মুকুল রায় হঠাৎ কেন নীরব! একুশের ভোট মরশুমে কি হার মানলেন দিলীপ-শুভেন্দুদের কাছে
মুকুল রায় কেন চুপ! একুশের ভোট মরশুমে কি হেরে গেলেন দিলীপ-শুভেন্দুদের কাছে
তৃণমূলের জন্মলগ্ন থেকেই মুকুল রায় ছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডান হাত। তৃণমূলের সঙ্গে ২০ বছরের সম্পর্ক ছিন্ন করে মুকুল রায় বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন। বিগত দুটি নির্বাচনে মুকুল রায় একা হাতে তৃণমূলকে জমি ধরিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু একুশের দায়িত্ব তাঁর কাঁধে বর্তায়নি। আর তাঁকে সক্রিয়ভাবে পাওয়াও যাচ্ছে না একুশের ভোটে। তাই জল্পনা শুরু হয়েছে মুকুল রায়কে নিয়ে।
২ থেকে ১৮, বিজেপির আসনপ্রাপ্তির রূপকার ছিলেন মুকুল
দলের সেকেন্ড ইন কম্যান্ড হয়েই তিনি ক্ষান্ত ছিলেন না, আদতে বঙ্গ রাজনীতিতে তৃণমূলের চাণক্য বলে তাঁকে অভিহিত করা হত। বিজেপিতে যাওয়ার পর খোদ কৈলাশ বিজয়বর্গীয় তাঁকে বঙ্গ রাজনীতির চাণক্য বলে আখ্যায়িত করেন। কেননা তিনিই ছিলেন ২০১৯-এর নির্বাচনে ২ থেকে ১৮ আসনপ্রাপ্তির রূপকার।
বিধানসভা ভোটে প্রার্থী হওয়ার পর নিশ্চুপ কেন মুকুল
কিন্তু একুশের নির্বাচনে তাঁকে পুরনো ফর্মে পাওয়া যাচ্ছে না। বিধানসভা ভোটে প্রার্থী হওয়ার পর তিনি নিশ্চুপ হয়ে গিয়েছেন। ভোট প্রচারেও তাঁকে তেমন সক্রিয় হতে দেখা যায়নি। দলের সভা, মিটিয়-মিছিলেও তাঁকে খুব কম দেখা যাচ্ছে। এমনকী মোদী-শাহ-নাড্ডাদের পাশেও তাঁকে দেখা যাচ্ছে না।
কেন মুকুল নীরব বাংলার ভোট উৎসবে ঘটনার ঘনঘটায়
রাজ্য রাজনীতিতে ভোটের আবহে কম ঘটনা ঘটে যাচ্ছে না। কিন্তু মুকুল রায়কে পাওয়া যাচ্ছে না পুরনো মেজাজে। নন্দীগ্রামে মমতার বুথ অবস্থান, শীতলকুচিকাণ্ড, মমতার প্রচারে নিষেধাজ্ঞা, আরও কত কী। কিন্তু মুকুল রায়কে নিশ্চুপ দেখে রাজনৈতিক মহলের একাংশে প্রশ্ন উঠে গিয়েছে, কেন তাঁকে সেভাবে দেখা যাচ্ছে না, কেন তিনি নীরব বাংলার ভোট উৎসবে ঘটনার ঘনঘটায়
তৃণমূলের কোমর ভেঙে দেওয়ার পিছনে ছিলেন মুকুল রায়ই
মুকুল রায় একপ্রকার বঙ্গ বিজেপির উত্থানের মূলে। তিনি তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে আসার পরই এত বাড়বাড়ন্ত শুরু হয়েছে পদ্মশিবিরের। তাঁর হাত ধরে তো কম নেতা-নেত্রী আসেননি তৃণমূল থেকে। তৃণমূলের কোমর ভেঙে দেওয়ার পিছনে মুকুল রায়ই ছিলেন। তাঁকে দিয়েই তৃণমূলকে ভেঙে বঙ্গে বাসা বেঁধেছে বিজেপি।
তৃণমূলকে ভেঙে চ্যালেঞ্জার হয়ে ওঠে বিজেপি, সৌজন্যে মুকুল
২০১৭-র নভেম্বরে মুকুল রায় বিজেপিতে এসেছিলেন। তখন বিজেপির শক্তি বঙ্গ রাজনীতিতে ছিল সীমিত। কিন্তু এক বছরের মধ্যেই বিজেপি ফুলে ফেঁপে ওঠে। ২০১৮-র পঞ্চায়েত নির্বাচনে বিজেপি উত্থানের আভাস দেয়। তারপর ২০১৯-এ তৃণমূলকে ভেঙে বাংলায় চ্যালেঞ্জার হয়ে ওঠে বিজেপি। সৌজন্যে মুকুল রায়।
মুকুল রায়ের হাত ধরে বিজেপিতে পা ঝাঁকে ঝাঁকে তৃণমূলীর
এর আগে পরে মুকুল রায়ের হাত ধরে বিজেপিতে পা রেখেছেন এক ঝাঁক তৃণমূল নেতা। লকেট চট্টোপাধ্যায় থেকে শুরু করে অর্জুন সিং, সৌমিত্র খাঁ, অনুপম হাজরা, নিশীথ প্রামাণিক, সব্যসাচী দত্ত-সহ একঝাঁক প্রথম সারির নেতানেত্রী। আর একুশের ভোট শুরুর আগে শুভেন্দু অধিকারী, রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়রাও আসেন মুকুলের পথ ধরে।
মুকুল রায় কিছু বিষয়ে রাজ্য বিজেপির সঙ্গে সহমত ছিলেন না
বিজেপিতে এই সাড়ে তিন বছরের জার্নিতে মুকুল রায় ফ্রন্টফেস না হয়ে উঠলেও তাঁকে ঘিরে বঙ্গ বিজেপি আবর্ত হচ্ছিল। তবে রাজ্য নেতৃত্বের সঙ্গে প্রায়শই তাঁর বনিবনা হত না। মাঝেমধ্যেই বরফ গলাতে হত কেন্দ্রীয় নেতৃ্ত্বকে দিয়ে। মুকুল রায় কিছু বিষয়ে রাজ্য বিজেপির সঙ্গে সহমত পোষণ করতে পারেননি।
জায়গা ছাড়ার বার্তা দিয়ে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছেন মুকুল
শুভেন্দু-রাজীবরা তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে আসার পর হঠাৎ করে তাঁর গুরুত্ব কমে গিয়েছে অনেকটাই। এই মর্মে সম্প্রতি তিনি একটি মন্তব্য করে ছিলেন। দিয়েছিলেন জায়গা ছাড়ার বার্তা। তিনি বলেন জায়গা ছাড়তে হয় প্রত্যেককেই। আর জায়গা ছাড়ার সময়টাও জানতে হয়। তিনি সেটা জানেন। তারপর থেকেই মুকুল নিজেকে অনেকটা গুটিয়ে নিয়েছেন।
মুকুলের নিষ্পৃহতায় কান পাতলেই তৃণমূল-যোগের গুঞ্জন
স্বভাবতই মুকুল ঘনিষ্ঠরা প্রশ্ন তুলেছেন, বিজেপিতে দিলীপ ঘোষ, শুভেন্দু অধিকারী, রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়রা যেমতো গুরুত্ব পাচ্ছেন, তা পাচ্ছেন না মুকুল রায়। সেটাই কি নিজেকে গুটিয়ে নেওয়ার কারণ। তা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে চর্চা শুরু হয়েছে। মুকুলের এই নিষ্পৃহতায় আরও একটি আলোচনা কান পাতলেই শোনা যাচ্ছে তাঁর তৃণমূল-যোগের!
তলায় তলায় তৃণমূলের যোগাযোগ আছে মুকুল রায়ের সঙ্গে!
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সম্প্রতি এই জল্পনা আরও বাড়িয়ে দিয়েছেন। তিনি নির্বাচনী জনসভা থেকে বলেছেন, শুভেন্দুর থেকে মুকুল ভালো। ও অন্তত এত গদ্দারি করেনি, যা এরা করেছে। কেন হঠাৎ তিনি মুকুল রায়ের প্রশংসা করলেন। তাহলে কি তলায় তলায় তৃণমূলের যোগাযোগ আছে মুকুল রায়ের সঙ্গে! গুঞ্জন শুরু হয়ে গিয়েছে।