মমতাকে ‘জোর সে ঝটকা’ মুকুলের! সলতে পাকানো শুরু হয়েছিল বছর দেড়েক আগেই
বিজেপির বিপুল জয় কোন ক্যারিশ্মায়। মোদী-শাহদের প্রচার ঝড়, নাকি এর ভিতরে অন্য কোনও রহস্য রয়েছে। অবশ্যই এমন কিছু কারণ রয়েছে, যার জন্য বিজেপি এবার লোকসভায় তৃণমূলকে মাত দিতে পেরেছে।
বিজেপির বিপুল জয় কোন ক্যারিশ্মায়। মোদী-শাহদের প্রচার ঝড়, নাকি এর ভিতরে অন্য কোনও রহস্য রয়েছে। অবশ্যই এমন কিছু কারণ রয়েছে, যার জন্য বিজেপি এবার লোকসভায় তৃণমূলকে মাত দিতে পেরেছে। আসলে এই সাফল্যের অন্যতম কারণ অবশ্যই মুকুল রায়। সেই পঞ্চায়েত থেকে শুরু, এবার লোকসভাতেই তৃণমূলকে জোর ঝটকা দিলেন মুকুল রায়।
তৃণমূলকে যোগ্য জবাব
তাঁর লড়াইটা প্রথম থেকেই ছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দলকে তিনি নিজের হাতে সাজিয়ে ছিলেন। তৃণমূলকে সাফল্যের চূড়ায় পৌঁছে দিয়েছিলেন নেপথ্যে থেকে। কিন্তু সেই তিনিই দল থেকে পেলেন অপমান, বঞ্চনা। তাই দল ছাড়লেন, যোগ দিলেন বিজেপিতে। একইসঙ্গে শপথ নিলেন তৃণমূলকে নিঃশেষ করে দেওয়ার।
মমতাকে কুর্সি থেকে হটানোর লড়াই
সেই কাজে তিনি কিঞ্চিৎ সফল বলাই চলে। এবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে কুর্সি থেকে হটাতে পারলেই তিনি পুরোপুরি সফল হবেন। বাংলায় গেরুয়া নিশান উড়িয়ে তিনি জয়ের তিলক মাথায় পরতে পারবেন। এবার সেই লক্ষ্য স্থির করে এগোচ্ছেন তিনি।
কংগ্রেস ভেঙে তৃণমূল, তৃণমূল ভেঙে বিজেপি
মুকুল রায় বলেছিলেন, যেভাবে একটা ভোটে সাফল্যের পর কংগ্রেস ভেঙে তৃণমূলের দিকে ছুটে এসেছিলেন নেতারা, তেমনই এবার বিজেপির সাফল্যের তৃণমূল ছাড়বেন দিদির ভাইয়েরা। তার আগে তৃণমূলের নীচুতলা তিনি ফাঁকা করে দেবেন। তলে তলে কী ক্ষতি হয়ে যাবে তা বুঝতেও পারবে না তৃণমূল। এবার লোকসভার ফল সেটাই চোখে আঙুল দিয়ে দেখাল।
মুকুলের মাস্টারস্ট্রোক
তারপর তৃণমূলে প্রায় ব্রাত্য নেতাদের দলে টেনে প্রার্থী করে তৃণমূলের একাংশকে সঙ্গে টেনে নিয়ে দিলেন মাস্টারস্ট্রোকটা। যেভাবে তিনি কংগ্রেস ভেঙে খান খান করে দিয়েছিলেন, একইভাবে তৃণমূলকে ভেঙে তিনি শেষ করে দেওয়ার পণ করেছেন।
কাঁটা দিয়ে কাঁটা তোলা
নিশীথ প্রামাণিক থেকে শুরু করে সৌমিত্র খাঁ, অনুপম হাজরা, ভারতী ঘোষদের দলে নিয়ে তিনি তৃণমূলের বিরুদ্ধে কাঁটা দিয়ে কাঁটা তোলার চেষ্টা করেছেন। আরও অনেক ছোটখাটো নেতা রয়েছেন, যাঁরা দল ছেড়ে তৃণমূলের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সামিল হয়েছেন। একইসঙ্গে তিনি সিপিএম ভোট ভাঙিয়েও দলকে জয়ের কিনারায় পৌঁছে দিতে পেরেছেন।
মিলবে স্বীকৃতি বা পুরস্কার
এইভাবে নেপথ্যে থেকে বাংলায় বিজেপিকে সাফল্য এনে দেওয়ার কাজ করে গিয়েছেন তিনি। তাই এতদিন কোনও পদ না পেলেও এবার তাঁকে দেওয়া হতে পারে স্বীকৃতি বা পুরস্কার। এখন সর্বত্রই একটা কথা আলোচিত হচ্ছে, ২০১৪-তেও মোদী হাওয়া ছিল, তখন তো মাত্র ২টি আসনেই সীমাবদ্ধ ছিল বিজেপি। এবার কেন এত বাড়বৃদ্ধি! তবে কি মুকুল ফ্যাক্টরেই তৃণমূলে ভরাডুবি! তাই যদি হয় পুরষ্কার তো মিলবেই।
জঙ্গলমহলে সাফল্যের কারিগর
মুকুল রায়ের নেতৃত্বে পঞ্চায়েত ভোটে লড়েছিল বিজেপি। তৃণমূলের ভোট-সন্ত্রাস উপেক্ষা করেই জঙ্গলমহলে সাফল্য এনে দিয়েছিলেন মুকুল রায়। তার পুরস্করা স্বরূপ লোকসভা নির্বাচনেরও দায়িত্ব পেয়েছিলেন তিনি। সেই সুযোগ সুদে-আসলে কাজে লাগালেন মুকুল রায়। উত্তরবঙ্গ থেকে শুরু করে জঙ্গলমহলে ঘাসফুল মাড়িয়ে পদ্মফুল ফুটিয়ে দিলেন তিনি।
[আরও পড়ুন: মুকুল বিজেপিতে চলে যাওয়ার পরে ভারসাম্যটাই মমতার বিরুদ্ধে ১-৩ হয়ে গিয়েছে]
আবার কেন্দ্রীয় মন্ত্রী!
বিশেষ সূত্রের খবর, মুকুল রায় এবার বিজেপি সরকারের কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হতে পারেন। প্রয়োজনে রাজ্যসভায় সাংসদ করে তাঁকে মন্ত্রী করা হতে পারে। গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রকের দায়িত্বও দেওয়া হতে পারে। এতদিন মুকল রায়ের পরিচয় ছিল শুধু বিজেপি নেতা। তিনি এবার পেতে পারেন পদ ও পরিচিতি। আবার গুরুত্বপূর্ণ কোনও পদও তিনি পেতে পারেন রাজ্যে।
[আরও পড়ুন: অবশেষে বিজেপির আশাতীত সাফল্য! তৃণমূলের ঘুম ছুটিয়ে পুরস্কার পেতে চলেছেন মুকুল]