স্কুলেই যাবে না মেয়ে! শেষে গায়ের গয়না-পোষ্য বিক্রি করে দিলেন মা, মুখ হলেন প্রচারের
কিছুদিন আগেই বাড়িতে শৌচালয় না থাকায় বাবাকে শ্রীঘরে পাঠিয়েছিল এক রত্তি মেয়ে। এবার তেমনই এক ঘটনার পুনরাবৃত্তি মুর্শিদাবাদের সামশেরগঞ্জে।
কিছুদিন আগেই বাড়িতে শৌচালয় না থাকায় বাবাকে শ্রীঘরে পাঠিয়েছিল এক রত্তি মেয়ে। এবার তেমনই এক ঘটনার পুনরাবৃত্তি মুর্শিদাবাদের সামশেরগঞ্জে। বাড়িতে শৌচালয় নেই। তাই লজ্জায় স্কুলে যাওয়াই বন্ধ করেছিল চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী সুষমা খাতুন। শেষমেষ গায়ের গয়না বিক্রি করে মা বানিয়ে দিলেন শৌচালয়। ফের স্কুল যাওয়া শুরু করল মেয়ে। এই প্রতিবাদে সুষমাই হয়ে উঠল ব্লকের মুখ।
সামশেরগঞ্জের শেরপুর গ্রামের বাসিন্দা সুষমা। বাবা আইনুল হক ছিলেন রাজমিস্ত্রিষ বছর দুই আগে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে তাঁর মৃত্যু হয়। তারপরই মেয়ে সুষমাকে নিয়ে বাঁচার লড়াই শুরু হয় মা সায়েমা বিবির। নুন আনতে পান্তা ফুরোয়। শৌচালয় গড়বেন কী করে! কিন্তু নাছোড়বান্দা মেয়ে। শেষে স্কুলে যাওয়াই বন্ধ করে দিয়েছিল সে।
কিন্তু মা আর তা দেখে স্থির থাকেন কী করে। তাই নিজের গয়না বিক্রি করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন তিনি। তাতেও হল না। একটা ছাগল পুষেছিলেন, তাও বিক্রি করে দিলেন মেয়ের ইচ্ছাকে মর্যাদা দিতে। এই ঘটনায় এখন সামশেরগঞ্জ ব্লকের আদর্শ। সুষমাকে মুখ করে শৌচালয়ের প্রচারে নেমেছে মুর্শিদাবাদের সামশেরগঞ্জ ব্লক।
সুষমার এই কীর্তির পর ব্লকের অনেক পরিবারই শৌচালয় গড়তে শুরু করেছে বাড়িতে। নির্মল বাংলা কর্মসূচি সফল করতে জেলাজুড়ে প্রচার অভিযান চললেও, অনেকের মাথাব্যথা ছিল না। কিন্তু ছোট্ট সুষমা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল শৌচালয়ের প্রয়োজনীয়তা। সায়েমা বিবির পরিবার বাদ পড়েছিল উপভোক্তাদের তালিকা থেকে। স্কুল গিয়ে প্রচার শুরু করতেই ব্লকের প্রচারাভিযান সাফল্যের মুখ দেখে।
প্রতিদিন স্কুল শুরুর আগে প্রার্থনার লাইনে প্রধান শিক্ষক জিজ্ঞাসা করতেন কার বাড়িতে শৌচালয় নেই, কেন শৌচালয় হচ্ছে না। সকলের সামনে লজ্জায় পড়তে হত সুষমাকে। তাই স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে মায়ের কাছে বায়না ধরেছিলেন শৌচালয় গড়ে দেওয়ার জন্য। সেপ্টেম্বর থেকে স্কুলমুখো না হওয়ায় মা সায়েমা বিবি নিজের গায়ের গয়না খুলে বিক্রি করে দেন।
আট হাজার টাকা দিয়ে বিক্রি হয় কানের দুল। তিন হাজার টাকায় বিক্রি হয় ছাগল। সেইসঙ্গে জমানো কিছু টাকা দিয়ে ১৪ হাজার ৫০০ টাকা খরচে শৌচালয় গড়ে তোলেন সায়েমা বিবি। তারপরই মাথা উঁচু করে স্কুলে যেতে শুরু করে সুষমা। আর তাঁকে প্রধান শিক্ষকের জিজ্ঞাসায় মাথা হেঁট করে থাকতে হবে না। মাথা উঁচু করে সে জবাব দিতে পারবে। সে যে এখন শৌচালয় প্রচারাভিযানে সামশেরগঞ্জের মুখ!