বিজেপিতে থাকা মুকুল অনুগামীরা এবার বিদ্রোহী হচ্ছেন! উপনির্বাচনের পর স্পষ্ট ভাঙনের ইঙ্গিত
বিজেপিতে থাকা মুকুল অনুগামীরা এবার বিদ্রোহী হচ্ছেন! উপনির্বাচনের পর স্পষ্ট ভাঙনের ইঙ্গিত
মুকুল রায় তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পর ধীরে ধীরে তাঁরাও ভিড়েছিলেন গেরুয়া পার্টিতে। তারপর মুকুল-আনুকূল্যে কেউ হয়েছিলেন সাংসদ, কেউ কেন্দ্রীয় সম্পাদক। কিন্তু মুকুল রায় তৃণমূলে ফিরে যাওয়ার পরে তাঁরা প্রায় সবাই বঙ্গ বিজেপিতে একঘরে। বঙ্গ বিজেপির সঙ্গে বিস্তর দূরত্ব তৈরি হয়ে গিয়েছে তাঁদের। তাই এবার তাঁরাও বিদ্রোহী হয়ে উঠছেন।
মুকুলেরও সমালোচনা করেছিলেন, এবার তাঁরা বেসুরো বিজেপিতে
একুশের বিধানসভা নির্বাচনের পর থেকেই বিজেপিতে ভাঙন ধরেছে। একে একে তৃণমূল থেকে আসা নেতাদের ঘরওয়াপসি হচ্ছে। আদি বিজেপির নেতারাও নেতৃত্বের প্রতি বিদ্বেষে পার্টি ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। কিন্তু মুকুল রায় তৃণমূলে ফিরে যাওয়ার পরও সৌমিত্র খাঁ বা অনুপম হাজরার মতো নেতারা বিজেপিতে রয়ে গিয়েছিলেন। তাঁরা বিজেপি ছাড়ার জন্য তৃণমূলে ফিরে যাওয়া নেতাদের কঠোর সমালোচনাও করেছিলেন। এমনকী মুকুল রায়েরও সমালোচনা করেছিলেন।
বঙ্গ বিজেপি নেতৃত্বের দিকে তির ছুড়েছেন অনুপম-সৌমিত্র
ড়েছেন কিন্তু বর্তমানে তাঁরা সুর বদল করেছেন। তাঁরা বিজেপিতে গণ ইস্তফার জন্য দায়ী করেছেন বর্তমান নেতৃত্বকে। তাঁদের এই ইস্তফার বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে বিশ্লেষণ করে দেখা উচিত বলে পরামর্শ দিয়েই ক্ষান্ত থাকেননি তাঁরা, অনুপম তো সরাসরি জানিয়েছেন বঙ্গ বিজেপি নেতৃত্বের থেকে তাঁদের দূরে দূরে থাকার কথা। আর সৌমিত্র খাঁ সাফ জানিয়ে দিয়েছেন অযোগ্য নেতৃত্বে জন্যই হার।
ফেসবুক পোস্টে জল্পনা বাড়িয়েছেন অনুপম হাজরা
মুকুল-অনুগামী অনুপম হাজরা ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনের আগে তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন। বর্তমানে তিনি বিজেপিতে এসে বঙ্গ রাজনীতিতে তলিয়ে গিয়েছেন বলে নিজেই জানিয়েছেন। তাঁর কথায়, বঙ্গ নেতৃত্বের থেকে দূরে সরে থেকেই তাঁর মতো নেতারা একের পর এক ইস্তফা দিচ্ছেন। সম্প্রতি এক ফেসবুক পোস্টে জল্পনা বাড়িয়েছেন অনুপম হাজরা।
অপরিণত রাজ্য নেতারা নেতৃত্বে, খোঁচা সৌমিত্রর
রাজ্যের দুই কেন্দ্রের উপনির্বাচনে বিজেপির ভরাডুবির পরেই বিষ্ণুপুরের সাংসদ সৌমিত্র খাঁ বলেন, অপরিণত রাজ্য নেতাদের নেতৃত্বে এর থেকে ভালো ফল আশা করা যায় না। বিজেপির বঙ্গ নেতৃত্বের জন্যেই উপনির্বাচনের ফলাফলের এই হাল বলে দাবি সৌমিত্র খাঁয়ের। শুধু তাই নয়, তৃণমূলের থেকে বিজেপির অনেক কিছু শেখার আছে বলেও মন্তব্য তাঁর।
বহিষ্কৃত ও বিক্ষুব্ধ নেতাদের হয়ে সওয়াল সৌমিত্রের
সৌমিত্র বলেন, তৃণমূলের থেকে অনেক কিছু শেখার আছে। শাসকদলের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বিজেপি ব্যর্থ হয়েছে বলেও বোমা ফাটান মুকুল অনুগামী ওই বিজেপি নেতা। অবিলম্বে রাজ্য এবং কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের বিষয়টি নিয়ে ভাবা দরকার বলেও মনে করেন তিনি। সৌমিত্রের মতে, সামনেই ২৪ এর লড়াই আছে। ফলে এখন থেকেই ময়দানে নামতে হবে। বহিষ্কৃত ও বিক্ষুব্ধ নেতাদের হয়ে সওয়াল করেন তিনি।
সুসময়ে যোগ দেওয়া নেতাদের নিয়ে নাচানাচি বিজেপির
আবার অনুপমও একই কথাই তাঁর ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, আমি এক শ্রেণির মানুষ আছে যারা আমার মতো, যারা বঙ্গ-বিজেপির অসময়ে এসেছিল, কিন্তু পার্টি তাদের কাজে লাগায়নি, কোথায় তলিয়ে গিয়েছে। তাঁর প্রচ্ছন্ন ইঙ্গিত ছিল রাজীব-সব্যসাচীর দিকে। যখন পশ্চিমবঙ্গে মানুষ বিজেপিতে যোগ দিতে ভয় পেত, তখন আমি বিজেপিতে যোগ দিয়েছি। কিন্তু বঙ্গ-বিজেপির সুসময়ে যোগ দেওয়া রাজীব-সব্যসাচীদের নিয়ে অনেক বেশি নাচানাচি হয়েছে। তাঁরা এখন ফিরে গিয়েছেন তৃণমূলে। কিছু অভিনেতা-অভিনেত্রীদের জামাই আদর করা নিয়েও তিনি তোপ দাগেন।
বঙ্গ বিজেপি থেকে দূরে দূরে প্রকৃত বিজেপির নেতারা!
অনুপম এদিন সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, আমাদের কোনও কাজ নেই বিজেপিতে। কাজে লাগানো হয় না, কোনও দায়িত্ব দেওয়া হয় না। আমরা প্রতিদিন "দাদা মাঠে নামুন, আপনাদের আর আন্দোলনে দেখা যায় না কেন? শুধু সোশ্যাল মিডিয়াতে লেকচার দিলে হবে?" এই ধরনের কথা শুনে শুনে ক্লান্ত হয়ে যাচ্ছি। তিনি সাফ জানান, আমরা বঙ্গ বিজেপি থেকে দূরে দূরে থাকছি। দিল্লিতে বা অন্য রাজ্যে পার্টির কাজ করতেই বেশি স্বচ্ছন্দ বোধ করছি। এবার এর আসল রহস্য উন্মোচনের সময় এসেছে।
কেন এতগুলো ইস্তফা একসঙ্গে হল বিজেপিতে? দেখবেন না!
বিজেপি নেতা অনুপম হাজরা এদিন ফেসবুক পোস্টে প্রশ্ন তুলে দিয়েছেন, কেন এতগুলো ইস্তফা একসঙ্গে হল বিজেপিতে? এই ইস্তফা নিয়ে রাজ্য বিজেপির খুব গুরুত্ব সহকারে বিচার-বিশ্লেষণ করা উচিত। যাঁরা পার্টির অসময়ে ছিলেন। আদি বিজেপি নেতা। পার্টির জন্য মুখ বুজে কাজ করেছেন, তাঁরা কেন ছেড়ে চলে যাচ্ছেন, বর্তমান নেতৃত্বের তো সর্বাগ্রে তা বিচার বিশ্লেষণ করে দেখা উচিত সর্বাগ্রে।
বেসুরো তাঁরাও, বর্তমান নেতৃত্বের প্রতি আস্থা হারিয়েছেন
উল্লেখ্য, এদিনই মুর্শিদাবাদের বিধায়ক তথা বিজেপির সম্পাদক গৌরীশঙ্কর ঘোষ ও বহরমপুরের বিধায়ক সুব্রত মৈত্র-সহ আরও কয়েকজন বিজেপি নেতা ইস্থফা দিয়েছেন। রাজ্য দুই কেন্দ্রে উপনির্বাচনে ভরাডুবি হওয়ার পরদিনই বিজেপিতে ফের আঘাত নেমে এসেছে তাঁদের ইস্তফায়। তা নিয়েই প্রশ্ন তুলে দিয়েছেন বিজেপি নেতা অনুপম হাজরা। তাঁরও নিশানা রাজ্য বিজেপির বর্তমান শীর্ষ নেতত্বের দিকে। তিনিও যে বেসুরো, বর্তমান নেতৃত্বের প্রতি আস্থা হারিয়েছেন, তা বুঝিয়ে দিয়েছেন অনুপম, সরব হয়েছেন সৌমিত্রও। বিজেপিতে ফের বিদ্রোহী সুর বাড়ছে।