়েছিল। তিনি চেয়েছিলেন তাঁর নেতৃত্বেই লড়ুক। দল তাঁকে সেই গুরুত্ব দেয়নি একুশের নির্বাচনে। বিজেপির সর্বভারতীয় সহ সভাপতি হলেও, তিনি একটি কেন্দ্রেই বন্দি হয়ে গিয়েছিলেনষ কোনও প্রচারে অংশ নেননি গোটা নির্বাচনে।

ভোট চলাকালীনই মুকুল গুটিয়ে নিয়েছিলেন
এই পরিপ্রেক্ষিতে মুকুল রায়ের একটি মন্তব্য ভোটের প্রাক মুহূর্তেই জল্পনা বাড়ায়। মুকুল রায় বলেন, কখন জায়গা ছাড়তে হয় তিন জানেন। তাঁর এই জায়গা ছাড়ার বার্তা আর নতুনের এগিয়ে দেওয়ার বার্তার পিছনে কোনও তাৎপর্য ছিল কি না, তা ক্রমশ প্রকাশ্য। বিজেপিতে শুভেন্দু-রাজীবদের আগমনের পর নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছিলেন মুকুল রায়।

মমতার চোখে ভালো মুকুলের মন্তব্যে জল্পনা
তারপর নন্দীগ্রামে ভোটের মুখে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যেভাবে শুভেন্দুকে বিঁধে মুকুল রায়ের ঢালাও প্রশংসা করেছিলেন, তাতে রাজনৈতিক মহলে অন্য কিছু ভাবতে শুরু করেছিল। সেই ভাবনাকেই আরও তাৎপর্য বাড়িয়ে দিল মুকুল রায়ের এদিনের মন্তব্য। মুকুলকে ভালো বলা যেমন মমতার তাৎপর্যপূর্ণ মন্তব্যের মধ্যে পড়ে, তেমনই মুকুলের যা বলার পরে ডেকে বলবেন সুলভ মন্তব্যেও অনেক কিছু লুকিয়ে রয়েছে।

বৈশাখীতেই ঝরে যেতে পারেন মুকুল রায়!
এর মধ্যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আবার বলে দিয়েছেন, যাঁরা অভিমান করে দল ছেড়েছেন, তাঁদের জন্য দরজা খোলা। এখন দেখার মুকুল রায় সেই পথে পা বাড়ান কি না! বিজেপির একটি সূত্র জানিয়েছে, মুকুল রায় অসুস্থ। তাই বিরোধী দলনেতা পদ তাঁকে দেওয়া হবে না। কারণ অতিরিক্ত চাপ নিতে হবে ওই পদে। শুভেন্দু অধিকারীই বিরোধী দলনেতা পদে এগিয়ে। বিজেপিতেও শুভেন্দুর সঙ্গে লড়াইয়ে পিছু হটে বৈশাখীতেই ঝরে যেতে পারেন মুকুল রায়।