মধ্যগগনে ভোট, বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে একাকী ধরনায় মমতা, প্রতীকী ছবি যেন ফুটিয়ে তুলল আসল চিত্র
মধ্যগগনে ভোট, বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে একাকী ধর্নায় মমতা, প্রতীকী ছবি যেন ফুটিয়ে তুলল আসল চিত্র
বেলা তখন প্রায় ১২ টা। গান্ধীমূর্তির পাদদেশে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সামনে রয়েছে শুধু একটি টেবিল। পাশে রয়েছে কিছু সরঞ্জাম। হুইলচেয়ারে বসে থাকা আহত দিদির আশেপাশে রয়েছে বলতে দুটি পর পর স্ট্যান্ড ফ্যান। আশপাশে বা পিছনেও দেখা যায়নি কোনও তৃণমূল নেতাকে। ১৩ এপ্রিল কমিশনের বিরুদ্ধে মমতার এই একাকী প্রতিবাদের ছবিটা যেন ২০২১ বাংলার ভোট চিত্রের প্রতীকী ছবি হিসাবে কোথাও উঠে আসতে শুরু করল।
১৩ এপ্রিল বেলার ছবি
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে নির্বাচন কমিশন ২৪ ঘণ্টার জন্য প্রচারে নিষেধাজ্ঞার নির্দেশ দেওয়ার পর , য়দিদি সিদ্ধান্ত নেন যে তিনি এর প্রতিবাদে গান্ধী মূর্তির পাদদেশে ধরনায় বসবেন। তবে ধরনার অনুমতি চেয়ে সেনার ইস্টার্ন কমান্ডের কাছে এদিন সকাল ৯:৪০ মিনিটে মমতা শিবির অনুমতি চাইলেও, বেলা ১২ টার কিছু পর পর্যন্ত সেই অনুমতি পত্র নিয়ে সেনার তরফে উত্তর আসেনি। এদিকে তারই মাঝে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বসেন ধরনায়। তবে সপারিষদ নন, তৃণমূল সুপ্রিমোর এদিন একাকী ধরনায় বসার ছবি নিয়ে বহু মহলে বহু তত্ত্ব উঠতে শুরু করে।
ভোট-সূর্য মধ্যগগনে এবং চৈত্রের দুপুরে একাকী মমতা
পেরিয়ে এসেছেন ৪ দফা ভোট। তারমধ্যে নিজেও দ্বিতীয় দফায় ছিলেন প্রার্থী। এহেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সামনে এখনও বাকি চার দফা ভোট। তার মাঝে কমিশন ২৪ ঘণ্টার জন্য মমতার ভোট প্রচারে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। এই জায়গা থেকে দিদির লড়াইটাকি খানিকটা একাঙ্ক নাটকের মতো হয়ে গেল? প্রশ্ন উঠছে বহু মহলে। এদিন মমতা যখন একা গান্ধীমূর্তির পাদদেশে বসে ছবি এঁকেছেন, বা গায়ে কালো কাপড় দিয়ে প্রতিবাদে সামিল হয়েছেন, তাঁর কাছে পিঠে কোনও তৃণমূলের নেতামন্ত্রীকে দেখা যায়নি। যদিও ধরনার অনুমতি সেনার তরফে তখনও পায়নি তৃণমূল ক্যাম্প। তবুও কোথাও চৈত্রের এক দুপুরে মমতার একাকী অবস্থান বাংলার রাজনীতিতে তাঁর 'একা' হয়ে যাওয়ার বার্তাই কি দিচ্ছে? সমালোচকদের এই প্রশ্নে আরও কিছু সূত্রের দাবি, এটিও মমতার ভোট প্রচারের অঙ্গ হতে পারে। যা নির্বাক থেকেই মমতাকে আলাদা করে প্রচারের লাইমলাইট এনে দিচ্ছে। তবে আলোচনার বহু দিক এখনও উন্মুক্ত থেকে যাচ্ছে এদিনের ছবি ঘিরে।
একাকী ধরনা কি কোনও প্রতীকী ছবির বার্তা দিচ্ছে?
তৃণমূলকে 'কোম্পানি ' আখ্যা দিয়ে নেতৃত্বের একছত্র মনোনভাবকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে শুভেন্দু, রাজীবের মতো বহু পুরনো সেনাপতি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশ থেকে সরে গিয়েছেন। বহু পুরনো আস্থাভাজন ২০২১ নির্বাচনের আগে তাঁর পাশ ছেড়ে বেরিয়ে গিয়েছেন। বহু সমালোচকদের মতে দলে যাঁরা রয়েছেন তাঁরা চোখে চোখ রেখে লড়াইয়ে মমতাকে সেভাবে সঙ্গত দেওয়ার চেষ্টা করলেও তা সব ক্ষেত্রে সফল নয়। বহু সভা সমিতিতে মমতা নিজেই জানিয়েছেন ২৯৪ আসনে তিনিই প্রার্থী। অর্থাৎ বিজেপির বিরুদ্ধে যে তিনি একাই তাবড় লড়াই দিচ্ছেন , তা বারবার বহু জনসভায় জানিয়েছেন নেত্রী। এই জায়গা থেকে আজ সকালে গান্ধী মূর্তির পাদদেশে মমতার একাকী বসে ধরনার ছবিটা যেন কোথাও গিয়ে প্রতীকী হয়ে গিয়েছে! ধরনার স্থল রয়েছে, কিন্তু তাতে মমতার আশপাশে নেই কেউ। একাই সেখানে তৃণমূলের সুপ্রিমো।
মমতা ও এক ব্যাতিক্রমী ধরনা!
সিঙ্গুর থেকে নন্দীগ্রাম ইস্যু বা তার আগে পরে বাংলার বুকে মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়ের নেতৃত্বে যে সমস্ত ধর্না আন্দোলন দেখা গিয়েছে , তাতে মঞ্চে মমতাকে একা কখনোই দেখা যায়নি। সেই জায়গা থেকে ২০২১ সালের ১৩ এপ্রিল বাংলার মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল সুপ্রিমোর একাকী ধর্নী মঞ্চে অবস্থান খানিকটা ব্যতিগ্রমী। মুখে কালো কাপড়, হাতে আঁকার সরঞ্জাম নিয়ে ছবি এঁকে ধরনা মঞ্চে নিশ্চুপভাবে ঘাসফুল শিবির নেত্রীকে হালফিলের বাংলা শেষ কবে দেখেছে, তা নিয়ে বিতর্ক থাকতে পারে। তবে ১৩ এপ্রিল মমতার অবস্থান নিঃসন্দেহে বাংলার বুকে বহু আলোচনা, জল্পনা চড়িয়েছে।
হাতে ২ ঘণ্টাকে কাজে লাগাতে চান নেত্রী!
জানা গিয়েছে মমতা বন্দ্যোাপাধ্যায়ের এই প্রতিবাদ সভা সন্ধ্যে পর্যন্ত গড়াতে পারে। গতকাল রাত ৮ টা থেকে জারি হওয়া নিষেধাজ্ঞা আজ রাত ৮ টা পর্যন্ত চলবে। তবে তারপরই উঠে যাবে নিষেধাজ্ঞা। জানা গিয়েছে, এরপর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পর পর ২ টি সভা করবেন। রাত ৯ টাতেও চলবে জনসভা। তারপর কমিশনের নির্দেশ অনুযায়ী, রাত ১০ টা থেকে সমস্ত পার্টির প্রচার বন্ধ। তবে রাত ৮ টার পর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বরানগর ও বিধাননগরে ভোটের প্রচারে সভা করবেন বলে খবর।
মেলেনি সেনাবাহিনীর অনুমতি, ঘোষিত নির্দিষ্ট সময়ের আগেই ধরনায় মমতা