প্রথমেই ব্যাকফুটে অভিষেক-পিকে? 'দিদি বনাম দাদা'-র দ্বন্দে অশনি সংকেত তৃণমূলে
শুভেন্দু অধিকারীর মন্ত্রিত্ব থেকে পদত্যাগের পর মালদা জেলার নেতা-নেত্রীদের সঙ্গে বৈঠক করতে তৎপর হয়েছিলেন দলের সেকেন্ড ইন কমান্ড অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এবং পরামর্শদাতা প্রশান্ত কিশোর। কিন্তু প্রথমেই ছন্দপতন দলের অন্দরে। শুক্রবারই মালদা জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের কোর কমিটির কাছে ফোন করে বৈঠক ডেকেছিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে সেই বৈঠক থেকেই অনুপস্থিত মৌসম বেনজির নূর সহ তিনজন।
কৃষ্ণেন্দু নারায়ণ চৌধুরী ও সাবিত্রী মিত্রের মধ্যে ঠান্ডা লড়াই
প্রসঙ্গত, দীর্ঘদিন যাবৎ মালদা জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা-নেত্রীদের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলছে। বিশেষ করে কৃষ্ণেন্দু নারায়ণ চৌধুরী ও সাবিত্রী মিত্রের মধ্যে ঠান্ডা লড়াইয়ের ফলে বারবার বিড়ম্বনায় পড়েছে দল। এছাড়াও কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেওয়া মৌসম বেনজির নূর-সহ অন্যান্য দলীয় নেতাদের সঙ্গে সেভাবে সমন্বয় হচ্ছে না বলে অভিযোগ।
বৈঠকে অনুপস্থিত বেনজির নূর
এই পরিস্থিতিতে জেলা সভাপতি মৌসম বেনজির নূর অবশ্য অনুপস্থিত ছিলেন এদিনের বৈঠকে। জানা গিয়েছে তাঁর নাকি জ্বর হয়েছে, তাই তিনি বৈঠকে আসতে পারেননি। আসেননি সাবিত্রী মিত্রও। পরিবারের এক সদস্য মারা যাওয়ায় এবং শারীরিক অসুস্থতার জন্য কলকাতা যেতে পারেননি প্রাক্তন মন্ত্রী সাবিত্রী মিত্র। এ নিয়ে ফোনে তাঁর সঙ্গে সুব্রত বক্সীর কথা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সাবিত্রী।
শুভেন্দুর ইস্তফার পরই ভিত নড়ে গিয়েছে
এদিকে মন্ত্রিত্ব থেকে শুভেন্দুর ইস্তফা দেওয়ার পরে মালদা জেলা নেতৃত্বকে নিয়ে চরম অস্বস্তির মধ্যে রয়েছে তৃণমূল কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্ব। মালদা জেলা কমিটির অধিকাংশই শুভেন্দু অধিকারীর অনুগামী বলে পরিচিত। এছাড়া তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ মৌসম বেনজির নূরকে তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দেওয়ানোর ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিলেন শুভেন্দু অধিকারী। এদিন তিনি বৈঠকে অনুপস্থিত ছিলেন, যা নিয়ে তৈরি হয় জল্পনা।
জল মাপতে শুরু করেছেন শুভেন্দু অধিকারী অনুগামীরা
এদিকে সূত্রের খবর, মন্ত্রিত্ব ছাড়তেই মালদায় জল মাপতে শুরু করেছেন শুভেন্দু অধিকারী অনুগামীরা। মালদায় শুভেন্দু অনুগামীর সংখ্যা নেহাত যে কম নয় তা বিলক্ষণ জানে তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব। তাই গতকাল বিকেলে তড়িঘড়ি কলকাতায় ডেকে পাঠানো হয়েছে দলের জেলা সভানেত্রী সহ আট শীর্ষ নেতাকে। ইতিমধ্যে তাঁদের সাতজন কলকাতায় পৌঁছে গিয়েছেন।
বৈঠক রুটিন বলে দাবি
আজ বিকেল চারটা থেকে তাঁদের নিয়ে বৈঠক করেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, প্রশান্ত কিশোর ও সুব্রত বক্সীর। যদিও এই বৈঠক রুটিন বলে দাবি করেছে জেলা তৃণমূল। দলের জেলা মুখপাত্রের দাবি, একুশের ভোটে দলের রণকৌশল ঠিক করতে এই বৈঠক পূর্বনির্ধারিত। এর সঙ্গে শুভেন্দু অধিকারীর মন্ত্রিত্ব ত্যাগের কোনও সংযোগ নেই। তবে সে কথা মানতে রাজি নয় জেলার রাজনৈতিক মহল।
দীর্ঘদিন মালদার দায়িত্ব সামলেছেন শুভেন্দু অধিকারী
দীর্ঘদিন মালদা জেলায় দলীয় অবজারভারের দায়িত্ব সামলেছেন শুভেন্দু অধিকারী। তাঁর হাত ধরেই শাসকদলের দখলে এসেছে জেলা পরিষদ। বিভিন্ন দল থেকে তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন তিন বিধায়ক। বিধায়ক নীহাররঞ্জন ঘোষও শুভেন্দুর হাত ধরে শাসকদলে যোগ দেন। জেলার দুই পৌরসভা দখলের ছক কষা হয়েছিল শুভেন্দুর নেতৃত্বেই।
শুভেন্দুর সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন জেলার একাধিক তৃণমূল নেতা
এই অবস্থায় গতকাল তিনি মন্ত্রিত্ব থেকে পদত্যাগ করতেই সম্ভাবনার ঝড় উঠেছে জেলা তৃণমূলের। এবার কী করবেন শুভেন্দু? বিজেপি কি তাঁর রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নাকি নতুন দল তৈরির দিকে এগোবেন তিনি। শুভেন্দু ঘনিষ্ঠ মহল সূত্রে জানা গিয়েছে, মন্ত্রিত্ব থেকে পদত্যাগের পর ইতিমধ্যে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন জেলার একাধিক তৃণমূল নেতা।
চিন্তায় প্রশান্ত-অভিষেক জুটি
এদিকে জানা গিয়েছে, মালদা জেলার ১২টি আসনে একুশের ভোটে দল কীভাবে জিততে পারে, কীভাবে প্রচার করব, ভোটে জিততে কী কৌশল হবে, তা নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হয় বৈঠকে। তবে এই জেলার রাজনীতি ও তৃণমূল নেতা-কর্মীদের হাতের তালুর মতো চেনেন শুভেন্দু। জেলায় তাঁর অনুগামী সংখ্যাও নেহাত কম নয়। আর এই বিষয়টাই চিন্তায় রেখেছে প্রশান্ত-অভিষেক জুটিকে।