ইতিহাস কাউকে ক্ষমা করে না, মমতাকে শ্লেষ দেগে কী বলতে চাইলেন মুকুল
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সরাসরি নিশানা করে হুঁশিয়ারি দিলেন মুকুল, ‘ইতিহাস কাউকে ক্ষমা করে না।’ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তাঁর দলকে নিয়ে তীব্র শ্লেষ ঝরে পড়ল তাঁর গলায়।
বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পর প্রথম জনসভাতেই বোমা ফাটালেন মুকুল রায়। তাঁর একদা নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সরাসরি নিশানা করে হুঁশিয়ারি দিলেন, 'ইতিহাস কাউকে ক্ষমা করে না।' মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তাঁর দলকে নিয়ে তীব্র শ্লেষ ঝরে পড়ল তাঁর গলায়। মমতাকে কটাক্ষ করে মুকুল রায় এদিন ফের বললেন, 'তৃণমূল এখন আর কোনও রাজনৈতিক দল নয়, ওটা একটা প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি।'
শুধু তৃণমূলকে প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি বলেই এদিন ক্ষান্ত থাকেননি তিনি। রাজ্যের পুলিশ ব্যবস্থাকেও তিনি ব্যঙ্গ করেছেন। তিনি বলেন, 'পুলিশকে ক্যাডার বানিয়েছে তৃণমূল। প্রতিটি জেলার পুলিশ সুপার এখন তৃণমূলের জেলা সভাপতিতে রূপান্তরিত হয়েছে। আর ওসি-রা সবাই ব্লক সভাপতি। এইভাবেই দল ও সরকার চালাচ্ছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।'
এদিন নাটকীয় ভঙ্গিতেই মুকুল রায় বলেন, 'আপনারা প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি তো এই দলেই ছিলেন এতদিন? এতদিনই বা এইসব কথা বলেননি কেন? তার উত্তর হল- দু'বছর আগেই আমি এসব কথা বলতে পারতাম। কিন্তু 'আমার ক্যাপ্টেন' দিলীপদা আমাকে সেই সুযোগ করে দেননি। আর তখন কৈলাশ বিজয়বর্গীয়র মতো কেউ ছিলেন না। ফলে আমি বলার সুযোগ পাইনি।'
তিনি বলেন, 'এতদিন পরে আপনাদের সামনে বলার সুযোগ পেয়েছি। তাই বলছি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরূদ্ধে কথা বললেই এখানে পুলিশ লেলিয়ে দেওয়া হয়। আমরা সেই পুলিশ রাজের অবসান চাই। আমরা রাজ্যে নয়া পরিবর্তন আনতে চাই। যা হবে প্রকৃত পরিবর্তন। কেননা বাংলায় বদল হয়নি। বদলা চলছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, যে সমস্ত কথা বলে ক্ষমতায় এসেছিলেন, তার একটা কথাও তিনি রাখেননি।'
তাঁর কথায়, 'এবার জবাব দেওয়ার সময় এসেছে। কিন্তু সাবধান পঞ্চায়েতে যাতে বিরোধীরা ভোট দিতে না পারে, শাসকদল এখন থেকেই সেই প্রচেষ্টা শুরু করে দিয়েছে। পঞ্চায়েতে ভোট লুঠের ছক কষা হচ্ছে। কিন্তু মনে রাখবেন- ওইসব করে কিছু হবে না। কারণ ইতিহাস সব মনে রেখে দেয়, ইতিহাস কাউকে ক্ষমা করে না।'
তিনি অভিযোগ করেন, 'পরিবর্তনের বাংলায় শিল্পের কোনও বিস্তার ঘটেনি। আগে জ্যোতি বসুরা যখন বিদেশ সফরে যেতেন আমরা নানা কটাক্ষ করেছি। কিন্তু এখন শিল্প আনার নাম করে মমতা যেটা করছেন, সেটা কী সমর্থনযোগ্য? শিল্প আনতে বিদেশ সফরে যাচ্ছেন, কিন্তু একটা শিল্পও আসেনি এই সাত বছরে। অথচ সরকারি পয়সা নয়ছয় করে বহু লোক নিয়ে বিদেশ ঘুরে আসছেন। বাংলার মানুষ এসব সহ্য করবে না।'
মুকুল বলেন, 'শিল্প থেকে শিক্ষা- সর্বত্রই দলতন্ত্র কায়েম করতে চাইছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বাংলায় আজ বেকারত্ব বেড়ে চলেছে। যুব সমাজ বাইরে চলে যাচ্ছে।' এরপরই মুকুলের কটাক্ষ, 'মুখ্যমন্ত্রী বাংলায় তেলে ভাজা শিল্প গড়ার কথা বলেছিলেন, তাহলেই ভাবুন, কী অদ্ভুত ব্যবস্থা চলছে রাজ্যে। বামফ্রন্ট সরকারের আমলে মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য বলতেন, 'কৃষি আমাদের ভিত্তি, শিল্প আমাদের ভবিষ্যৎ।' আর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ক্ষমতায় এসে বলেছিলেন, 'কৃষি আর শিল্প হল হাসি আর খুশি'। হাসি তো নেই-ই, আর খুশিও উভে গিয়েছে রাজ্য থেকে।'