মালদায় হিংসার ঘটনায় রাজ্য সরকারের কাছে রিপোর্ট তলব করল কেন্দ্র
কলকাতা, ৭ জানুয়ারি : মালদহে কালিয়াচকে রবিবার যে সাম্প্রদায়িক হিংসার ঘটনা ঘটেছে তা নিয়ে এবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের-সরকারের কাছে রিপোর্ট তলব করল কেন্দ্র। কালিয়াচকে মুসলিম গোষ্ঠীর মিছিল চলাকালীন আন্দোলনকারীরা পুলিশের গাড়ি ভাঙচুর করে, থানায় আগুন লাগিয়ে দেয় বলে অভিযোগ।
বিজেপির অভিযোগ, যারা রবিবারের এই হিংসার ঘটনায় জড়িত, তৃণমূল সরকার তাদেরই রক্ষা করতে চাইছে। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী মুক্তার আব্বাস নাকভি জানিয়েছেন, মালদায় যে ঘটনাটি ঘটেছে তা সাম্প্রদায়িক। থানায় ভাঙচুর করা হয়েছে, নিরপরাধীদের আক্রমণ করা হয়েছে। যারা এই ঘটনার পিছনে রয়েছে তারা রাজ্যসরকারের ছত্রছায়ায় রয়েছে। রাজ্য সরকার এত বড় ঘটনার পরও কোনও উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ নেয়নি।
উল্লেখ্য, লখনউ জেলে থাকা স্বঘোষিত হিন্দু নেতা (অখিল ভারতীয় হিন্দু মহাসভা) কমলেশ তিওয়াড়ি মুসলিম সন্ত মহম্মদকে সমকামী বলে মন্তব্য করেন। তিওয়াড়ির এই মন্তব্যের প্রতিবাদে মালদহের কালিয়াচকে মুসলিম সম্প্রদায়েক প্রায় ১.৫ লক্ষ আন্দোলনকারী মিছিলে অংশ নেন।
মিছিলের সময় একটি বাস মাঝপথে চলে আসে। এরপরই আন্দোলনকারীরা ওই বাসটিতে আক্রমণ চালায়। যদিও যাত্রীরা অক্ষত ছিলেন। পরিস্থিতি সামাল দিতে পুলিশ ও বিএসএফ এলে আন্দোলনকারীরা তাদের উপরও হামলা চালায়। কালিয়াচক থানায় ভাঙচুর চালানো হয়। থানার বাইরে গাড়িতে আগুন জ্বালিয়ে দেয় বিক্ষোভকারীরা। পরে রাফ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
তৎক্ষণাৎই এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়। মঙ্গলবার এই ঘটনায় ১০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। কালিয়াচকে যেতে গেলে বিজেপি নেতা শমীক ভট্টাচার্যকে বাধা দেওয়া হয়। শমীক ভট্টাচার্য-সহ আরও ১২ জনকে আটক করা হয়।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের তরফে জানানো হয়েছে, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব রাজ্য সরকারকে এই সংক্রান্ত রিপোর্ট জমা দিতে হবে। এই রিপোর্টে হিংসার কারণ, রাজ্যের তরফে কি পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে এবং বর্তমান পরিস্থিতি কী সে সম্পর্কে বিস্তারিত বিবরণ দিতে হবে বলে জানানো হয়েছে।
মমতা বিরোধী রাজনৈতিক মহলের ব্যাখ্যা, সামনেই বিধানসভা নির্বাচন। পশ্চিমবঙ্গে প্রায় ৩০ শতাংশ ভোটার মুসলিম। ২০১১ সালে বামেদের সিংহাসনচ্যূত করতে এই মুসলিম ভোট ব্যাঙ্ক বড় সাহায্য করেছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। তাই ভোটব্যাঙ্ক নষ্ট করতে চাইছে না তৃণমূল। তাই এই ঘটনায় মুখে কুলুপ এঁটেছেন মুখ্যমন্ত্রী।
অন্যদিকে, রাজনৈতিক মহলের একাংশ মনে করছে ২০১৬ বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি নেহাতই 'দুধের শিশু'। তাদের না আছে সংগঠন, না আছে বিরোধিতার কোনও শক্তিশালী ইস্যু। আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে এই ধরণের সাম্প্রদায়িক ইস্যুকেই হাতিয়ার করে মাথা তুলে দাঁড়াতে চাইছে বিজেপি।