আম্ফানের থেকেও বিধ্বংসী ঘূর্ণিঝড় ধেয়ে আসবে বাংলার দিকে, অশনি সংকেত আবহবিদদের
আম্ফানের থেকেও বিধ্বংসী ঘূর্ণিঝড় ধেয়ে আসবে বাংলা উপকূলে, অশনি সংকেত আবহবিদদের
বাংলার উপর দিয়ে বয়ে গিয়েছে আম্ফানের মতো শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়। ঘূর্ণিঝড় আয়লা, বুলবুলের পর আম্ফান বাংলা উপকূল তাণ্ডব চালিয়ে গিয়েছিল। সেই ক্ষত এখনও সারেনি। তারপর বাংলায় ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবও পড়েছিল। কিন্তু এখন আবহবিদরা জানাচ্ছেন, আম্ফানের থেকেও বিধ্বংসী ঘূর্ণিঝড় ধেয়ে আসবে, অশনি সংকেত দিয়েছে হাওয়া অফিস।
বাংলা তথা ভারতের উপকূলে ঘূর্ণিঝড় প্রবণতা
সম্প্রতি ক্লাইমেট ডায়ানামিক্স স্প্রিংগার নামে এক টি জার্নালে খড়গপুর আইআইটির গবেষকরা ইঙ্গিত দিয়েছিলেন বাংলা তথা ভারতের উপকূলে ঘূর্ণিঝড় প্রবণতা আরও বাড়বে। বাড়বে ঘূর্ণিঝড়ের বিধ্বংসী রূপও। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলেই এই রূপ পরিবর্তন আসতে চলেছে আবহাওয়া, এমনই বার্তা দিয়েছিলেন গবেষকরা।
ভয়াবহ ঝড়ের মুখে পড়তে পারে বাংলা
খড়গপুর আইআইটির গবেষকদের পর এবার বাংলা ও ভারতের আবহাওয়া নিয়ে অশনি সংকেত দিয়েছেন ভূতত্ত্ববিদ ও আবহবিদরা। তাঁদের কথায়, আম্ফানের থেকেও ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় দেয়ে আসবে বাংলা ও ভারতের বিভিন্ন উপকূলে। ভূতত্ত্ববিদ সুজীব কর সম্প্রতি এক জনপ্রিয় সংবাদমাধ্যমে জানিয়েছেন, ভয়াবহ ঝড়ের মুখে পড়তে পারে বাংলা। বাংলার উপকূল ঘূর্ণিঝড় প্রবণ হয়ে উঠছে জনবায়ু পরিবর্তনের কারণে।
তিনমাস ধরে একাধিক সাইক্লোন ধেয়ে আসার সম্ভাবনা
আবহাওয়া-বিশেষজ্ঞদের ধারণা, ২০২২-এর মার্চ থেকে মে মাস পর্যন্ত একাধিক সাইক্লোন তৈরি হতে পারে। বঙ্গোপসাগরে তিনমাস ধরে একাধিক সাইক্লোন ভয়াবহ রূপ নিয়ে ধেয়ে আসতে পারে বাংলার উপকূলের দিকে। সমুদ্র-গর্ভের তাপমাত্রা উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়তে পারে। উপকূলবর্তী জেলাগুলির তাপমাত্রাও এবার ৪৫ ডিগ্রির উপরে উঠে যেতে পারে বলে আশঙ্কা থাকছে।
এই গ্রীষ্মে অনেক বেশি ঘূর্ণিঝড় তৈরি হবে
কিন্তু কেন এই প্রবণতা, তার ব্যাখ্যাও দিয়েছেন ভূতত্ত্ববপিদ সুজীব কর। বিশ্ব উষ্ণায়নই এর জন্য দায়ী বলে মনে করেন তিনি। বঙ্গোপসাগরে জলের তাপমাত্রা আগের তুলনায় অনেকাংশে বেড়েছে। বর্তমানে প্রায় স্বাভাবিকের থেকে চার ডিগ্রি বেশি তাপমাত্রা সমুদ্রের জল। এই তাপমাত্রা বৃদ্ধিই ঘূর্ণিঝড়প্রবণ করে তুলেছে বঙ্গোপসাগরকে। ফলে আগের তুলনায় এই গ্রীষ্মে অনেক বেশি ঘূর্ণিঝড় তৈরি হবে।
তিন মাস ঘূর্ণিঝড়ের তাণ্ডব থেকে সতর্ক থাকুন
ভূতত্ত্ববিদদের ধারণা, আম্ফান দীর্ঘসময় স্থায়ী হয়েছিল স্থলভাগে। এবার যে সমস্ত ঝড় তৈরি হবে, তার রেডিয়াস আম্ফানের থেকে বড় হতে পারে। ফলে আরও দীর্ঘ সময় তা তাণ্ডব চালাতে সক্ষম হবে। স্বাভাবিকভাবেই ক্ষয়ক্ষতির সম্ভাবনা বেশি হবে। সাধারণভাবে বঙ্গোপসাগের যে সমস্ত ঘূর্ণিঝড় তৈরি হয় তা ওড়িশা, পশ্চিমবঙ্গ বা বাংলাদেশ উপকূলে হানা দেয়। ফলত এই তিন মাস ঘূর্ণিঝড়ের তাণ্ডব থেকে সতর্ক থাকতে হবে উপকূলবর্তী রাজ্যগুলিকে।
ঘূর্ণিঝড় নিয়ে আশঙ্কার বার্তা দিয়েছিল মৌসম ভবনও
২০২১-এ পাঁচটি ঘূর্ণিঝড় বয়ে গিয়েছে বঙ্গোপসাগর ও আরব সাগর দিয়ে। ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদ বাংলা-সহ ভারতের পূর্ব উপকূলে ত্রাস সৃষ্টি করে যায় শীতের মরশুমে। ডিসেম্বর বিরল ঘূর্ণিঝড় হিসেবে জাওয়াদ হানা দিয়েছিল। যদিও তা কোনও উপকূলে আছড়ে পড়েনি। উপকূল ছুঁয়েই তা সমুদ্র দিয়ে বয়ে গিয়েছিল। অন্ধ্রপ্রদেশ থেকে শুরু করে ওড়িশা, বাংলার উপকূল কাঁপিয়ে যায় ঘূর্ণিঝড়। এরপরই শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় নিয়ে আশঙ্কার বার্তা দিয়েছিল মৌসম ভবনও। সেই বার্তায় মান্যতা দেয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকও।
ঘূর্ণিঝড়ের প্রবণতা সম্প্রতি বহুগুণ বেড়ে গিয়েছে
ভারতে ঘূর্ণিঝড়ের প্রবণতা সম্প্রতি বহুগুণ বেড়ে গিয়েছে। বাংলা তথা ভারতে এখন বছরে নিদেনপক্ষে চার-পাঁচটি বড় মাত্রার ঘূর্ণিঝড় হচ্ছে। ভবিষ্যতে এই সংখ্যাটা বাড়বে। এবারই তার পূর্বাভাস দিয়ে রাখলেন ভূতত্ত্ববিদরা। তাঁরা জানান, প্রাকৃতিক বিপর্যয় বাড়বে এবং কঠিন হবে পরিস্থিতি। শীত পেরিয়ে গরমের হাওয়া ফুটলেই দেশে ঘূর্ণিঝড়ের চোখ রাঙানি শুরু হবে।
বঙ্গোপসাগর ও আরব সাগরও অশান্ত হয়ে উঠছে
আসন্ন মরশুমে গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ক্ষেত্রে ঘূর্ণিঝড় বাড়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। তার কারণ সাগর অশান্ত হয়ে উঠছে, অস্থির হচ্ছে। আবহবিদরাও জানান, জলবায়ু পরিবর্তন এবং ত্রমবর্ধমান তাপমাত্রাই দায়ী ঘূর্ণিঝড়ের বাড়বৃদ্ধির জন্য। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে অশান্ত হয়ে উঠছে সাগর। ভারত মহাসাগর থেকে শুরু করে বঙ্গোপসাগর ও আরব সাগরও অশান্ত। সমুদ্র গর্ভের তাপমাত্রাও বাড়ছে। তারই প্রভাবে নিম্নচাপ সহজে ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হচ্ছে।
দুর্যোগপূর্ণ গ্রীষ্মকালীন আবহাওয়া কাটবে বাংলায়!
বিগত কয়েক বছর ধরেই দেখা যাচ্ছে প্রাকৃতিক দুর্যাগ বাড়ছে। বিজ্ঞানীরা উত্তর ভারত মহাসাগর, বঙ্গোপসাগর ও আরব সাগরে ঘূর্ণিঝড়ের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখেছেন, ঘূর্ণিঝড়ের তীব্রতা এবং ফ্রিকোয়েন্সি অনেক বেশি আগের তুলনায়। তা উত্তরোত্তর বাড়বে বলেই মনে করছেন গবেষকরা। ফলে দুর্যোগপূর্ণ গ্রীষ্মকালীন আবহাওয়া কাটবে বাংলা তথা পূর্ব, দক্ষিণ ভারতে।
ভারতের পশ্চিম উপকূলও সতর্কিত ঘূর্ণিঝড় প্রবণতায়
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন শুধু ভারতের পূর্ব বা দক্ষিণ নয়, ভারতের পশ্চিম উপকূলও সংকটের মুখে পড়বে। বঙ্গোপসাগরের মতো আরব সাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড়ও অভিমুখ বদলে ভারতের উপকূলে হানা দিতে পারে। সাম্প্রতিক ইসিহাস সেকথাই বলছে। বিশেষজ্ঞরা ভারতের পশ্চিম উপকূলের মধ্যে মহারাষ্ট্র ও গুজরাট নিয়েই বেশি উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।