নরেন্দ্র মোদীকে অভিনন্দন নয়, যুদ্ধের পথই খোলা রাখলেন 'দিদি'
গত ৫ ফেব্রুয়ারি ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ডে জনসভা করেছিলেন নরেন্দ্র মোদী। সেখানে মমতার প্রতি তাঁর সুর অনেক নরম ছিল। কিন্তু তিনি নরেন্দ্র মোদীর উদ্দেশে তখন থেকেই চাঁছাছোলা ভাষা ব্যবহার করতে শুরু করেন। এর পর নরেন্দ্র মোদী যতবার পশ্চিমবঙ্গে নির্বাচনী জনসভা করতে গিয়েছেন, ততবার তৃণমূল কংগ্রেস তথা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আক্রমণ শানিয়েছেন। পাল্টা তৃণমূল কংগ্রেসও আক্রমণের ধার বাড়িয়েছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে শুরু করে মুকুল রায়, ডেরেক ও'ব্রায়েন নরেন্দ্র মোদীকে 'গুজরাতের কসাই', 'কে তুমি হরিদাস', 'তোমায় কোমরে দড়ি পরিয়ে ঘোরাবো' ইত্যাদি ভাষায় সম্বোধন করেছে। মনে হয়েছিল, ভোট মিটে গেলেও হয়তো সন্ধি হয়ে যাবে। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, সেটা আর সম্ভব নয়।
আসলে পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেসের বিপুল সাফল্যের পিছনে কাজ করেছে সংখ্যালঘু ভোটব্যাঙ্ক। এখন তারা যদি নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে সন্ধি করে, তা হলে সেই ভোটব্যাঙ্কে চিড় ধরবে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাই ২০১৬ সালের বিধানসভা ভোটের কথা মাথায় রেখে সংখ্যালঘু ভোটব্যাঙ্ক ধরে রাখতে চাইছেন। তাই তিনি ন্য়ূনতম সৌজন্যটুকুও দেখাতে চাইছেন না, পাছে সংখ্যালঘুদের কাছে ভুল বার্তা যায়। ওয়াকিবহাল মহলের মতে, জয়ললিতা কিংবা নবীন পট্টনায়কের কাছে নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে সন্ধি করার সোজা। কারণ এই দুই রাজ্যে বাংলার মতো এত বিপলু পরিমাণ সংখ্যালঘু মানুষ বসবাস করেন না। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের সব জেলাতেই উল্লেখযোগ্য পরিমাণ সংখ্যালঘু ভোট রয়েছে।
অতীতের একটি অভিজ্ঞতাও ভাবাচ্ছে তৃণমূল কংগ্রেস সুপ্রিমোকে। সেটা হল, ২০০২ সালে গুজরাতে দাঙ্গার পর নরেন্দ্র মোদী যখন ফের ভোটে জিতে মুখ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন, তখন তাঁকে ফুল পাঠিয়ে শুভেচ্ছা জানিয়েছিলেন তিনি। এই বিষয়টি উল্লেখ করে সিপিএম জোর প্রচার চালিয়েছিল। তার জেরে ২০০৪ সালের লোকসভা ভোটে চমকপ্রদ ফল করে সিপিএম আর তৃণমূল কংগ্রেসের ভরাডুবি হয়। পুরো সংখ্যালঘু ভোট সরে যাওয়াতে বিপর্যয় হয়েছিল তৃণমূল কংগ্রেসের। তার আর পুনরাবৃত্তি চাইছেন না মমতা বন্দ্য়োপাধ্যায়।
প্রশ্ন উঠেছে, তা হলে লাগাতার সংঘাত চালিয়ে রাজ্যে কি সুষ্ঠুভাবে সরকার চালানো সম্ভব হবে? কারণ পশ্চিমবঙ্গ সরকারের এখন দেউলিয়া দশা। কেন্দ্রের টাকা না পেলে রাজ্য সরকারের গণেশ ওল্টানো নিশ্চিত। এই পরিপ্রেক্ষিতে নবীন পট্টনায়কের বিজেডি ও জয়ললিতার এআইএডিএমকে-কে পাশে পেতে চাইছে তৃণমূল কংগ্রেস। লক্ষ্য, এক সঙ্গে জোট তৈরি করে পাল্টা চাপ বাড়ানো। কিন্তু বাস্তব বিবেচনা করে এঁরা আদৌ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডাকে সাড়া দেবেন কি না, সেটাই এখন প্রশ্ন।