শিল্প গেল, কৃষি হল কি! মমতার জমি ফেরতের পর ফিরে দেখা সিঙ্গুরের হাল হকিকত
ঘটা করে সিঙ্গুরের ন্যানো কারখানার জমি কৃষকদের কাছে ফেরানো হলেও, বেশির ভাগ অংশই এখনও অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে হয়েছে। ৯৯৭.১১ একরের মধ্যে কমবেশি ২৫০ একর জমিতে এখন চলছে কৃষিকাজ।
ঘটা করে সিঙ্গুরের ন্যানো কারখানার জমি কৃষকদের কাছে ফেরানো হলেও, বেশির ভাগ অংশই এখনও অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে হয়েছে। ৯৯৭.১১ একরের মধ্যে কমবেশি ২৫০ একর জমিতে এখন চলছে কৃষিকাজ।
সিঙ্গুরের ন্যানো কারখানার জমির বেশিরভাগ অংশেই এখন বড় ঘাস। দিনের বেলায় সেখানে গরু চড়ে বেরায়। স্থানীয় সূত্রে খবর, সেখানকার মাত্র ২৫০ একর জমিতে গত একবছর ধরে চাষ করছেন স্থানীয়রা। খাসেরভেড়ির বাসিন্দা অমর সাঁতরা জানিয়েছেন, তাঁর জমি চাষের উপযুক্ত নয়। গতবছরের বৃষ্টিতে মাটির ওপরের অংশ ধুয়ে গিয়েছে। বেরিয়ে পড়েছে নিচের কংক্রিটের অংশ। জানিয়েছেন অমর সাঁতরা। একই অভিযোগ করেছেন স্থানীয় বেশ কয়েকজন কৃষক।
যদিও, মুখ্যমন্ত্রীর কৃষি বিষয়ক প্রধান পরামর্শদাতা প্রদীপ মজুমদার জানিয়েছেন, সিঙ্গুরের বেশিরভাগ জমিই চাষের পক্ষে উপযুক্ত। তাঁর দাবি, কাঠামো সরিয়ে নেওয়ার পরের একমাসের মধ্যই প্রায় ৫০০ একর জমিতে চাষ শুরু হয়। সেখানকার জমি এখনও সোনা ফলানোর উপযুক্ত বলেই দাবি করেছেন তিনি।
২০১৬-র অক্টোবরে কারখানার কাঠামো সরিয়ে জমিতে কৃষকদের হাতে জমি তুলে দেওয়ার সময় আলু বীজ ছড়িয়ে ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। যদিও বর্তমানে সেখানকার অনেক অংশেই কৃষিকাজ শুরু হওয়া বাকি।
পশ্চিমবঙ্গ সরকারের পক্ষ থেকে সেখানে ৫৬ টি মিনি ডিপ টিউবওয়েল বসানো হয়েছিল। এখন যার মধ্যে ২০টি কাজ করছে।
২০১৭-র নভেম্বরে হুগলির জেলাশাসকের তরফ থেকে সিঙ্গুরের ন্যানো কারখানার জমিতে চাষ শুরুর জন্য কৃষকদের উদ্দেশে নতুন করে নোটিস দেওয়া হয়েছিল। ৮ জানুয়ারি পর্যন্ত সেখানকার ৬৩০ জন আবেদনকারীর মধ্যে মাত্র ৫০ জন আবেদন করেছেন। খাসেরভেড়ির দিক থেকে জমির অংশে এখনও ছড়িয়ে রয়েছে লোহার রড। অন্যদিকে, বাজেমেলিয়া, গোপালপুরের গ্রামগুলির দিকে এখনও বর্ষার জল জমা হয়ে রয়েছে।
বেড়াবেড়ির পঞ্চায়েত প্রধান দীপঙ্কর ঘোষের মতে একতৃতীয়াংশ জমিতে এখনও কিছু কাজ বাকি রয়েছে। একই মত প্রকাশ করেছেন অন্যরাও। যাঁরা ২০১৬-র অক্টোবর-নভেম্বরে আলু চাষ করেছিলেন, তাঁরা ২০১৭-তে বর্যায় ধান চাষও করেছেন। কিন্তু ভারী বৃষ্টির জেরে অনেক অংশেই শীতের ফসলের চাষ করা যায়নি।
সিঙ্গুরের বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য জানিয়েছেন, সিঙ্গুরের জমির বেশ কিছু অংশের নতুন করে উন্নয়নের জন্য তিনি উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের কাছে দরবার করেছেন।
স্থানীয়রা অবশ্য নতুন করে নিজেদের ভাবতে শিখেছেন। আগে কৃষকের কাজ করা অনেকেই ইটভাটা, পাম্পের শ্রমিক, ছুতোর কিংবা মিস্ত্রির কাজকেই বেছে নিয়েছেন।
তবে স্থানীয় দীপঙ্কর দাসের মতো অনেকেই ছুতোরের কাজ বেছে নিয়ে কৃষিকাজের থেকে অনেকটাই বেশি আয় করছেন।
তবে স্থানীয় প্রশাসন কৃষকদের কাজে ফেরার ব্যাপারে আশাবাদী। মার্চেই কৃষকরা জমিতে ফিরবেন বলেই জানিয়েছেন প্রশাসনিক কর্তারা।