বিধানসভা ভোটে পরিযায়ী শ্রমিক সঙ্কট বড় হাতিয়ার হতে চলেছে শাসক-বিরোধী দুই শিবিরের কাছেই
বিধানসভা ভোটে পরিযায়ী শ্রমিক সঙ্কট বড় হাতিয়ার হতে চলেছে শাসক-বিরোধী দুই শিবিরের কাছেই
মাত্র কয়েকমাস আগেই নয়া নাগরিকত্ব আইন নিয়ে তোলপাড় হয়ে গিয়েছিল গোটা দেশ। যার আঁচ এসে পড়েছিল বাংলার গায়েও। কেন্দ্রের শাসক দল তথা বিজেপিকে কোণঠাসা করতে একযোগে মাঠে নেমেছিল বিরোধীরা। বিজেপির বিরুদ্ধে উঠেছিল এনআরসি-সিএএ-কে সামনে রেখে ঘৃণ্য সাম্প্রদায়িক রাজনীতি করার। কিন্তু করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব বর্তমানে প্রায় সমস্ত রাজনৈতিক সমীকরণকেই ওলটপালট করে দিয়েছে। জাতীয় তথা রাজ্য-রাজনীতিতেও এখন প্রধান ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে পরিযায়ী শ্রমিক সঙ্কট।
পরিযায়ী শ্রমিক সঙ্কট মোকাবিলাই এখন সবথেকে বড় চ্যালেঞ্জ
এদিকে আর ঠিক এক বছরের মাধায় রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন। এবার ২১শের ভোটকে পাখির চোখ করেই কোমর বেঁধে মাঠে নেমেছে বাম-ডান সব পক্ষই। কিন্তু কয়েকমাস আগেও যেখানে কাটমানি ইস্যুতে যেখানে পদ্ম কাঁটায় বিদ্ধ হয়েছিল রাজ্যের ঘাসফুল শিবির, সেখানে সিএএ বিরোধী আন্দোলন পাল্টা অক্সিজেন যুগিয়েছিল তৃনমূলকে। কিন্তু বর্তমানে করোনা প্রাদুর্ভাবের জেরে পরিযায়ী শ্রমিক সঙ্কট মোকাবিলা করাই রাজ্যে প্রধান চ্যালেঞ্জ হয়ে গেছে শাসক-বিরোধী দুই শিবিরের কাছেই।
শেষ উপনির্বাচনে নতুন করে ক্ষমতা প্রদর্শন তৃণমূলের
শেষ পঞ্চায়েত ভোটে গেরুয়া শিবির ভালো ফল করলেও গত বছর ২৮শে নভেম্বর পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় তিনটি উপ-নির্বাচনেই বড় ব্যবধানে জয়ী হয় তৃণমূল-কংগ্রেস। ১৯৯৮ সালে দল প্রতিষ্ঠার পর থেকে এটাই কোনও উপনির্বাচনে তৃণমূলের বড় জয় বলে মনে করা হত। এর মধ্যে দুটি এলাকায় প্রথমবারের জন্য নিজেদের ক্ষমতা প্রদর্শনে সমর্থ হয় মমতা শিবির। হাতে আসে কালিয়াগঞ্জ, খড়গপুর সদর ও করিমপুর। সেই সময় পালাবদলের খেলা চলতে থাকলেও মোদীর নাগরিকত্ব বিলকে ঢাল করে ঘৃণার রাজনীতির জন্য পদ্ম শিবিরের ভগ্নপ্রায় অবস্থা বলে তোপ দাগেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দোপাধ্যায়।
২০১৯শের শেষভাগে নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে গর্জে ওঠে দেশের সংখ্যালঘুরা
যদিও এর একমাসের মধ্যেই রাজ্য সভায় ১২৫-১০৫ ভোটে পাশ হয়ে যায় নাগরিকত্ব বিল। তৈরি হয় নয়া নাগরিকত্ব আইন। যেখানে ভিনদেশী সংখ্যালঘু শরণার্থীদের ভারতীয় নাগরিকত্ব দেওয়ার কথা উঠলেও বাদ পড়ে মুসলিমরা। সারা দেশ ব্যাপী বিরোধীদের পাশাপাশি ৩১ শতাংশ মুসলিম ভোটারও গেরুয়া শিবিরের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে গর্জে ওঠে। যদিও বঙ্গ বিজেপি তৃণমূলের বিরুদ্ধে সংখ্যালঘু তোষণের অভিযোগ করে। এরপর আরও কত জল গড়িয়েছে গঙ্গা দিয়ে। রাজ্যে-রাজনীতির মানচিত্রেও হয়েছে নতুন উত্থান-পতনের সাক্ষী থেকেছে সাধারণ মানুষ।
শ্রমিক স্পেশাল ট্রেন নিয়েও চলে দোষারোপের পালা
এখন বর্তমানে রাজ্য-রাজনীতির তরজার মূল সুরই বাধা পড়েছে পরিযায়ী শ্রমিক সঙ্কটের উপরে। লকডাউনে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে আটকে ছিলেন লক্ষ লক্ষ পরিযায়ী শ্রমিকের দল। তার মধ্যে বিহার, পশ্চিমবঙ্গ ও মধ্যপ্রদেশ, উত্তরপ্রদেশের পরিযায়ী শ্রমিকের সংখ্যাই সর্বাধিক। এরমধ্যেই ভিন রাজ্যে আটকে থাকা পরিযায়ী শ্রমিকদের রাজ্যে প্রবেশের ক্ষেত্রে মমতার বিরুদ্ধে বাধা দেওয়ার অভিযোগ করেছে বিজেপি। এমনকি পর্যাপ্ত শ্রমিক স্পেশাল ট্রেন চালানো হলেও বাংলা কোনও দাবি করে বলে জানান স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহ।
প্রত্যেক পরিযায়ী শ্রমিককে ১০ হাজার টাকা করে দেওয়ার দাবি
যদিও সমস্ত অভিযোগ খারিজ করে তৃনমূলের তরফে জানানো হয়েছে এখনও অবধি রাজ্যে ফিরেছেন প্রায় সাড়ে আট লক্ষ পরিযায়ী শ্রমিক। এবং আগামী ১০ই জুনের মধ্যে মোট সাড়ে দশ লক্ষ পরিযায়ী শ্রমিক নিজ ঘরে ফিরবে বলে দাবি করেছে তৃনমূল। পাশাপাশি তাদের যাতায়াতের সমস্ত খরচও তৃণমূলের তরফে বহন করা হচ্ছে বলে দাবি করা হয়। অন্যদিকে পরিযায়ী শ্রমিকদের জীবনধারণের জন্য কেন্দ্র পর্যাপ্ত রেশন, অর্থ কিছু দিচ্ছে না বলে পাল্টা অভিযোগ করে তৃণমূল। বর্তমানে প্রত্যেক পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য এককালীন ১০ হাজার টাকা করে দেওয়ার জন্য কেন্দ্রের কাছে আবেদনও জানান মমতা। সব মিলিয়ে একুশের বিধানসভা ভোটের আগে পরিযায়ী শ্রমিক সঙ্কটকেই পাখির চোখ করে এগোতে চাইছে ঘাসফুল-পদ্ম দুই শিবিরই।
২৪ ঘণ্টায় রাজ্যে সংক্রামিত ৩৬৮ জন, একদিনে চার জেলায় সংক্রামিত ২০০