হাতিকে স্যালুট! ডুয়ার্সের জঙ্গলে খুনে দাঁতাল পিষে দিল নিরাপত্তাকর্মীকে, দেখুন ভিডিও
সাহসী হওয়া ভালো। কিন্তু, বন্য জন্তুর সামনে সেই সাহসের বরাই করতে যাওয়া যে মৃত্যু নিয়ে খেলা এটা কবে বুঝবে মানুষ। কারণ, এমন দায়িত্ব-জ্ঞানহীন সাহসীকতা দেখাতে গিয়ে বেঘোরে হাতির পা পিষ্ট হলেন এক ব্যক্তি।
বন্য জন্তুর সামনে বীরত্ব দেখাতে গিয়ে ফের মৃত্যুর ঘটনা। কয়েক বছর আগে দিল্লিতে বাঘের খাঁচায় ঢুকে পড়ে প্রাণ খোয়ান এক মানসিক ভারসাম্যহীন। গুয়াহাটির চিড়িয়াখানায় বাঘের খাঁচার হাত ঢুকিয়ে হাত খুঁইয়ে ছিলেন এক সরকারি কর্মী। এমনকী খোদ এই কলকাতাতেই আলিপুর চিড়িয়াখানায় দু'দশক আগে বাঘকে মালা পরাতে গিয়ে প্রাণ হারান এক ব্যক্তি। বন্য জন্তুর সামনে বীরত্ব দেখাতে যাওয়ার এমন ঘটনার শেষ নেই। এই তালিকায় এবার সংযোজিত হল লাটাগুড়ির নাম।
বৃহস্পতিবার বিকেলে লাটাগুড়ির কাছে গরুমারার জঙ্গলে ৩১ নম্বর জাতীয় সড়কে বেরিয়ে আসে একটি দাঁতাল। রাস্তার উপর দাঁড়িয়ে থাকা দাঁতালের জন্য জাতীয় সড়ক অবরুদ্ধ হয়ে যায়। কোনও ভাবেই দাঁতালটি সরে যাওয়ার নাম-গন্ধ নিচ্ছিল না। গাড়ির হর্ন বাজাতে থাকলে অবশেষে দাঁতালটি বিশাল চেহারাটা টানতে শুরু করে। আর সেই সময়ই দাঁতালটিকে চিৎকার করে সামরিক কায়দায় স্যালুট ঠোকেন সিদ্দিকুল্লা রহমান নামে বছর বিয়াল্লিশের এক ব্যক্তি। চিৎকার শুনে দাঁতালটি ঘুরে সিদিকুল্লার দিকে এগিয়েও যায়। একটি সমবায় ব্যাঙ্কের নিরাপত্তাকর্মী সিদ্দিকুল্লা তবুও দাঁতালকে দেখে রাস্তার ধার থেকে সরে যাওয়ার চেষ্টা করেননি।
এরপরই দাঁতালটি সিদ্দিকুল্লাকে শুঁড়ে পেঁচিয়ে পিচ রাস্তার উপরেই আঁছড়ে ফেলে পা দিয়ে পিষে দেয়। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় সিদ্দিকুল্লার। তাঁর কাছে বন্দুক ছিল। কিন্তু দাঁতালটিকে এগিয়ে আসচতে দেখে তবুও গুলি চালাননি সিদ্দিকুল্লা রহমান। তখনও তিনি স্য়ালুট ঠুকে দাঁড়িয়েছিলেন।
জানা গিয়েছে, দাঁতালের জন্য রাস্তায় যে গাড়িগুলি আটকে ছিল তারই একটাতে ছিলেন সিদ্দিকুল্লা। জলপাইগুড়ি সমবায় ব্যাঙ্কের টাকা আনা-নেওয়ার গাড়িতে তিনি ছিলেন। সহকর্মীদের শত বাধাতেও গাড়ি থেকে নেমে পড়েছিলেন সিদ্দিকুল্লা। অতি উৎসাহে সোজা হাজির হয়েছিলেন হাতির সামনে। সিদ্দিকুল্লার বাড়ি রাজগঞ্জ থানার কুকুরজান এলাকায়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, সিদ্দিকুল্লাকে খুন করেই ক্ষান্ত হয়নি দাঁতালটি। এরপর তাঁর দেহ টানতে টানতে পিচ রাস্তার মাঝখানে এনে ফেলে দিয়ে জঙ্গলে ঢুকে পড়ে সে। মর্মান্তিক এই ঘটনায় দুঃখপ্রকাশ করেছেন জলপাইগুড়ি কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাঙ্কের চেয়ারম্যান তথা তৃণমূল নেতা সৌরভ চক্রবর্তী। তিনি ঘটনাটিকে দুঃখজনক বলে মন্তব্য করেন। মালবাজার মহকুমার পুলিশ আধিকারিক দেবাশিস চক্রবর্তী জানিয়েছেন, ঘটনার তদন্ত চলছে। প্রত্যক্ষদর্শীদের কারোর দাবি সিদ্দিকুল্লা নেশাগ্রস্ত ছিলেন। যদিও, পুলিশ জানিয়েছে, মৃতদেহের ময়নাতদন্তের পরই এই নিয়ে কিছু বলা সম্ভব হবে। দাঁতাল হাতিকে স্যালুট ঠুকতে গিয়ে মৃত্যুর ঘটনা রাজ্যে এই প্রথম বলেও বন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে।