শরতেই ঝরছে মুকুল! মমতার চালে সাধারণ সৈনিকে পরিণত এককালের ‘সেকেন্ড ইন কম্যান্ড’
কোর কমিটির বৈঠকের দিনও বোঝা যায়নি মমতার এই অভিসন্ধি। নির্বাচন কমিশনে ২১ জন পদাধিকারীর যে তালিকা পেশ করা হল দলের পক্ষ থেকে, তাতে নাম নেই মুকুল রায়ের।
দলের সেকেন্ড ইন কম্যান্ড থেকে একেবারে মাটিতে নামিয়ে আনা হল মুকুল রায়কে। তৃণমূল কংগ্রেসে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরে যাঁর নাম উচ্চারিত হত, সেই মুকুল রায় পরিণত হলেন একেবারে সাধারণ সৈনিকে। দল থেকে তুলেই দেওয়া হল সহ সভাপতি পদ। তাই স্বাভাবিক নিয়মেই পদ খুইয়ে সাধারণ সদস্য বনে গেলেন মুকুল রায়।
সংসদীয় সব পদ এক এক করে আগেই কেড়ে নেওয়া হয়েছিল। তিনি শুধু ছিলেন দলের সর্বভারতীয় সভাপতি। এবার সেই পদও গেল। কোর কমিটির বৈঠকের দিনও বোঝা যায়নি মমতার এই অভিসন্ধি। সেদিনও মুকুল রায়কে নয়া দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। মুকুল পঞ্জাবের সংগঠনের দায়িত্ব পেয়েছিলেন। কিন্তু সম্প্রতি নির্বাচন কমিশনে ২১ জন পদাধিকারীর যে তালিকা পেশ করা হল দলের পক্ষ থেকে, তাতে নাম নেই মুকুল রায়ের। উধাও সহ সভাপতি পদটিই।
মমতার এই চালেই রাজনৈতিক মহল মনে করছে, তৃণমূল কংগ্রেসে মুকুল রায়ের বিদায়ঘণ্টা বাজিয়ে দেওয়া হল। এখন স্রেফ তাঁর বিসর্জনের অপেক্ষা। দেবী দুর্গার নিরঞ্জনের আগেই তৃণমূল থেকে মুকুল রায়ের বিসর্জন হয়ে যেতে পারে! এই শরতেই মুকুল ঝরার সমস্ত পথ পরিষ্কার। এখন প্রশ্ন একটাই দলে কোণঠাসা হয়ে কোন পথ বাছবেন তিনি? তিনি বিজেপিতে যাবেন, নাকি কংগ্রেসে? নাকি নিজেই পৃথক দল গড়বেন? ফের জল্পনা শুরু হয়ে গিয়েছে রাজনৈতিক মহলে।
দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের পদে দীর্ঘদিন ছিলেন মুকুল রায়। মমতার পরে যা কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়ার একমাত্র ক্ষমতা ছিল তাঁরই। কিন্তু সারদার ধাক্কায় মমতার সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হয় মুকুল। সারদা মামলায় সিবিআই তলব করার পরই দলে সাধারণ সম্পাদকের পদ খোয়ান তিনি। তাঁর স্থলাভিষিক্ত হন রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সি।
তখনই তৃণমূলকে বিদায় জানাতে প্রস্তুত হয়ে গিয়েছিলেন মুকুল রায়। মমতাকে বার্তা দিতেই মুকুল রায় নির্বাচন কমিশনে গিয়ে নতুন পার্টির রেজিস্ট্রেশন করিয়ে নেন তড়িঘড়ি। ন্যাশনালিস্ট তৃণমূল কংগ্রেস নামে পার্টির রেজিস্ট্রেশন পেয়ে যান তিনি। কিন্তু এরপরই মমতা উদ্যোগী হন দলের ভাঙন আটকাতে। সে যাত্রায় মুকুল রায় টিকে যান দলে। ফের স্বাভাবিকভাবে কর্মসূচিতে যোগ দিতে থাকেন। তাঁকে দলের সর্বভারতীয় সহ সভাপতি পদও দেওয়া হয়।
বছর দুয়েক ধরে দলের সহ সভাপতি পদে রয়েছেন মুকুল রায়, দীনেশ ত্রিবেদী ও সদ্য প্রয়াত সুলতান আহমেদ। এখন এই পদটিই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তুলে দেওয়ায় মুকুল রায় ও দীনেশ ত্রিবেদী ওই পদচ্যুত হলেন। দীনেশ ত্রিবেদীকে দলে অন্য পদ দেওয়া হবে বলে বিশ্বস্ত সূত্রে খবর। মুকুল রায়ের দলে এই মুহূর্তে কোনও পদই রইল না। তিনি এখন শুধু দলের ওয়ার্কিং কমিটি ও রাজ্য তৃণমূল কোর কমিটির সদস্য। আর ২০১৮-র এপ্রিল পর্যন্ত তিনি রাজ্যসভার তৃণমূল সাংসদ।
দল তাঁর বিরুদ্ধে একটার পর একটা কঠোর মনোভাব নিয়ে চলেছে। তবু নির্লিপ্ত থেকেছেন মুকুল। এখন আর কোনও পদই থাকল না তাঁর। রাজনৈতিক মহল মনে করছে, দল তাঁকে আর রাখতে চাইছে না। কোর কমিটির বৈঠকেও বার্তা দিয়েছিলেন মমতা- বিজেপির সঙ্গে তলে তলে যোগাযোগ রেখে চলছে যাঁরা, তাঁদের তৃণমূলে কোনও স্থান নেই। তারপর ওই বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ীই সহ সভাপতি পদ 'বিসর্জন' দেওয়া হল। সেইসঙ্গে বিসর্জনের রাস্তা পরিষ্কার করে দেওয়া হল মুকুলেরও।
তবু এখনও তৃণমূলে মুখ বুজে পড়ে আছেন তিনি। এখনও জল মেপে চলেছেন। রাজনৈতিক মহলে জল্পনা, মুকুলবাবু বিজেপির দিকেই ঝুঁকে রয়েছেন। মুকুল রায় গভীর জলের মাছ। তিনি এখন অঙ্ক কষছেন বিজেপিতে গেলে কতটা ফায়দা হবে! নাকি কংগ্রেসই অনেক নিরাপদ হবে, সেই ভাবনাও রয়েছে মুকুলের। আর একেবারেই উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না, তাঁর নয়া দল গঠনের বার্তা। সেক্ষেত্রে এমনও হতে পারে মুকুলের দল কারও সঙ্গে জোট গঠন করে নির্বাচনে লড়ল। সেই সম্ভাবনাও প্রবল ভাবে রয়ে যাচ্ছে।